thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ইয়াহিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান রাজনৈতিক দলগুলোর

২০১৬ মার্চ ০৪ ০০:১৩:০৩
ইয়াহিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান রাজনৈতিক দলগুলোর

সারাদেশে মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকে। সর্বাত্মক সফল হয় বঙ্গবন্ধু ঘোষিত হরতাল কর্মসূচী। ঢাকার সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল (জল, স্থল, বিমান) যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। এদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানা ইপিআর ব্যারাকের বাঙালি জওয়ানরা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রাজপথের মিছিলকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। রাজপথে নেমে আসেন বেতার-টেলিভিশনসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পীরা। ‘রেডিও পাকিস্তান’ পরিণত হয় ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্রে’। হরতালের সমর্থনে এ সময় বেতার ও টেলিভিশন থেকে খবর প্রচারিত হয়।

হরতাল চলাকালে ঢাকাসহ গোটা পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি, মিছিল, সমাবেশ ও শহীদদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজার পর বিশাল একটি শোক মিছিল বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। ২ ও ৩ মার্চ দুই দিনে ঢাকায় ১২১ জন এবং চট্টগ্রামে ১২০ জন মারা যায়। এছাড়া আহত হয় বহু লোক।

এদিন ঢাকায় হরতাল চলাকালে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়নি। তবে বিমান বন্দরে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিন ঢাকায় কারফিউ তুলে নেওয়া হলেও রংপুর ও খুলনায় কারফিউ বলবৎ রাখা হয়।

সারাদেশের পরিস্থিতি

চট্টগ্রামের পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। বাঙালি-অবাঙালি সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং এর ফলে হতাহতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। নির্বিচারে বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে এদিন বিকেলে চট্টগ্রাম লালদিঘি ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এ সমাবেশে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ সভাপতি এম আর সিদ্দিকী চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

এদিন ফরিদপুরেও বিশাল মিছিল বের হয়। যশোর, খুলনা ও দৌলতপুরে মিছিলের ওপর গুলি চালায় সেনাবাহিনী। ফলে বেশকিছু লোক হতাহত হয়।

অন্যান্য দলের অবস্থান

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এদিন এক বিবৃতিতে ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দাবি’ জানান। ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি ‘পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগ’ প্রধান আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পিডিপি প্রধান নূরুল আমীন এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ ঢাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানান।

ঢাকায় অলি আহাদের সভাপতিত্বে ‘বাংলা জাতীয় লীগ’-এর এক জরুরি সভায় অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়।

মুসলিম লীগ (কনভেশন) সাধারণ সম্পাদক এএনএম ইউসুফ এক বিবৃতিতে ১০ মার্চ সংসদ অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

‘জমিয়াতুল উলামা-ই-ইসলাম’-এর নেতা মওলানা গোলাম গাউস হাজারতি এক বিবৃতিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত না হওয়ার জন্য হুমকির সমালোচনা করেন।

করাচী প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।

বেলুচিস্তান ন্যাপ (ওয়ালী) জাতীয় সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে সমগ্র বেলুচিস্তানে ১২ মার্চ হরতাল পালনের ঘোষণা দেন।

এদিন করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন, ‘দেশের সংহতির জন্য তার দল (পিপিপি) যতদূর সম্ভব ৬ দফার কাছাকাছি যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’

বঙ্গবন্ধুর বিবৃতি

এদিন এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসেনি।’

হরতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মচারীরা এখনও বেতন পাননি, শুধু বেতন প্রদানের জন্য সেসব অফিস দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শুধু হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, সাংবাদিক, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, দমকল ইত্যাদি হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।’

রাও ফরমান আলীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

এদিন রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী কতিপয় প্রস্তাব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গেলে তিনি এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

গ্রন্থনা : সোহেল রহমান

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এনআই/মার্চ ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর