thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ধনীদের জন্য অক্সফাম এর সতর্কবার্তা

২০১৪ জানুয়ারি ২২ ০০:০৯:০০

গণতন্ত্রকে খাটো করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে আইনকে ব্যবহার করছে বিশ্বের অভিজাত শ্রেণী। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বৈষম্যও সৃষ্টি করছেন তারা। ব্রিটেনভিত্তিক দাতা সংস্থা অক্সফাম এ খবর জানিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্বের শক্তিধর ব্যক্তিদের বার্ষিক বৈঠকে এ কথা জানায় অক্সফাম।

বিশ্বের ৮৫ জন ধনী ব্যক্তি বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সমান সম্পদের মালিক বলে অক্সফাম ধনী-গরিবের বৈষম্য নিয়ে নতুন এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্য ধনীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খাটো করতে সহায়তা করছে। তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করছে। এর দায়ভার গ্রহণ করতে হচ্ছে সবাইকে।

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈষম্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তার দ্বিতীয় মেয়াদে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

চীনের নতুন সরকারও অভিজাত শ্রেণীকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে। জার্মানরাও বৈষম্য কমাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।

দাভোস আলোচনার আয়োজনকারী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, ধনী-গরিবের মধ্যে ক্রমবর্ধবান বিপুল বৈষম্য ২০১৪ সালে বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী সাতশ ’ কোটি মানুষের এই বিশ্বের অর্ধেক সম্পদের মালিক মাত্র ৮৫ জন। বাদ-বাকি ধনীদের হিসাবের আওতায় আনলে দেখা যাবে মাত্র কয়েক হাজার মানুষের হাতেই চলে গেছে বিশ্বের তাবৎ সম্পদের মালিকানা। যৎসামান্য মালিকানা রয়েছে বাকিদের। তাও আবার নানাভাবে ঐ বড়লোক শ্রেণীর হাতেই জিম্মি হয়ে রয়েছে। অবস্থা এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর তাবৎ সম্পদের মালিকানা গুটিকয়েক মানুষের হাতে যেতে আর খুব বেশি দিন লাগবে না।

অক্সফাম এর এই রিপোর্টে নতুন যে বিষয়টি এসেছে তা হলো, ধনীরাই এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে। তার মানে এই নয় যে, ধনীরা তাতে ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করার এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেবে। বরং বলা যায়, সমস্ত সম্পদের মালিকানা কুক্ষিগত করার কারণে তাদের মালিকানার জন্য যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তাকে সামাল দিতেই তারা ধনী-গরিবের এই ফারাককে একটি সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের প্রতিভূ রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশ তাই কিছু ব্যবস্থাও ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। সম্ভবতঃ আরও কিছু দেশ এই ধরনের ব্যবস্থা আগামীতে নেবে। এর উদ্দেশ্য ধনীর হাত থেকে সম্পত্তির মালিকানা গরিবের হাতে বিলি-বণ্টন করে দেওয়া নয়, ধনীর শোষণকে গরিবের কাছে সহনীয় পর্যায়ে রাখা।

কমিউনিস্ট বিশ্বের পতনের পর পুঁজিবাদী বিশ্ব আজ বাধাহীন ভাবে পুঁজিবাদের পক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। যার ফলে পুরো পৃথিবীটা আজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় পুঁজিবাদী ধনী রাষ্ট্রগুলো যে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে তা দিয়ে সঙ্কটের সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং একটি বড় ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকেই মানবসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অক্সফামের এই বার্তা গরিবের জন্য কোনো সুখবর নয়, ধনীদের জন্য সতর্কবাণী মাত্র!

পাঠকের মতামত:

SMS Alert