thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

নারী নির্যাতন কমছেই না

২০১৬ মার্চ ০৭ ২৩:১৩:৫৯
নারী নির্যাতন কমছেই না

প্রশান্ত মিত্র, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীর কাফরুলের ন্যাম গার্ডেনে সোমবার জনিয়া (১৫) নামে এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সোমবার বিক্ষোভ করেছেন সেখানকার লোকজন। জনিয়ার মতোই গত এক বছরে অনেক নারী নানা ধরনের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। হরেক রকম নির্যাতনের সংখ্যাও কম নয়।

রাজধানীতে বর্ষবরণ উৎসবে যৌন হয়রানি, মাইক্রোবাসে আদিবাসী নারীকে গণধর্ষণসহ বেশকিছু ঘটনা ২০১৫ সাল জুড়ে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন বা নারীবাদী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের পরও দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন বেড়ে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি বেসরকারি সংস্থার হিসেব মতে, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৪৩৬ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

অপরদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওই বছর নারী নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় মোট ১৮ হাজার ৩০৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলাগুলো করা হয়।

মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নির্যাতিত নারীর সুবিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সব কেসে কেউ মুখ খুলতে চান না। তাছাড়া বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় খরচের কথা চিন্তা করে ভিকটিমের পরিবার মামলা কন্টিনিউ করে না।’

ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বহুবার বলেছি। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের উচিত বিষয়টি পার্লামেন্টে উত্থাপন করা।’

২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটে। ১৫ এপ্রিল শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ যৌন হয়রানির ঘটনায় মামলাটি করেন। পুলিশ এ মামলার অভিযুক্তদের ছবি প্রকাশ করে পুরস্কারের ঘোষণা দিলেও মাত্র একজনকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসেব মতে, গত এক বছরে মোট ১ হাজার ৯২ নারী ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ১৯৯ জনকে গণধর্ষণ এবং ৮৫ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

এছাড়া এই এক বছরে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১৪২ নারীকে। শ্লীলতাহানীর শিকার হন ১০৩ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার হন ৬৮ নারী। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন ৩৭ জন। অগ্নিদগ্ধ হন ৫৯ নারী। এর মধ্যে অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয় ২৪ জনের।

একই বছর ২১ মে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পরদিন শুক্রবার অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা করে মেয়েটির পরিবার। ২১ বছর বয়সী ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা করার জন্য তাদের তিন থানায় ঘুরে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও ওই সময় অভিযোগ করে মেয়েটির পরিবার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে মোট ৯৭টি। নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৫টি। এর মধ্যে ১৮ জনকে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭১৪ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৫১ জনকে।

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৮৬ নারী। তাদের মধ্যে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ২০৩ জনকে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭০ জন গৃহপরিচারিকা। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৩০ জনকে এবং নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনজন। উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ৩৬২ জনকে। এর মধ্যে উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২২ জন। ফতোয়ার শিকার হয়েছেন ২৮ জন। বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে ৩৩৬ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন এবং ১৬৭ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন ৯৪ জন।

পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৭ জন নারী। শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে ৩০২ জনকে। এ ছাড়া অন্যরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত ১১ জুন সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন ঢাকার এক নারী কনস্টেবল। অভিযুক্ত ব্যক্তিও পুলিশের সদস্য। রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে ওই নারী কনস্টেবলের বোন অভিযোগ করেন। খিলগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক কালিমুর রহমানের বিরুদ্ধে দলবেধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন সেই নারী কনস্টেবল। ওই সময় কালিমুর ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় গঠিত পুলিশের বিশেষ ব্যাটালিয়ন স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন (এসপিবিএন) এ কর্মরত ছিলেন।

গত মে মাসে রাজধানীতে সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে বসিলা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের অনেক ভালো ভালো আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। জবাবদিহিতার অভাব এবং ভুক্তভোগী ও স্বাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।’

আমাদের থানাগুলোও নারীবান্ধব নয় বলে মনে করেন তিনি।

২০১৫ সালে দেশে ৩৬২টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। আর পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে নারী ও শিশুদের ব্ল্যাকমেইল বাড়ছে। যৌন হয়রানির ৫২ শতাংশ অপরাধীর বয়স ২৪ বছরের নিচে বলে উল্লেখ করেন এ্যাডভোকেট সালমা আলী।

তিনি বলেন, ‘১৮ বছরের নিচেও অনেক অপরাধী রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে হয় পরিবার নিজ দায়িত্ব পালন করে না অথবা উপযুক্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে। উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে এরাই কিন্তু ভবিষ্যতে বিভিন্ন বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।’

সরকার, সমাজ ও পরিবারের একত্রিত প্রচেষ্টায় নারী নির্যাতন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব এবং এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/পিএম/এমএসআর/এএসটি/এনআই/মার্চ ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর