thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল 24, ৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ৮ শাওয়াল 1445

ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ রবিবার

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৭:৩৮:১১
ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ রবিবার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণের দিন রবিবার। ভাষা প্রেমে আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল শহীদ দিবস। সারা পৃথিবীর মানুষ দিনটিকে পালন করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

কোটি কোটি শোকার্ত বাঙালি দাঁড়াবে শহীদ মিনারের সামনে, হাতে থাকবে শ্রদ্ধার ফুল। ১৯৫২ সালের ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা মানুষের জীবন উৎসর্গের ঘটনায় শাণিত হয়ে জাতি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা খুঁজবে।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’— আকাশ-বাতাসে শোক বিধুরতা ছড়িয়ে বাজবে, কণ্ঠে কণ্ঠে থাকবে সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ও আলতাফ মাহমুদের সুর করা অমর এ গান। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

দেশ বিভাগের পর বাংলা ভাষা-ভাষীদের মধ্যে যে ভাষা চেতনা বেড়ে উঠতে থাকে, তারই পূর্ণ প্রকাশ ১৯৫২ সালে। পাকিস্তানি শাসকদের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নামে পূর্ব বাংলার মানুষ। ১৪৪ ধারা ভেঙে ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, সফিউরসহ কয়েকজন তরুণ শহীদ হন।

ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রথম তখনকার জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন।

একুশ বিশ্ব চেতনার প্রতীক হয়ে উঠলেও বাংলাদেশে এ চেতনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। এখনো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্তরসহ বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করা যায়নি। উল্টো নেমেছে ভাষা বিকৃতির নতুন বিপত্তি। ভাষা শহীদদের স্বীকৃতির বিষয়টিও আমলে আনেনি কেউ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য দেশব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ দিন দেশে সাধারণ ছুটি।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলা বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

সরকারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এছাড়া কূটনৈতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, ভাষাসৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও দিবসটি পালনে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে সাড়ে ছয় হাজার পুলিশ সদস্যের চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’ আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি রুটম্যাপ প্রণয়ন করেছে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী একুশে বইমেলা চলছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বইপ্রেমী মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে ‘পূর্ণতা’ ছুঁয়ে যাবে মেলা।

শহীদ দিবসে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনাসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা হবে রবিবার।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এএসটি/সা/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর