thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

নারীদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

২০১৬ মার্চ ০৭ ২৩:১২:১৭
নারীদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বাহরাম খান, দ্য রিপোর্ট : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাদ দিলে গত আড়াই দশক ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে পর্যাক্রমে আছেন দুইজন নারী। বাংলাদেশের মতো আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দেশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের নানা বাধা সত্ত্বেও প্রায় অপ্রদ্বন্দ্বীভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এবারের নারী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন ‘আমাদের সরকারের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে রাজনীতি, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বক্ষেত্রে নারীর সফল পদচারণা দৃশ্যমান হচ্ছে। নারীদের আশাতীত উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও এখনও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে’।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রধান হিসেবে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। তখন থেকে বিরোধীদলের নেতার পদটিতেও রয়েছেন নারীরা। এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের মাধ্যমে আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে নারী নেতৃত্বের নতুন ইতিহাস করেছেন।

শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার হাত ধরেই রাষ্ট্রের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। সরকারি দলের সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের আসনে স্থান পেয়েছেন নারীরা।

উচ্চ আদালতে বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সংসদ সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সচিব, গার্মেন্টস সেক্টর, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নারীদের নিয়োগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারী দায়িত্বশীল পদে নারীদের নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।

তার প্রেক্ষিতে হতে যাওয়া সম্প্রচার আইনে (খসড়ায়) সম্প্রচার কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজন মহিলাকে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান থাকছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধানের অন্তত চারটি (১৫,১৯,২৮,২৯) অনুচ্ছেদে নারীদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ আছে। ১৯ অনুচ্ছেদের ৩নং উপ-অনুচ্ছেদে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন’।

সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের ২ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’

শুধু রাষ্ট্রের বড় পদ এবং সরকারি চাকরি-বাকরিতে নয়। বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদেও নারীদের নেতৃত্ব চলছে তিন দশকের বেশি সময় ধরে।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর টানা সাতবার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।

কয়েকবার ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি’র) প্রধান হিসেবে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে দায়িত্ব নেন বেগম খালেদা জিয়া। দলটির সর্বশেষ ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ভোট গ্রহণের আগেই অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ‘যুব মহিলা লীগ’-এর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর সফল নেতৃত্বে যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের নারীরা এখন ভাল আছেন। নারী নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামনের দিনে নারীদের আরও ভাল অবস্থান হবে বলে আশা করি’।

আছে বাধাও

যুগে যুগে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন। যৌতুক, কাজের পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা, চলতে-ফিরতে সমস্যা, পারিবারিক কলহসহ নানা জটিলতায় ভুগতে হয় নারীদের।

ইন্টারনেটের যুগ নতুন করে নারীর নিরাপত্তায় বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক এ প্রযুক্তি ব্যবস্থায় নারীরা যুক্ত থাকুন বা নাই থাকুন এর নেতিবাচক কার্যক্রমের শিকার হচ্ছেন তারা। এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

প্রায় সব ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রার বিষয়টি এখন চোখে পড়ার মতো। তবে, সংখ্যার দিক দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অবস্থান তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

আওয়ামী লীগের গঠণতন্ত্রের ‘অঙ্গীকার’ অংশে ‘নারী নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সুনিশ্চিত করিয়া নারী ক্ষমতায়ন’ করার কথা বলা হয়েছে।

২০১২ সালের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের গঠণতন্ত্রের ৪ নম্বর ধারায় ‘সংগঠনের সর্বস্তরের মহিলা প্রতিনিধিত্ব’র কথা বলা হয়েছে যে, ‘আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদসহ দলের সকল স্তরের কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। নারী-পুরুষের সমতা আনিবার লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান হারে এই অনুপাতে বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিবে’।

দলটির ৭২ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটিতে মহিলা সদস্য আছে মাত্র দশজন। তবে, দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সভাপতিমণ্ডলীর ১৩ সদস্যের মধ্যে সভাপতিসহ পাঁচজন নারী রয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন প্রয়াত।

অন্যদিকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপারসন ছাড়া আর কোনো নারী সদস্য নেই।

বিএনপির মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন সুলতানা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নারীর উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দরকার গণতন্ত্র। কিন্তু, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রহীনতায় আছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে, সকল বাধা ছিন্ন করে সামনের দিনে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ে কাজ করছে বিএনপি’।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, সভ্যতারে ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে সকল উন্নয়ন ও অগ্রগতির অংশীদার হিসেবে সৃজনশীল এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পুরুষের পাশাপাশি নারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের সর্বস্তরে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে’।

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এএসটি/এনআই/মার্চ ০৮,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর