নির্বাচন ঘিরে সরগরম ডিএসইর মেম্বারস ক্লাব

নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোর্ট : একটি পক্ষ ভোটের পরিবর্তে সমঝোতা এবং আরেকটি পক্ষ তার বিপক্ষে। তারা সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন চান না। এ রকম ডামাডোলের মধ্যে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ডিএসইর নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হবে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী প্রথম পরিচালনা পর্ষদ।

ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথককরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) পরবর্তী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন পর্ষদের পরিচালক নির্বাচন ঘিরে সদস্যদের মধ্যে রয়েছে বেশ উৎকন্ঠা। ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে সদস্যদের মধ্যে দুটি মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচনের পক্ষেই সম্মতি রয়েছে অধিকাংশ সদস্যের। তাই নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে ডিএসইর মেম্বারস ক্লাব।

ডিএসইর এনেক্স ভবনের সপ্তম তলায় অবস্থিত ডিএসইর মেম্বারস ক্লাব। সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার এ পাঁচ দিন দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের জন্য ক্লাবে আসেন ডিএসইর সদস্যরা। এ ছাড়া বিকেল পর্যন্ত সদস্যরা আড্ডা দেন ওই ক্লাবে। তবে নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে সদস্যদের আনাগোনা বেড়েছে মেম্বারস ক্লাবে। ওখানে বসেই চলছে নির্বাচনের আলাপ-আলোচনা ও পরিকল্পনা। তবে ডিএসইর অধিকাংশ সদস্য মনে করছেন, এবার পরিচালক পদে তাদেরই আসা উচিত যারা নিজেদের চিন্তা না করে শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কাজ করবেন।

ডিএসইর বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের পরিচালক নির্বাচনে আনুমানিক ১১ জন সদস্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছেন- ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী, সাবেক সভাপতি আবদুল হক, বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, পরিচালক খাঁজা গোলাম রসূল, বর্তমান পরিচালক শরিফ আনোয়ার হোসেন (দিলিপ), মিনহাজ মান্নান ইমন, খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন, জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। তবে শোনা যাচ্ছে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. মনজুরুল রহমান এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি অর্থাৎ সদস্যদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিন থেকেই মুখরিত হয়ে উঠেছে মেম্বারস ক্লাব। ওই দিন ক্লাবে উপস্থিত বিভিন্ন সদস্যদের কাছে ভোটের পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রস্তাব দেন ডিএসইর দুজন সদস্য।

এ বিষয়ে ডিএসইর বর্তমান সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এবারের পরিচালক নির্বাচন ডেমোক্রেটিভ হবে। সদস্যদের ভোটেই চারজন পরিচালক নির্বাচন করা হবে। কোনোভাবেই সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন করা হবে না। সভাপতির এ কথার সঙ্গে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য একমত পোষণ করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ডিএসইর এবারের পরিচালক নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনেক সদস্য আমাকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বলেছেন। তাদের আমি বলেছি, ‘একটু ভেবে দেখি। যেহেতু আগামী ২২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন, সেহেতু দুই-তিন দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আসলে নির্ভর করছে ডিএসইর সকল সদস্যদের ওপর। তারা চাইলে আমি অংশগ্রহণ করব।’

সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের নির্বাচন একটু ভিন্ন ধরণের। সদস্যদের সম্মতি ছাড়া এ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন। পর্ষদে পরিচালক হিসেবে সদস্যরা যদি আমাকে চান তাহলে বিবেচনা করব।’

এদিকে কাজী ফিরোজ রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে সম্ভাবনা রয়েছে।’

পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে আমি দাঁড়াব কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা, জানতে চাইলে সাবেক পরিচালক খাঁজা গোলাম রসূল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আজ নয়, সোমবার বলতে পারব। এ বিষয়ে এখনও ডিএসইর সদস্যদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়নি।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা, জানতে চাইলে পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে, দেখা যাক কী হয়।’

পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এখনও সময় আছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী পরিচালক নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছে ডিএসই নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ লক্ষ্যে গত ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩০ জানুয়ারি। আর নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ দাখিলের শেষ সময় ১৯ জানুয়ারি। অভিযোগের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ২০ জানুয়ারি। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ডিএসই পর্ষদ হবে ১৩ সদস্যের। এর মাধ্যমে চারজন থাকবেন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক, একজন স্ট্রাটেজিক ইনভেস্টর ডিরেক্টর এবং একজন স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন। তবে স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টর ডিরেক্টর (কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক) ছাড়াই ডিএসইর নতুন পর্ষদ গঠন করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডব্লিউএন/শাহ/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)