thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

হাওয়া হয়ে যাচ্ছে মোবাইলের টাকা

ব্র্যাকের ‘বিকাশে’ অভিনব প্রতারণা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৪:১৩:৫০
ব্র্যাকের ‘বিকাশে’ অভিনব প্রতারণা

মোবাইলে ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক ও এজেন্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো সহায়তা করছে না ভুক্তভোগীদের। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয় হওয়া ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’।

সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের এ সেবা দেয় ব্যাংকগুলো। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত কেওয়াইসি (KYC) ফরম যথাযথভাবে পূরণ না করেও এজেন্ট হচ্ছেন অনেকেই। আর এটিই হচ্ছে প্রতারণার অন্যতম হাতিয়ার। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে এজেন্টের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে, সিম রিপ্লেস করেও প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতারিত অনেক গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

গ্রামীণফোন সিম ০১৭৮০১৫৯৯৭৪ নম্বরের মাধ্যমে বিকাশে নিয়মিত লেনদেন করেন ব্যবসায়ী মোকারম হোসেন শামীম। কিন্তু গত বছরের ২ অক্টোবর হঠাৎ করে সিম কার্ডটির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ দেখায় এবং পরবর্তী সময়ে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ভৌতিকভাবে ২২ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামীম হারানো টাকা ফিরে পেতে বিকাশ হেড অফিস ও গ্রামীণফোন অফিসে ছুটে যায়। কিন্তু এর কোনো সুরাহা না পেয়ে দিশেহারা এই গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেন।

আবুল বাশার নামে অন্য এক গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে বিকাশে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলি। গত ১ আগস্ট হঠাৎ চালু সিমটি বন্ধ দেখায়। রেজিস্ট্রেশন নষ্ট হয়েছে মনে করে পাশের এসটিপিতে গিয়ে দেখি তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৭ হাজার ১০৮ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।’

শুধু সাধারণ গ্রাহক নয়, প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির এজেন্টরাও। এ রকম দুই এজেন্ট মাকসুদা বেগম ও মো. রহুল আমিন। তারা অ্যাকাউন্ট হ্যাক ও সিম রিপ্লেসের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ জানিয়ে কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

কাফরুল থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি নং ১৬৩২) মাকসুদা বেগম উল্লেখ করেন, ‘অত্র থানায় এই মর্মে জানাইতেছি যে, গ্রামীণফোন কোম্পানির মোবাইল সিমের ০১৭৮৮৫০৫৩৩৪, ০১৭৮৮৫০৫৩৩৫ ও ০১৭৮৮৫০৫৩৩৬ নম্বরগুলো রেজিস্ট্রেশন করা এবং ওই সিমগুলো বিকাশ করা। ওই সিম তিনটিতে মোট ৯২ হাজার টাকা ছিল। আমি বিকাশ এজেন্টে ক্যাশআউট করতে গিয়ে দেখি (১৬/০১/২০১৪ তাং) আমার সিমগুলো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ১০ মিনিট পর সিমগুলো আবার চালু হওয়ার পর দেখা গেছে আমার ৯২ হাজার টাকা নেই। হ্যাকিং করে সব টাকা লুট করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি আপাতত জিডি করার আবেদন করছি। প্রয়োজন হলে মামলা করব।’

একই থানায় পৃথক আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১১৬১) করেছেন রুহুল আমিন শেখ নামে আরেক এজেন্ট। তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন- ‘আমার নিজ নামে রেজিস্ট্রিকৃত গ্রামীণফোন সিম ২১/০১/২০১৪ তারিখে বিকেল ৪টা থেকে ৬টার মধ্যে ০১৭৭৭৬৭৩৯৪৫, ০১৭৭৭৬৭৩৯৪৬, ০১৭৭৭৬৭৩৯৪৭ নম্বরের সিমগুলো অন্যত্র আমার অনুপস্থিতিতে রিপ্লেস করা হয়েছে। ওই সিম তিনটি আমার বিকাশ রেজিস্ট্রি করা, যার মধ্যে মোট ১৭,৫৯৬ টাকা ব্যালেন্স ছিল, যা রিপ্লেস করার পরমুহূর্ত থেকে আমি আর টাকা পাচ্ছি না।’

সূত্র জানায়, সাধারণ রিচার্জ ব্যবসায়ী ও বিকাশ এজেন্টদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি পত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায়। ওই পত্রে রাঙামাটি কম্পিউটার ও টেলিকম ব্যবসায়ী মালিক কল্যাণ সমিতি এবং রাজধানীর ঠাটারিবাজারের ফরিদ ট্রেডার্সের মালিক ফরিদের অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিকাশের এজেন্ট রাজধানীর ঠাটারিবাজারের ফরিদ ট্রেডার্সের মালিক ফরিদের অ্যাকাউন্ট থেকে তার অজ্ঞাতে ৬ মিনিটের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকা অন্য নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় বিকাশের ওই এজেন্ট টেরিটরি ম্যানেজার তানভীরকে অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করতে বললে, তিনি হটলাইন ১৬২৪৭ নম্বরে জানাতে বলেন। কিন্তু এ হটলাইনটি তার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ ছাড়া বিকাশের আরেক কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে জানানো হলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে তার অ্যাকাউন্টে থাকা ২ লাখ ৯২ হাজার ৮৫০ টাকার মধ্যে ব্যালান্স পাওয়া যায় মাত্র ২ টাকা ৭০ পয়সা।

সার্বিক বিষয়ে বিকাশের পরিচালক প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি তো প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারণ করি। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আপনি বিকাশ কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করুন। তবে আমি ব্যাপারটা দেখব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং তদারকি শাখা সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহক প্রতারিত হলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিতে হবে। এ ছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে এজেন্ট, ক্যাশ পয়েন্ট, পার্টনার ও সাবসিডিয়ারিজের যাবতীয় দায় ব্যাংকগুলোকেই নিতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এত বড় কার্যক্রমে হয়ত কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৩৫ হাজার। ডিসেম্বর শেষে এই সেবার মাধ্যমে নগদ জমা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা, নগদ উত্তোলন হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা এবং স্থানান্তর হয়েছে ৭৭৮ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালে। এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংককে এ সেবা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংক এ সেবা চালু করতে সক্ষম হয়েছে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান 'বিকাশ' এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মধ্যে গ্রাহকদের পছন্দের সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থ স্থানান্তর (পিটুপি), নগদ জমা (ক্যাশ ইন) এবং নগদ উত্তোলন (ক্যাশ আউট)। একই সঙ্গে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ব্যবহার করে বেতন-ভাতা প্রদান ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এইচএসএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর