thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

বাজারে আসছে নব উদ্ভাবিত জিএম টমেটো

২০১৪ জানুয়ারি ২৫ ২২:৫১:২৫
বাজারে আসছে নব উদ্ভাবিত জিএম টমেটো

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : রক্তবর্ণের জেনেটিক্যালি মোডিফাইড বা জিএম টমেটো বাজারে আসতে আর মাত্র এক ধাপ বাকি। এ টমেটোতে রয়েছে ব্লু বেরির মতো ফলের স্বাস্থ্যকরী সব উপাদান।

জিএম টমেটোর বীজ উদ্ভাবন করেছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এর উৎপাদন চলছে কানাডায়। কানাডা ইতোমধ্যেই ১২০০ লিটার জুস উৎপাদন করে ব্রিটেনের নরউইচে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে। যে কোনো সময় তা জাহাজে তোলা হবে।

এ জুসের ঘন তরলে এনথোসায়ানিন নামে একটি এন্টি অক্সিডেন্ট বা জীবন্ত কোষের ক্ষয়রোধমূলক প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এ উপাদানটি ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই নতুন জিএম টমেটো সব খাবারেরই পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
ব্রিটেনের নরউইচের জন ইনেস গবেষণা সেন্টারের প্রফেসর বিজ্ঞানী ক্যাথি মার্টিন বলেন, ‘এই টমেটো থেকে ব্লু বেরি এবং ক্রেনবেরির মতো ফলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকরী উপাদান রয়েছে তা পাওয়া যাবে। আর এই টমেটো যে কোনো খাবারের সঙ্গেই প্রয়োগ করা যাবে। বিশেষকরে যে সব খাবার লোকে একটু বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে। যেমন, কেচাপ থেকে শুরু করে পিজা তৈরি।’

এ টমেটোতে রক্তবর্ণের যে তরল উপাদান রয়েছে তা মূলত স্ন্যাপ ড্রাগন নামক গাছ থেকে একটি জিন ট্রান্সফার করে উৎপাদন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে টমেটোগুলোতে এনথোসায়ানিন নামক এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপাদিত হয়।
ব্রিটেনে উদ্ভাবিত হলেও এই জিএম প্রযুক্তিটির আরও উন্নতির জন্য কানাডায় স্থানান্তর করা হয়। কারণ, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন জিএম প্রযুক্তির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।

কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত নিউ এনার্জি ফার্মস নামে একটি কোম্পানি ৫ হাজার বর্গফুটের গ্রিন হাউজে এই টমেটোর চাষ করছে। এ থেকে তারা ২ হাজার লিটার জুস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

প্রফেসর মার্টিন আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, ‘এ জিএম টমেটো খাদ্যশস্যের প্রতি মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা দূর করবে। কারণ এ টমেটোর জুস তাদেরকে এমন একটি খাদ্য উপহার দেবে যা একইসঙ্গে জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবিত কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য একদমই ক্ষতিকর নয়, বরং অনেক উপকারী হবে।’

এনথোসায়ানিন নামক এন্টি অক্সিডেন্টটি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সত্যিকার অর্থেই কোনো উপকারী ফল বয়ে আনতে সক্ষম কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এর আগে ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে, এনথোসায়ানিন প্রদাহনিরোধক ও ক্যান্সার উপশমে খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

তবে জিএম খাদ্যশস্য নিয়ে ইউরোপের জনমনে অনেক শঙ্কা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে সর্বপ্রথম ইউরোপে জিএম খাদ্য শস্য বাজারজাতকরণের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ২০১০ সালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ইউরোপের জনগণের দুই তৃতীয়াংশই জিএম খাদ্যশস্য বিরোধী।

তবে প্রফেসর মার্টিন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে মাত্র আগামী দুই বছরের মধ্যেই এই টমেটো বাজারজাতকরণের অনুমতি মিলবে। তিনি ও তার সহকর্মী অন্য গবেষকরাও আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন উদ্ভাবিত জিএম টমেটো খাদ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে জনমনে আরো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।

তবে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে ম্যাড কাউ রোগের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই জিএম খাদ্য নিয়ে জনমনে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়। যা এখনও দূর হয়নি।

নতুন উদ্ভাবিত এ জিএম টমেটোর উপকারী দিকের কথা শুনে মানুষের মনে জিএম খাদ্য সম্পর্কে হয়ত কিছুটা আশার আলো জেগে উঠতে পারে। কিন্তু তা শুধু গল্পের একটি দিক মাত্র।

জিএম প্রযুক্তি প্রয়োগ প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যাঘাত ঘটায়- এ বিষয়টা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই ভীষণ উদ্বিগ্ন।
তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, জিএম প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দূর করা সম্ভব। এ জন্য জিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উদ্ভূত ক্ষতিকর দিকগুলো দূর করার সক্ষমতা দেখাতে হবে এবং আরও নিরাপদ উপায়ে এ প্রযুক্তি প্রয়োগের পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। কিন্তু তা একদিনেই সম্ভব নয়। এর জন্য আরও অনেক সময় লাগবে। নতুন উদ্ভাবিত এই জিএম টমেটোই হয়তো সে পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম সোপান হিসেবে বিবেচিত হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর