thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোটিপতি স্বজনরা আতঙ্কে!

২০১৪ জানুয়ারি ২৩ ১৯:৩৪:৩৫
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোটিপতি স্বজনরা আতঙ্কে!

মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, সাতক্ষীরা : সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং তার পরিবারের কোটিপতি বনে যাওয়া সদস্য, সুবিধাভোগীরা দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) আতঙ্কে ভুগছেন। গত ৫ বছরে সাবেক মন্ত্রী এবং তার পরিবারের একাধিক সদস্য, বোন, ভগ্নিপতি, এপিএসের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।

২০০৮ ও ২০১৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের স্ত্রী ইলা হকের সম্পদ ২০০৮ সাল থেকে এবার ৭৮২ শতাংশ বেড়েছে। সাবেক এই মন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১১০ শতাংশ। ২০০৮ সালে সম্পদের মূল্য ছিল তিন কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার ৬৮৪ টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে সাত কোটি ৭৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৮৫ টাকা হয়েছে। এ তথ্য ডা. রুহুল হক নিজেই তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

গেল সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপির সম্পদের খোঁজে দুদক কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে প্রধান তালিকায় রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা- ৩ (দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের চারটি ইউনিয়ন) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ডা. আ ফ ম রুহুল হক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

গত ৫ বছর তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এলাকায় প্রচার আছে, মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি নিজে এবং স্ত্রী, বোন, ভগ্নিপতি, এপিএসসহ নিকটজনেরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় এবার মন্ত্রীত্ব পাননি তিনি।

২০০৮ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এই মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে তার স্ত্রী ইলা হক, ভগ্নিপতি নাজমুল আরেফিন মিল্টু, এপিএস মোসায়েদ আলী খোকন, তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পিএস আবু মাসুদসহ কয়েকজন কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৫ বছরে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন অবকাঠামগত উন্নয়ন কাজের জন্য ২০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। ইতোমধ্যে ১১৫ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৮৮ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, এ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম, আসবাবপত্র কেনার জন্য আরও প্রায় একশ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একমাত্র ভগ্নিপতি সাতক্ষীরা শহরের দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা নাজমুল আরেফিন মিল্টু স্বনামে-বেনামে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে হাসপাতালের সরঞ্জাম ক্রয়সহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। চলমান কাজ এখনও তিনিই দেখভাল করছেন। নামমাত্র কাজ করে এ সব খাত থেকে নাজমুল আরেফিন মিল্টু কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

মন্ত্রীর ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি। যিনি কথা বলার চেষ্টা করেছেন তাকেই শাস্তিমূলক বদলি হতে হয়েছে। ৫ বছর আগেও তিনি সাতক্ষীরার মোজাফ্ফার গার্ডেনের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিগত ৫ বছরে সাতক্ষীরাসহ দেশব্যাপী স্বাস্থ্য বিভাগের যত চাকরি হয়েছে এর অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করেছেন ডা. আ ফ ম রুহুল হকের স্ত্রী ইলা হক, ভগ্নিপতি নাজমুল আরেফিন মিল্টু, পিএস আবু মাসুদ, এপিএস মোসায়েদ আলী খোকনসহ স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে পুলিশ, শিক্ষকসহ বিভিন্ন খাতে নিয়োগেও তাদের হস্তক্ষেপ ছিল লক্ষণীয়। এরপরও যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন। আর এ সব খাত থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে হাতিয়ার হিসেবে রেখে পরিবারের সদস্য ও নিকটজনেরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।

সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এস জেড আতকি ডা. রুহুল হকের আস্থাভাজন হিসেবে গত ৫ বছর ধরে একই সঙ্গে সিভিল সার্জন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের (পৃথক দুটি প্রকল্প) প্রজেক্ট ডিরেক্টরসহ জেলার পোঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।

সম্প্রতি হলফনামার তথ্য নিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠলে দুদক বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়।

দুদক তদন্তে নেমেছে এ খবর জানার পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার পরিবার এবং সুবিধাভোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা এখন অর্জিত সম্পদ বেনামে সরিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এ সব অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, ভগ্নিপতি নাজমুল আরেফিন মিল্টুর সেলফোনে একাধিকবার রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। দুদকের প্রথম তালিকায় সাবেক এই মন্ত্রীর নাম থাকায় সাতক্ষীরা জেলার জন্য একটি ‘অমর্যাদাকর’ বিষয় বলে মন্তব্য তার।

(দ্য রিপোর্ট/এমআরইউ/এমএআর/সা/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর