thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

মুক্তি মিলছে না সহসাই

ভবদহের জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ

২০১৬ অক্টোবর ১৮ ২১:৩৫:০৪
ভবদহের জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ

দেবু মল্লিক, যশোর : দুর্ভোগ থেকে সহসাই নিস্তার মিলছে না ভবদহের দুর্গত মানুষদের। গত আগস্টে দুদফা ভারি বর্ষণে মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর এলাকার দুই শতাধিক গ্রামের চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। সেই থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এখনো দুর্গত মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ নাব্যতা হারানোয় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ইরি মৌসুমে আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

পানি দ্রুত নিষ্কাশনে ভবদহের দুর্গত মানুষ মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়াসহ বিভিন্ন আন্দোলন করলেও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। পানি নিষ্কাশনে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও তা কার্যত দৃশ্যমান হয়নি।

জলাবদ্ধ মণিরামপুর উপজেলার কুমারসীমা গ্রামের সুকৃতি রায় বলেন, আমরা পানিবন্দী হয়ে আছি তিন-চার মাস। সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। আমরা জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী সমাধান চাই।

উপজেলার পাঁচকাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, আমরা রাজনীতির শিকার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণে ২০১২ সালে টিআরএম চালু করা যায়নি। তখন টিআরএম চালু হলে এখন আমাদের এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো না। আমরা এর থেকে নিস্তার চাই।

কুশখালী গ্রামের দশরথ মল্লিক বলেন, আর মাসখানেক পরে ইরি ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করতে হবে। কিন্তু যেখানে আমি বীজতলা তৈরি করি সেখানে বর্তমানে বুক পর্যন্ত পানি। এই পানি সরছেও না। তাই এবার ধান আবাদ করতে পারবো কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, ভবদহ এলাকার লাখো মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা দ্রুত পানি সরানোর জন্য তিনটি স্কেভেটর দাবি করেছিলাম। কিন্তু একটির বেশি আসেনি। অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে থাকা মানুষ রাজপথে নেমেছে। কিন্তু পানি না সরিয়ে গত ৫ অক্টোবর পুলিশ তাদের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে না। আগামী ইরি মৌসুমে ধান চাষ না করতে পারলে এই এলাকার মানুষের না খেয়ে মরতে হবে।

যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আমি নিজ উদ্যোগে একটি স্কেভেটর মেশিন এনে পলি অপসারণ করাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে তাদের প্রকল্প নেই। পরে টাকা দেবে। বর্তমানে পানি কিছুটা কমলেও আগামী ইরি ধান চাষ করা যাবে কি না তা এখন বলা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, স্লুইস গেট থেকে শোলগাতির ৯ কিলোমিটার শ্রী ও হরি নদীর চ্যানেল কেটে দিলে পানি নামবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। তবে ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য টিআরএম চালুর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সমীক্ষার কাজ চলছে। যা শেষ হতে এখনো অন্তত চার মাস লাগবে। এরপর প্রকল্প পরিকল্পনা ঢাকায় পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশন তা পাস করলে কাজ শুরু হবে। সে হিসাবে সরকারি উদ্যোগে পানি সরানোর কাজ শুরু হতে অন্তত ছয় মাস বাকি।

যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ফুলতলা থানা এলাকার ৫২টি বিল এলাকা ভবদহ নামে পরিচিত। ভবদহে পানি বের হওয়ার একটি স্লুইস গেট আছে। আশির দশকে এই ভবদহে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি বছরের আগস্ট মাসে অতিবর্ষণে ফের ভবদহ এলাকা ডুবে যায়। এই উপজেলাগুলোর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ, হরি, শ্রী, টেকা, ভৈরব, মুক্তেশ্বরী নদ পলি পড়ে নাব্যতা কমে যাওয়ায় পানি উপচে গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে দেয়। অন্যদিকে, ভবদহ স্লুইস গেটের দুই পাশেও পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি গ্রামে ও বিলে আটকে রয়েছে। ফলে এখন মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এম/এপি/অক্টোবর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর