thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

রেহান কৌশিকের সাতটি কবিতা

২০১৬ অক্টোবর ২২ ২০:০২:৪৮
রেহান কৌশিকের সাতটি কবিতা

গোলাপচারা

প্রস্তুত করেছি মাটি
দু-একটি গোলাপ চারা এরপর পুঁতে রেখে চলে যাব দূরে

কাঁটা ও সুগন্ধ শুধু ধরে রাখবে অসফল মানুষের কথা

কোনওদিন চিৎকার করিনি
কোনওদিন ত্রাণ চেয়ে বিরক্ত করিনি কোনওভাবে

বরং ভেঙেছি আমি নিজেকেই শান্ত হতে একা

একটি একটি করে যত মোহের পালক
জেগে ছিল সুদীর্ঘ ডানায়…
সমস্ত,সমস্ত, সব পুড়িয়েছি বিজন শ্মশানে

পূর্বাভাস

হাতের রেখায় স্পষ্ট হলুদের দাগ।
চলো, আনন্দ করি আজ
চশমা টেবিলে রেখে, চলো, দল বেঁধে কক্সবাজারের দিকে যাই।

অতর্কিতে যে পথ শিস্ দিতে দিতে চলে যায় আনন্দের দিকে
তার ধুলোয় মিশে থাকে কোনও মনখারাপ?

পাতাঝরার ঋতু আসতে আর কতদিন বাকি আছে, কেউ জানো?

ভাবছি শেষদিনে একটা চিঠি লিখে রেখে যাবো
নাহ্ কোনও প্রাপকের নাম থাকবে না।
যে খুঁজে পাবে এই চিঠি তার…

নির্জনতা আমাকে নিঃস্ব করেছে একাহাতে
আমার দিকে আবির ওড়ায়নি কোনও এক বসন্তের দিন!

আমার সমস্ত শব্দ ও অক্ষর থেকে গেছে অন্ধকার কাঠের কফিনে
বিষাদ-নগরী হয়ে এই দেহ আজন্ম শুনেছে মৃত্যুর সারেঙ্গিবাদন।

কাকে আর লিখে যাবো চিঠি!

নাহ, কোনও প্রাপকের নাম থাকবে না।
যে খুঁজে পাবে এই চিঠি তার…

সূর্যাস্ত

বুকে সূর্যাস্তের গন্ধ ছড়িয়েছে নিঃশব্দ শিকড়
এই দেহে পর্ণমোচী বৃক্ষদের গান
আরও স্তব্ধ লিখেছে মর্মর…

আসুক দু’একটি পাখি, খুঁটে খাক ছাইবর্ণ আলো
ঠোঁটে নিক প্রত্ন যত কথা ও কাহিনি।

আমি সব দিয়ে যেতে চাই
রাখা আছে যত আলো…যত ঋতু…টান…স্রোতস্বিনী…

দুই
এবার বাউল তুমি গান ধরো একা
গানেরা চিনিয়ে দিক কাকে বলে প্রকৃত স্তব্ধতা!

কফিন

নিজের কফিন ছুঁয়ে বসে আছি বহুজন্মকাল
কফিনে শায়িত যে-শরীর
সে কেবল অন্ধ হয়ে তোমার অপার স্পর্শ গেঁথে রাখে নিজের ভিতর

আমি শুধু এই দৃশ্য পাহারা দিয়েছি একা কালের রাখাল

যে-মানুষ প্রকৃত প্রেমিক
সে-মানুষ অন্ধজন…সুনিবিড় স্পর্শ দিয়ে চিনে নেয় সব
চিনি নেয় পাতাঝরা, আভার উৎসব

কোনও এক টান যেন খুব
গভীরে কোথাও ওঠে বেজে
হলুদ বিকেল জুড়ে আশ্চর্য পালক কত উড়ে আসে মৃতের শহরে

আমি সব চিনে নিতে পার

কে না চেনে এই চিঠিপত্র
নিঃশব্দ বয়ানে যার গাঁথা থাকে মুগ্ধ ঋতু পুরানো অক্ষরে!

দেওয়াল

দেওয়ালে দেওয়ালে দাবি। লাল নীল হলুদ হরফে।

দাবি থেকে ধোঁয়া ওঠে কালো
প্রতিটি দেওয়াল জুড়ে ঘূর্ণিঝড়,বিষের উত্থান!

কেন এত ঝরে পড়ে ক্রোধ?
কেন এত বিষমুখে দিকে দিকে উঠেছে স্লোগান?

তাহলে কি ভালো নেই এই দেশ, এই মাটিজল
ভালো নেই কোথাও মানুষ?

হয়তো বা ভালো আছে বুকে নিয়ে ঘৃণার অঙ্কুশ।

হে শাসক, পড়ো পড়ো
দেওয়াল দেওয়ালে কারা লেখে শ্লোক, জ্বলন্ত অক্ষরও!

আমার জন্য

আমার জন্য কখনও দুঃখ করো না।
কলমের নিব ভেঙে গেলে নতুন কলম আসে,
লেখা তো থেমে থাকে না!

আমি চলন্ত ট্রেন থেকে দেখা সামান্য এক দৃশ্যের চেয়ে
নিজেকে বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নই।

মনে রাখা আসলে একধরনের অসুখ।
আমি চাই না তুমি কোনও ভাবে আমার জন্য অসুখ ছুঁয়ে থাকো।

বরং বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এই যে আশ্বিন মাস বেহালা বাজায়,
জলফড়িংয়ের ডানায় ডানায়
এই যে নদী ছড়িয়ে দেয় সুগন্ধী জলের আতর… এই সব আনন্দের পাশে বসে।

আমার জন্য কখনও দুঃখ করো না।


ও আবির, সুসংবাদ আনো

কতজন্ম বসে আছি
প্রতিটি দিনের কথা নিভেছে নির্দাগ
জেগে থাকে সাদা পৃষ্ঠা বুকে নিয়ে অপার বিষাদ!

কোন্ দেশে আলো থাকে? কোন্ দেশ বাঁশরি শোনায়?
আমার শহর জুড়ে ধুলো ওড়ে শুধু
নাগরিরক সান্ধ্যকাল একা একা এফ-এম বাজায়…

দুই.
ভাঙা হচ্ছে রাসমঞ্চ, বিক্রি হবে পুরানো বাসন
ছড়ানো স্বপ্ন ভেঙে
এ শহর ছোট স্বপ্নে বাঁচে!
প্রাচীনের ঘ্রাণ তবু মাকড়ের প্রাণ নিয়ে ঘোরে-ফেরে আনাচে কানাচে।
চোখে-চোখে খিদে ওড়ে। এ শহর খিদের-শিবির।
বলো হে বসন্ত, আজ কাকে ছোঁবে তুমি
কার গায়ে মাখাবে আবির?

তিন.
বোমা ও বুলেটে আজ শিশুদেহে ফুটেছে পলাশ



কবি পরিচিতি : রেহান কৌশিক সাংবাদিক হিসেবে জীবন শুরু করলেও লেখার তাগিদেই সেই কাজ থেকে সরে এসেছেন। এখন লেখাই প্রধান কাজ।১৫ বছর বয়সে প্রথম কবিতা ছাপা হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘পড়াশুনো’ পত্রিকায়। তারপর থেকেই কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে দেশবিদেশের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে। আনন্দ বাজার পত্রিকা, দেশ, সানন্দা, অদ্বিতীয়া, নন্দন প্রভৃতি পত্রিকায় লিখে থাকেন। কবিতা ছাড়াও লেখেন ছোটগল্প, গানের কথা, চলচ্চিত্রের কাহিনি ও সংলাপ।

প্রকাশিত বই আটটি। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল মেহগিনি মেমেরিজ, password জাগো, ধুলোখেলা,ছায়ানর্তক, হে বিষাদ ছুঁয়ে থেকো। শিশু ও কিশোরদের জন্য লিখেছেন একটি বই-এসো পাখি চিনি।ধুলোবেলা কাব্য গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বাসুদেব সংসদ সম্মান ২০১৪। পেয়েছেন শান্তবী সম্মান ২০১৬।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর