thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

সাংবাদিকদের কল্যাণে স্থায়ী কিছু করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

২০১৬ অক্টোবর ২০ ১২:৫৮:২৪ ২০১৬ অক্টোবর ২০ ০৩:০০:০০
সাংবাদিকদের কল্যাণে স্থায়ী কিছু করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘সাংবাদিকদের কল্যাণে আমরা অনেক কিছু করে দিয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী আছি, চেষ্টা করছি। আমি যখন থাকবো না তখনো যেন সাংবাদিকরা বিপদে-আপদে সহযোগিতা পেতে পারেন তার জন্য ভালো একটা ফান্ড করে দিয়ে যেতে চাই।’ বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকতা করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে না। বয়স হয়ে গেলে টাকাও থাকে না। এমন অনেক ঘটনা আমার জানা আছে। তাই আমরা একটা ট্রাস্ট করে দিয়েছি। সেখানে আবেদন ছিল সবাই যেন সহযোগিতা করেন। শুধুমাত্র একজন আমাকে ফোন করে ট্রাস্টে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সবাইকে তো এগিয়ে আসতে হবে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৩১তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

এ সময় মজা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাকে দিয়ে আজকে ৩১তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিয়েছেন, এখন আবার বলছেন টাকা দিতে হবে। এখানে তো অনেকেই উপস্থিত আছেন যারা একাই এমন একটি কমপ্লেক্স করে দিতে পারেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়ছে এবং পত্রিকা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম সকালবেলা একটি ল্যাপটপ নিয়ে বসলেই বিশ্বের সব খবর পেয়ে যায়। কিন্ত আমরা যারা পুরোনো যুগের মানুষ তাদের পত্রিকা ছাড়া চলে না। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা এবং এককাপ চা ছাড়া আমাদের চলে না।’

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যিনি মালিক হন তিনিই হয়ে যান সম্পাদক। দেশে এখন ৭০০-র বেশি পত্রিকা ও ২৪টি টেলিভিশন চ্যানেল আছে। আরও ৪৪টি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য আবেদন পড়ে আছে।’

গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘স্বাধীনতা যদি না থাকত, তাহলে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও টক শোতে কীভাবে এত এত লেখা ও সমালোচনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতা না থাকলে গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা নেই, এই কথা তারা কীভাবে বলতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চেতনা মুছে ফেলা হয়েছিল। আমরা যে বিজয়ীর জাতি, সেটা বলাও ভয়ের ছিল। আমাকেও রিফিউজি জীবন কাটাতে হয়েছে ছয় বছর। এরপর আমি যখন দেশে এসেছি, গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি তখন আমার সাথে অনেক সাংবাদিকও গিয়েছিলেন। তারা জানেন বাংলাদেশ কোন অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু নিজেও সাংবাদিক ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধু নিজেও সাংবাদিকতা করেছেন। দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লে সেটা জানতে পারবেন। সেই সূত্রে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিবারেরই একজন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে নিজেকে সাংবাদিক পরিবারেরই একজন মনে করি।’

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের নীতিমালা আছে, সাংবাদিকতারও নীতিমালা আছে’- এটা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাংবাদিকদের সেই নীতিমালা মেনে সাংবাদিকতা করতে হবে।’

দেশের সম্পত্তি বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সম্পদ বাংলাদেশের, সেটা তুলবে এক দেশ, বিক্রি করা হবে আরেক দেশের কাছে-সেটাতে রাজি হয়নি বলেই ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। দেশকে বিক্রি করে, দেশের ক্ষতি করে শেখ হাসিনা রাজনীতি করতে চায় না। দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে রাজনীতি করিনি বলেই ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সিনিয়ার সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার।

এ সময় অনুষ্ঠানের সামনের সারিতে উপবিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি আমলা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরল আহসান বুলবুল।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক সরকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দেশে আজকে জঙ্গিরা রাষ্ট্র ও মানুষের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। জঙ্গিরা কখনোই গণমাধ্যমের বন্ধু হতে পারে না। জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবিরোধী লড়াই চলছে। জঙ্গিরা সমস্যা, জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকরা আরও বড় সমস্যা। জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকরা আগুন সন্ত্রাস করে, ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে। তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যম তার পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে।’

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। আপনি (শেখ হাসিনা) মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক একটি দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন। আমরা এখন মেধা রফতানি করার স্বপ্ন দেখছি। আপনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘বহু ঐতিহ্য বহন করছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে এই প্রেস ক্লাব নিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বারবার প্রেস ক্লাবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রেস ক্লাবের পাশে আছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরাও এখন আপনার সহযাত্রী। প্রেস ক্লাবে এখন এশিয়ার বৃহত্তম মিডিয়া কমপ্লেক্সে তৈরি হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এআরই/অক্টোবর ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর