thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু

২০১৪ জানুয়ারি ২৩ ০০:০৫:৩৯
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশ ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেতাজী নামে পরিচিত।

সুভাষচন্দ্র বসু কটক প্রবাসী বাঙালি আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে নবম। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত তিনি স্টিওয়ার্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৮ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েও নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন।

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে তিনি স্বরাজ পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু যখন কলকাতা পৌর মেয়র নির্বাচিত হনতখন সুভাষচন্দ্র তার অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ সালে অন্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাকেও বন্দি করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়।

সুভাষচন্দ্র ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে পরপর দুবার কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। কংগ্রেস কমিটি ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করলে সুভাষচন্দ্রই প্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। গান্ধীর অহিংস নীতির বদলে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন। তাই তিনি ভারতের জন্য একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কংগ্রেসের মধ্যেই অনুগামীদের নিয়ে ১৯৩৯ সালের ৩ মে ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’দল গঠন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জনপ্রিয়তার কারণে ব্রিটিশ সরকার ভারত রক্ষা আইনে ১৯৪০ সালে তাকে গ্রেফতার করে প্রথমে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেকারারুদ্ধ ও পরে অসুস্থতার কারণে কলকাতার এলগিন রোডে নিজের বাসভবনে তাকে নজরবন্দি রাখে। ১৯৪১ সালে ১৯ জানুয়ারি পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে প্রথমে মথুরাতে যান। সেখান থেকে কাবুল হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন,জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সাহায্য লাভ।

১৯৪৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুরে ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনীর দায়িত্ব লাভ করেন। এটি মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে। একটি আলাদা নারী বাহিনীসহ এতে প্রায় ৮৫ হাজার সৈন্য ছিল। বাহিনীর কর্তৃত্ব ছিল প্রাদেশিক সরকারের হাতে। যার নাম ‘মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার’(আরজি হুকুমাত-ই-আজাদ হিন্দ)। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা,আদালত ও আইন ছিল। স্বাধীন ভারত গঠনে এই সরকারের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য তিনি ভারতবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানান। সিঙ্গাপুর ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে জাপান,ইতালি,জার্মানি,ব্রহ্মদেশ এবং থাইল্যান্ড জাতীয় সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। এ বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দী এবং ব্রিটিশ, মালয়,সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর।

বর্মার প্রধানমন্ত্রী বা-মৌ এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজোর কাছ থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস পান। আজাদ হিন্দ বাহিনী কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ভারতীয় সীমান্তের দিকে রওনা হয় ও নেতাজীর বাহিনী বর্মার মউডক বন্দরে বোমাবর্ষণ করে ব্রিটিশ বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। ১৯৪৩ সালের ৬ নভেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো নেতাজীর হাতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অর্পণ করেন। ১৯৪৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি দ্বীপপুঞ্জ দুটির নামকরণ করেন যথাক্রমে ‘শহীদ দ্বীপ’ও ‘স্বরাজ দ্বীপ। এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ১৯৪৪ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে ‘প্রধান সামরিক ঘাঁটি’গড়ে তোলেন। বাহিনীর একটি দল ১৯৪৪ সালের ১৯ মার্চ কোহিমায় স্বাধীন ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে। অন্য একটি বাহিনী মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের অদূরে মৈরাংয়ে জাতীয় পতাকা তোলে। এভাবে পূর্ব ভারতের ১৫০ মাইল এলাকা আজাদ হিন্দ ফৌজের দখলে আসে।

হঠাৎ বিশ্বযুদ্ধের গতি পরিবর্তন এবং মিত্র বাহিনীর হাতে জাপানের পরাজয়ের ফলে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে বিপর্যয় নামে। জাপান সরকার সাহায্য বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে বাহিনীকে অস্ত্র সংবরণের আদেশ দিয়ে ১৯৪৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টোকিওর উদ্দেশে রওনা দেন। পথে বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু সংবাদ প্রচার হলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর পরাজয় সম্পূর্ণ হয়।

প্রায় ২০ বছরের মধ্যে তিনি ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও তাকে ১৯৩০ সালে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়।

১৯৩৪ সালে এমিলি সেচঙ্কলের সঙ্গে পরিচিত হন ভিয়েনায়। ১৯৩৭ সালে তারা ব্যাড গ্যাস্টিনে বিয়ে করেন।

একটি মতে, নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দি অবস্থায় সাইবেরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্য একটি মতে, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তবে বিপক্ষ মতও রয়েছে। তার অন্তর্ধানের কাহিনী নিয়ে অনেক বই রচিত হয়েছে। তাকে নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এনআই/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর