thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

শিশু নির্যাতন বাড়ছে

ভাসমান ২০ হাজার শিশু পতিতাবৃত্তিতে

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৪:০৩:০৯
ভাসমান ২০ হাজার শিশু পতিতাবৃত্তিতে

ভাসমান শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়া দিন দিন বাড়ছে। কমপক্ষে ২০ হাজার শিশুকন্যা সারাদেশে রাস্তায় ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছে।

এ ছাড়া শিশুদের ওপর নির্যাতন অপেক্ষাকৃত বেড়েছে। জানা গেছে, প্রতিমিনিটে একটি শিশুকন্যা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণে’র এক জরিপে বলা হয়েছে, পথশিশু বা টোকাইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ। এদের অর্ধেক রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় বসবাস করে। রাস্তায় বসবাস করা মেয়েশিশুরা নিরাপত্তার অভাবে সহজেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পথশিশুদের মধ্যে যারা মেয়ে তাদের মধ্যে ১৯ ভাগ বাধ্য হয় দেহ ব্যবসা করে। চিকিৎসার অভাবে এক সময় এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত এমন শিশুদের ৪৫ ভাগই কোনো না কোনো যৌনরোগে আক্রান্ত। তাদের অনেকেই কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবাও পায় না।

বাংলাদেশ জাতীয় উইমেন ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ফাহিমা নাসরিন দ্য রিপোর্টকে জানান, সারাদেশে অন্তত ২০ হাজার শিশুকন্যা রাস্তায় পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত। এ ছাড়া ঘর-স্কুলসহ প্রায় সর্বক্ষেত্রেই মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ে এ খবর গোপনই থেকে যায়।

অপর বেসরকারি সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু দ্য রিপোর্টকে বলেন, শিশুদের যৌন নির্যাতন আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ হলেও এর সমাধানে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জাতীয় শিশুনীতিতেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের পর শিশুকন্যাদের নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। এদের অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন যৌনরোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত বা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে শেষ পর্যন্ত তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে না। যৌনশিক্ষা ও স্কুলভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় দিনের বেলা ভাসমান শিশু যৌনকর্মীদের অনেকেই রাস্তায় রাস্তায় ফুল, চকোলেট বিক্রি করে। কখনও গাড়ির কাচ মুছে দিয়ে বিত্তবানদের কাছ থেকে কিছু অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু রাত হলেই ওরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। বাঁচার তাগিদে কিংবা পেটের ক্ষুধা মেটাতে তারা দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সব শিশুদের বাস্তব বড়ই কঠিন। এরা অনেকেই পরিস্থিতির শিকার। পেটের জ্বালা মেটাতে কিংবা অসহায় হয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে এ কাজ করে। ১৪ বছর বয়সী সেলিনা আক্তার (ছদ্মনাম) এক সময় পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছিল। গত ২ বছর ধরে রাস্তায় মিষ্টি বিক্রি করছে সেলিনা। কারণ এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীর বিকারগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে সে আর এখন কোনো খদ্দের পায় না।

জানা গেছে, পতিতাবৃত্তিতে অল্পবয়সীদের চাহিদা থাকায় এ পেশায় শিশু-কিশোরীদের এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম আরেকটি কারণ খদ্দেররা মনে করেন শিশু-কিশোরীদের থেকে যৌনরোগে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রাপ্তবয়সীদের তুলনায় কম। এ পেশায় তাদের সহজে ও ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অল্পবয়সী মেয়েদের জোগান বৃদ্ধি পেয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাড়ছে দেশি-বিদেশি পতিতালয়ে মেয়েশিশু পাচার। এ ছাড়া যৌনকর্মীরাও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে গর্ভজাত বা পালক মেয়েদের পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দারিদ্র্যের শিকার শিশু-কিশোরীরা অন্ন-বস্ত্র ও নিরাপত্তার অভাবে অল্পবয়সেই পতিতালয়ে চলে যায়।

এমনও দেখা গেছে, অপ্রাপ্তবয়সী যৌনকর্মীরা ধরা পড়ার পর সর্দারনীরা মায়ের দাবিতে কোর্টে গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এনজিওকর্মীরা জানান, কিশোরীদের শরীর বড় করার জন্য ট্যাবলেট খাওয়ানোর ঘটনাও ঘটে। এতে শিশু-কিশোরীরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

জানা যায়, শহরের রাস্তায় যারা ফুল, পানি, বাদাম বিক্রি করে, তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না থাকায় পার্কের দারোয়ান-কর্মচারীদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় মেয়েশিশুরা। পরে এক সময় বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে তারা। ঢাকার কারওয়ানবাজারের ফুল বিক্রেতা কিশোরী শিলা আক্তার (ছদ্মনাম) দ্য রিপোর্টকে জানায়, ‘মাদারীপুর থাইকা ঢাকায় আইস্যা ফুল বিক্রি কইরা খাই। একদিন এক ব্যাডা আমারে টাকা দেওয়ার লোভ দেখাইয়া খারাপ কাম করছে। এরপর থেইক্যা প্রায়ই আমারে ডাক দেয়।’

১৯৯০ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার নিয়ে এক কনভেনশনে স্বাক্ষরদাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ১৮ বছরের কম বয়সের সকল ছেলেমেয়েকে শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই সঙ্গে শিশুর স্বার্থরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপেও একমত হয়। কিন্তু যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনায় তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। শিশুদের প্রতি রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব, যৌন নির্যাতনে তার চরম লঙ্ঘন ঘটছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনইউডি/এইচএসএম/শাহ/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর