thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

যেখানে খুনের বিচার নেই!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৮ ০০:১৮:১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনায় একটি জাতীয় দৈনিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লিখেছে- লাশ পড়ে, রক্ত ঝরে, বাবা-মার বুক খালি হয়। মামলা হয়, তদন্তও হয়; কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার কাজ শেষ হয় না। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে মামলা। এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও এর পরের চিত্র। গত ৩৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। বিচার হয়েছে মাত্র দুটি মামলার। তাও শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি।

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, সর্বশেষ গত রবিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে ছাত্রলীগ। আহত হয়েছে অনেকে। গণমাধ্যমে জড়িতদের ছবিও এসেছে; কিন্তু পুলিশ জড়িতদের খুঁজে পায়নি, শনাক্তও করতে পারেনি।

পত্রিকার অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ৩৬ জন নিহত হয়েছে এদের মধ্যে বহিরাগতসহ ছাত্রশিবিরের ১৮ জন, ছাত্রলীগের ৫ জন, জাসদ ছাত্রলীগের ৩ জন, ছাত্রদলের ৩ জন, ছাত্রমৈত্রীর ২ জন, ছাত্র ইউনিয়নের ১ জন রয়েছে। রয়েছেন দুই শিক্ষকও। এ ছাড়া নিহতদের তালিকায় আছে নিরীহ পত্রিকার হকার, রিক্সাচালক ও সাধারণ ছাত্র। এ সব ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী আহত ও পঙ্গু হয়েছে। প্রায় ১ হাজার দিন বিশ্ববিদ্যালয় অনির্ধারিত বন্ধ থেকেছে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অর্ধশতাধিক কোটি টাকার। এ সব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় কয়েকশ' মামলা হলেও বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শতাধিক তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু একটি তদন্তের উদ্দেশ্যও আলোর মুখ দেখেনি ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নানা অজুহাতে তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যা মামলার দুর্বল তদন্ত করে নানা অসঙ্গতিপূর্ণ চার্জশিট দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে খুনের নিরাপদ স্থানে।

প্রতিবেদনে শিক্ষকসহ দায়িত্বশীল মহলের যে মতামত এসেছে তাতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হলেও কেউই দায় নিতে চাননি। এমনকি সাম্প্রতিক ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের পক্ষে অনেকটাই সাফাই গেয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনো মতামত দিতে চাননি। এ থেকেই বোঝা যায়, কেন অতীতের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার মেলেনি। বলা যায়, সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠটি ন্যায়-নীতি, মানবিকতার শিক্ষা দিলেও নিজেদের ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনি। এটা যে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সত্য তা নয়, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অনেক বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র একই রকম। অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো খুনখারাবি আর ধ্বংসাত্মক কাজের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে আরও বহুকাল যাবতই আমাদের স্বজন হারানোর বোবা কান্না সইতে হবে। আর নিজেদের সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে থাকতে হবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert