thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

‘পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন মমতার রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’

২০১৬ অক্টোবর ১৮ ২০:২৮:২৯
‘পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন মমতার রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি। এটি কোনো সম্মানজনক উদ্যোগ নয়। মনে হয় তিনি ও তার পাশের আশপাশে যারা আছেন, তাদের মধ্যে ঐতিহাসিক বোধের সংকট হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির গেমস রুমে মঙ্গলবার বিকেলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘জয় বাংলা থেকে বাংলাদেশ: পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে নাম পরিবর্তন করে যদি বাংলা হয়, তাহলে আমরা যে জাতীয় সঙ্গীত গাই ‘আমরা সোনার বাংলা’ তাহলে কি আমরা সেই পশ্চিমবঙ্গকে বোঝাবো? আমাদের রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা ‘বাংলা’য় কথা বলি, যে ভাষা আন্দোলনের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে তাহলে আমরা কাকে বোঝাবো। খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বাংলা ভাষা ও বাঙালিরা বিপর্যস্ত, সেখানে বাংলা সংস্কৃতি বিকাশে কোনো উদ্যোগ নেই। আগে তো নিজের রাজ্যে বাংলা সংস্কৃতিকে লালন ও বিকাশ করতে হবে। তার আগে নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তকে বলবো একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘এই বাংলা শব্দটির সঙ্গে আমাদের গৌরবগাথা ও মৃত্যুর মিছিল জড়িত। সে কারণে পশ্চিমবঙ্গ পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করায় আমরা উদ্বিগ্ন। তাই তাদের প্রদেশের নামকরণ পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।’

‘বাংলাদেশ ও জয় বাংলা: পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনে অদূরদর্শিতা’ শীর্ষক নিবন্ধ পাঠে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ করে বিধানসভায় প্রস্তাব পাস করিয়েছেন। এখন রাজ্যসভায় প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলেই পশ্চিমবঙ্গের নাম হবে বাংলা। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কলকতার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল আদৌ প্রয়োজন হলে সে ক্ষেত্রে বাংলায় বঙ্গ আর ইংরেজি বেঙ্গল হলে তো কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’

বাংলাদেশের সব রাজনীতিককে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় আমাদের সামনে সবকিছু সঠিক সময় পড়ে না বলে সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘এই নাম পরিবর্তন নিয়ে জাতীয়ভাবে আমাদের আরও আগেই প্রতিবাদ করার প্রয়োজন ছিল। দেরিতে হলেও রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল তাদের সবারই এই সমস্যাটি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ, তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় না বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম একটি জাতি রাষ্ট্র।’

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারত। তারা আমাদের নানাভাবে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গই ৭৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যে পশ্চিমবঙ্গ সম্পৃক্ত তারা এই কাজটি করে বাংলাদেশে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না বলে আশা করি।’

এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই জাতি রাষ্ট্র নয়। এই দেশ কারো কর্তৃত্বে সৃষ্টি হয়নি। জয় বাংলা স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কোনো প্রস্তাব নয় নিন্দা প্রস্তাব আনা উচিত।’

পশ্চিমবঙ্গের এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়েছেন ব্যারিস্টার তৌফিকুর রহমান ও সম্মিলিতি সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাচিক শিল্পী হাসান আরিফ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এম/এপি/অক্টোবর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর