thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

আশা-নিরাশার মেলা শেষ সোমবার

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ২৮ ১২:৫১:৫৩
আশা-নিরাশার মেলা শেষ সোমবার

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হচ্ছে সোমবার। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, বইকে কেন্দ্র করে লাখ মানুষের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা আর একুশে চেতনাজাত মিলনমেলা দেখার জন্য আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে বইপ্রেমী মানুষকে।

বই কেনাবেচা আর বইয়ের সঙ্গে বাস করে একটি মাস অতিবাহিত হলো। পুরো মাসে যেমন ছিল অনেক ইতিবাচক কার্যক্রম তেমনি অসঙ্গতিরও কমতি ছিল না। ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে— বৃহৎ পরিসরে মেলা, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, মেলার বাইরে বারোয়ারি পণ্যের হাট বসতে না দেওয়া, আলোকসজ্জাবৃদ্ধি প্রভৃতি। যা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন।

সঙ্গতি ও অসঙ্গতি : মেলার অসঙ্গতির মধ্যে যা প্রথমে মানুষকে হতাশ করেছে, তা হলো— মেলার নান্দনিকতা। প্রবেশ পথে দায়সারা দুটি তোরণ ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। মেলায় প্রবেশ না করলে বুঝার কোনো উপায় নেই যে, এখানে বইমেলা হচ্ছে কিনা। আর প্রবেশ পথে যে কয়টা ব্যানার, পোস্টার দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশই ছিল ভুলে ভরা। কী বানানে, কী পংক্তি বিন্যাসে।

এ ছাড়াও বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত এ মেলা ঘুরে দর্শনার্থীদের বিশ্রাম নেওয়ার মতো ছিল না এতটুকু জায়গা। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল না কোনো খাবারের ক্যান্টিন।

একাডেমির অর্থহীন প্রতিশ্রুতি : মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি সংবাদ সম্মেলনে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করেনি। মেলা প্রাঙ্গণে— যেমন একটি মিডিয়া সেন্টার নির্মাণের কথা থাকলেও মেলার দ্বিতীয় সপ্তাহে কোনো রকম একটি ঘর তৈরি করলেও এখানে ছিল না কোনো কম্পিউটার, ছিল না বৈদ্যুতিক সংযোগ। ফলে সাংবাদিকদের কখনো সেখানে যেতে দেখা যায়নি। একটি ডিজিটাল নির্দেশিকা থাকার কথা থাকলেও মেলার ষোলতম দিনে শুধু মাইক্রোফোনে এটির উদ্বোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে এর কোনো কার্যক্রম ছিল না। আর পুরো মাস জুড়ে স্টলে স্টলে পাইরেটেড বই বিক্রি হলেও সেভাবে অভিযান চালানো হয়নি। যে তিনটি স্টলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মেলার অন্যান্য স্টলের তুলনায় ওদের অপরাধ ছিল খুব ক্ষীণ।

ব-দ্বীপ বন্ধ, পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য : ধর্মীও অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযুগে মেলায় আগত প্রকাশনা সংস্থা ব-দ্বীপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিলগালা করা হয় কনকর্ড টাওয়ারের অফিসটিও। ধর্মীও বিষয়ে আঘাত হেনে বই প্রকাশের কারণে প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকসহ আরও দুজনকে হাজতে নেওয়া হয়। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলে নানা তর্ক-বিতর্ক।

একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন লেখক ব-দ্বীপ বন্ধের পক্ষে কথা বলায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচিত হন।

এদিকে এর প্রতিবাদে মাঠে নামেন উদীচী, ছাত্র ইউনিয়ন, গণজাগরণ মঞ্চ, কয়েকজন তরুণ লেখক ও কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একাডেমির সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। প্রতিবাদকারীদের ভাষ্য ছিল— এ অভিযুগে স্টল বন্ধ হলে শুধু ব-দ্বীপ একার নয় অনেক স্টলই বন্ধ হওয়ার কথা। এমনকি বাংলা একাডেমিও ধর্মীও অনুভূতিতে আঘাত হেনে বই প্রকাশ করেছে।

ঝড়-বৃষ্টির কবলে মেলা, বিতর্কে একাডেমি : প্রতি বছরের মতো এবারও ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। এতে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও একাডেমির অর্ধেকের মতো জায়গায় পানি জমে যায়। স্টলের ভেতরে পানি উঠে শতাধিক প্রকাশনা সংস্থার বই ভিজে যায়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও মেলায় সামান্য অসঙ্গতি মোকাবেলা করতে না পারায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।

প্লাটফর্মে আগুন, প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন : মেলায় ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশনা সংস্থা প্লাটফর্মে অজ্ঞাতরা আগুন ধরিয়ে দেয়। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় স্টলের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশে ছিল এ স্টলটি, পথে পথে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারপরও কীভাবে মেলার পেট্রোল নিয়ে প্রবেশ করলো এবং স্টলে আগুন ধরাল এ বিষয়ে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রশাসন।

অপরিকল্পিত স্টল বিন্যাস ও অসম বিক্রি : অপরিকল্পিত স্টল বিন্যাসের কারণে মেলা আগত দর্শনার্থীদের অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের মাঝে। এতে করে যে শুধু দর্শনার্থীদের কষ্ট হয়েছে তা নয়। ঝোপে ও প্রান্তিকে থাকা স্টলগুলোতে ক্রেতা যাওয়ার পরিবেশ না থাকায় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছেন।

প্রকাশকদের দাবি ও একাডেমির না : মেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মেলা একদিন শুধুমাত্র সোয়া এক ঘণ্টা চলে। এ সময়টা ক্রেতাদের আশা যাওয়ার মধ্য দিয়েই কেটে যায়। ফলে মেলার সময় বৃদ্ধি তিন ঘণ্টা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু প্রকাশকরা দুর্যোগ পরবর্তী সময় মেলার সময়সীমা সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা বৃদ্ধির দাবি জানালে একাডেমি তা প্রত্যাখ্যান করে। ফলে প্রকাশকরা প্রতি বছরের মতো এবারও একাডেমির আচরণে নিন্দা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে আগামী বছর মেলার দায়িত্ব প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান।

২১ প্রকাশক অভিযুক্ত : লটারির পর ইচ্ছেমতো স্টলের জায়গা পরিবর্তন করায় ২১ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয় একাডেমি। এতে বলা হয়, সঠিক জবাব দিতে না পারলে আগামী মেলায় তাদের আসার সুযোগ দিবে কিনা এ বিষয়ে ভাববে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এফএস/এএসটি/এইচ/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর