thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

আনোয়ারার সঙ্গে কিছুক্ষণ

২০১৪ জানুয়ারি ৩০ ১৬:৪০:০৬
আনোয়ারার সঙ্গে কিছুক্ষণ

ইসহাক ফারুকী, দ্য রিপোর্ট : ক্যারিয়ারের অনেকগুলো বছর পার করে ফেলেছেন অভিনেত্রী আনোয়ারা। নৃত্যশিল্পী থেকে চরিত্রাভিনেত্রী হয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য একবার সেরা অভিনেত্রীসহ আটবার সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হল, গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯), সখিনার যুদ্ধ (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), মরণের পরে (১৯৯০), রাধাকৃষ্ণ (১৯৯২), বাংলার বধু (১৯৯৩), অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)। দ্য রিপোর্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় বললেন তার ফেলে আসা স্মৃতিকথা।

দ্য রিপোর্ট : অনেকগুলো বছর, তাই না?

আনোয়ারা : হুমম। (দীর্ঘশ্বাস) ১৪-১৫ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে আসি। বাবার (জামাল উদ্দিন) ইচ্ছে ছিল, আমি যেন অভিনেত্রী হই। অভিনেতা আজিম সাহেব আমাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছেন। আমি নৃত্যশিল্পী ছিলাম। আমার বাবার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল।

দ্য রিপোর্ট : প্রথম অভিনয়ের কথা মনে পড়ে?

আনোয়ারা : ফজলুল হক সাহেবের ‘আজান’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করি। মুক্তি দেওয়ার সময় চলচ্চিত্রের নাম পরিবর্তন করে ‘উত্তরণ’ রাখা হয়। কক্সবাজারে শুটিং হবে। যে সময় আমার দৃশ্যের শুটিং হবে, সে সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমাদের নাচের ওস্তাদ দেব কুমার এসে বললেন, ‘ওই মা, নাচবি না? উঠ।’ বলে নিজেই আমার পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে দিলেন। সেই স্মৃতি ভুলতে পারব না। তবে ‘উত্তরণ’ চলচ্চিত্রটি আগে মুক্তি পায়নি। আমার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘নাচঘর’। আবদুল জব্বার খান পরিচালক ছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভাবি, আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম।

দ্য রিপোর্ট : প্রয়াত অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আপনার পর্দার রসায়নটা খুব চমৎকার ছিল, তাই না?

আনোয়ারা : আমাদের নামে মিল ছিল বলে, অনেকেই ভাবত আমাদের মধ্যে কিছু একটা আছে। আসলে আনোয়ার চাচার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই চিনতেন? একবার আমার হাজবেন্ড (মহিতুল ইসলাম) আনোয়ার চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘চাচা, আপনাদের মধ্যে কী রোমান্স আছে?’ চাচা তার স্বভাবসুলভ অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ‘নারে’। আনোয়ার চাচা আমার সঙ্গে যতটা না অভিনয় করেছেন, তার চেয়ে বেশি করেছেন রোজির (রোজি সামাদ) সঙ্গে। আমিও এক সময় ভাবতাম, রোজি সামাদের সঙ্গে বোধ হয় তার কিছু একটা আছে। আসলে এটা শুধু আমার দোষ না। দর্শকরাও পর্দায় দেখে ভেবে নেয়, এই নায়কের সঙ্গে বোধ হয় এই নায়িকার কিছু একটা আছে। ফিল্মে এসে বুঝলাম, এটা ভালো অভিনয় শিল্পীর লক্ষণ। তারা পর্দায় এত ভালো করেন, যে দর্শকও ভাবতে বাধ্য হয়।

দ্য রিপোর্ট : আনোয়ার হোসেন ছোটবেলা থেকেই চিনতেন বললেন-

আনোয়ারা : হ্যাঁ। শুধু আমাকে না। আমার বাবাকেও চিনতেন। আমি নাকি ওনার কোলে চড়ে অভিনয় করেছি। এরপর বড় হয়েও ওনার সঙ্গে মঞ্চে নাটক করেছি। মঞ্চে ‘নবাব সিরাজ উদ দৌলা’ করার সময় তিনি আমাকে ধরে ধরে শেখাতেন। আলেয়া চরিত্রটিতে নিয়ে আমাকে বলেছেন, এভাবে করা যেতে পারে, ওইভাবে করা যেতে পারে। এই নাটকের প্রতিটি সংলাপ ঠোঁটস্থ ছিল। কোথায় চোখের পানি ফেলতে হবে, কখন সিরাজ উদ দৌলার ঘোড়া আসবে। মঞ্চে তো ঘোড়া আনা সম্ভব না। তাই অভিনয় দিয়েই বোঝানো হত। সব দৃশ্য নিয়ে আমরা আলাপ করতাম।

দ্য রিপোর্ট : মঞ্চে শিখেছেন কার কাছে?

আনোয়ারা : আলী মনসুর, আলী কাওসার, আনিসুর রহমান, নারায়ণ চক্রবর্তী-এদের হাতেই আমি তৈরি হয়েছি।

দ্য রিপোর্ট : প্রথম যখন মঞ্চে উঠলেন, সে সময় কি হয়েছিল?

আনোয়ারা : আমি তখন অনেক ছোট। স্টেজে উঠেছি। নাচব। মঞ্চের পর্দা সরার পর দর্শক দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই ভয়টা এখনো আছে।

দ্য রিপোর্ট : এখন মঞ্চে কাজ করেন না?

আনোয়ারা : একটা বিষয় বলি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, চলচ্চিত্র ও মঞ্চের মধ্যে আপনার প্রথম পছন্দ কি? আমি বলব ‘মঞ্চ’। অনেক শেখার আছে। মঞ্চের শিল্পীরা শিখে আসে। তাদের নিয়ে কাজ করতে চলচ্চিত্র পরিচালকদের অনেক সহজ হয়। আমি এখনো সময় সুযোগ পেলে মঞ্চে কাজ করি। কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করি না। যে যখন ডাকে, ভালো মনে হলে, সময় মিললে, অভিনয় করতে যাই। ‘নবাব সিরাজ উদ দৌলা’ ছাড়াও ‘মায়ের কান্না, ‘আমির আকরাম’ নাটকগুলো করি।

দ্য রিপোর্ট : নতুন নাটক করেন না?

আনোয়ারা : না। আমি পুরনো নাটক করি। নতুন নির্দেশকদের কাজ করি না।

দ্য রিপোর্ট : আপনি নায়িকা হলেন না কেন?

আনোয়ারা : দর্শক আমাকে নায়িকা হিসেবে পছন্দ করবে না, তাই। নায়িকা হতে যে সব যোগ্যতা লাগে, আমার কী তা আছে নাকি?

দ্য রিপোর্ট : কে বলেছে নেই?

আনোয়ারা : দর্শক আমাকে ভাবী, মা, দাদী চরিত্রে বেশি গ্রহণ করেছে। শাবানা আমাকে বলত, তুই কেন নায়িকা হলি না। আমি হইনি। আয়নার সামনে দাঁড়ালেও মনে হয় আমি একজন চরিত্রাভিনেত্রী। প্রতিটি গল্পে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে পারি। এটা তো নায়িকারা পারে না। তারা শুধু রোমান্স করতে পারে।

দ্য রিপোর্ট : অভিনয় শিল্পীর দায়িত্ব কি?

আনোয়ারা : আমি তো একজন ছোটখাট শিল্পী। আমার মনে হয় যেকোনো শিল্পীর এক দৃশ্য পেলেও মন দিয়ে কাজ করা উচিত। নায়িকা হলেও চরিত্রে ঢুকতে হবে।

দ্য রিপোর্ট : চলচ্চিত্রের প্রথম জীবনের কথা বলুন?

আনোয়ারা : আমাদের ভেতরে শ্রদ্ধাবোধ ছিল। পাঁচ মিনিট লেট হলে বুক ধপ ধপ করত। এই বুঝি পরিচালক বকা দেবেন। পরিচালক ঘড়ি দেখলেও ভয় পেতাম। তখন অনেক আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। সারাদিন শুটিং করতাম। সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টার দিকে খাবার খেতাম। পরিচালক সবাইকে নিয়ে খেতেন।

দ্য রিপোর্ট : বর্তমান পরিস্থিতি তো আগের মতো আছে?

আনোয়ারা : এখন তো টাইমলি খাবার দেয়। কিন্তু কাজের বেলায় শ্রদ্ধাবোধ কমেনি। আসলে সম্মানটা একান্ত নিজের। কাউকে সম্মান দেখালে আপনিও সম্মান পাবেন।

দ্য রিপোর্ট : এ সময়ের অভিনয় শিল্পীরা কেমন?

আনোয়ারা : আমি তো অবাক হই। অনেকে না শিখে এত ভালো অভিনয় করে কীভাবে? ওরা সিরিয়াস কাজও মজা নিয়ে করে ফেলে। ওদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে মনে হয় আমার বয়স ২০ বছর কমে গেছে।

দ্য রিপোর্ট : আপনার পর্দার নায়কদের নিয়ে কিছু বলুন?

আনোয়ারা : আমার নায়ক? হুমম। বেশি তো নেই।

খলিল : খলিল মামা অনেক রসিক মানুষ। প্রবীর মিত্রের সঙ্গে আমাকে অনেকে পছন্দ করেন। ফারুক ও অন্য ধরনের ছেলে। আমার ভালো বন্ধু। একজন শিল্পীকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়, ও জানে। জসিমের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিক ভাব ছিল। ও মজা করত। আমি পান খাওয়াতে চাইলে তিনি উর্দুতে বলতেন, ‘আপকে মোবারক হাতোসে খিলা দিজিয়ে।’ এই তো।

দ্য রিপোর্ট : নিজের পরিবার?

আনোয়ারা : আমার বাবা জামাল উদ্দিন, মা ফরিদুন্নেসা। আমার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। স্বামী মুহিতুল ইসলাম। এক মেয়ে মুক্তি। আর নাতনী কারিমা ইসলাম দরদী। ও ক্লাস টুয়ে পড়ে।

দ্য রিপোর্ট : বাসায় রান্না করেন তো?

আনোয়ারা : আমি ভালো রান্না করতে পারি। কিন্তু অনেকে বলে পারি না। তবে গরুর মাংস, নারকেল কচু, মোরগ পোলাও ভালো রান্না করতে পারি। একটা কথা মনে পড়ে গেল। শাবানা আমার বাসায় এসে আমাকে ধরে রান্নাঘরে নিয়ে যেত। নিজের হাতে পাটা-পুতা বের করে দিত। তারপর বলত, শুটকির ভর্তা বানিয়ে খাওয়া। ঘরে শুটকি আছে কী নেই সেটা দেখত না। ভর্তা বানিয়ে খাওয়াতেই হবে।

দ্য রিপোর্ট : শাবানা দেশে এলে আপনার সঙ্গে দেখা হয় না?

আনোয়ারা : ব্যস্ত থাকলে হয় না। তবে কথা হয় এক ঘণ্টা। ও দেশে এসে আমাকে ফোন দিয়ে বলবে, ‘প্রথম ফোনটা তোকেই দিলাম।’ কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। আমার কাছে মনে হয়, ও এই কথাটা সবাইকে বলে। (আবার হেসে উঠলেন)

(দ্য রিপোর্ট/আইএফ/সা/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর