thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

মামলাশূন্য শেয়ারবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল

২০১৬ অক্টোবর ১৮ ২১:১৮:০৩
মামলাশূন্য শেয়ারবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল

বিগত ৬ মাস ধরে মামলাশূন্য রয়েছে শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠন করা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরুর ১১ মাসের পর গত ১৭ এপ্রিল থেকে ট্রাইব্যুনালটি মামলাশূন্য হয়ে রয়েছে। বই ও পত্রিকা পড়ে, গল্প ও ঘোরাঘুরি করে সময় কাটছে ট্রাইব্যুনালটির কর্মকর্তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুন মাসে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে ২৪টি মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ৬টি মামলার রায় হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ১৬টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

সর্বশেষ প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা দিয়ে বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল ট্রাইব্যুনালটি। তবে গত ১৭ এপ্রিল মামলাটির বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর থেকেই মামলাশূন্য হয়ে রয়েছে শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠন করা বিশেষ এই ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে রবিবার (১৬ অক্টোবর) প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের স্থগিতাদেশের সময় শেষ হওয়ায় বিচারকাজ চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যাতে সোমবার (১৭ অক্টোবর) এ মামলাটি বিচারকার্য তালিকায় ছিল। তবে মামলাটি পুনরায় স্থগিত করার জন্য আসামিরা এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন এবং স্থগিতাদেশ কপি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের জন্য সময় আবেদন করে আসামিপক্ষ। যা আদালত মঞ্জুর করেছেন এবং আগামী ২১ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, মামলা না থাকায় বিচারক স্যার বেশির ভাগ সময় বই পড়ে সময় কাটান। আর আমরা পত্রিকা পড়ে ও ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মোট ৫৩৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্টে ২৫৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তবে সার্টিফিকেট মামলাগুলো বিচার প্রচলিত আদালতে হবে।

এ হিসাবে এখন পর্যন্ত দায়ের করা আড়াই শ’র বেশি মামলা পুঁজিবাজার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকার কারণে ট্রাইব্যুনালে এসব মামলা স্থানান্তরিত হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এ কারণে ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলো যাতে স্থানান্তরিত হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিএসইসির অপর সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যদি ট্রাইব্যুনাল মামলাশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে এটি শেয়ারবাজারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।’

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘যেগুলো ক্রিমিনাল কেস, শুধু সেগুলোই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। যেসব মামলার ক্ষেত্রে উচ্চ-আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে সেসব মামলা ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএসইসি। এ ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই।’

বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শেয়ারবাজার-বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এখন মামলাশূন্য। বিচারকাজের জন্য আসা ২৪টি মামলার মধ্যে ৬টির রায় সম্পন্ন হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা ফেরত গেছে। বাকি ১৬টি মামলা উচ্চ-আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।’

২০১৫ সালের ২১ জুন পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল ৬টি মামলার রায় ঘোষণা করেন। প্রথম রায় ঘোষণা করা হয় ৩ আগস্ট। ওই রায়ে ফেসবুকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রচারের দায়ে জনৈক মাহবুব সরোয়ারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপরে গত বছরের ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ সালের চিক টেক্স শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির এমডি মাকসুদুর রসুল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডের (বর্তমান নাম বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা নুরুল ইসলাম ও একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এনায়েত করিমকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ অক্টোবর প্লেসমেন্ট কেলেঙ্কারির মামলায় একমাত্র আসামি সাত্তারুজ্জামান শামীমকে ও ৩০ নভেম্বর সাবিনকো শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় কোম্পানির সাবেক এমডি কুতুব উদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। আর সর্বশেষ ২০ এপ্রিল সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানকে ২ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এস/এম/অক্টোবর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর