thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

দক্ষিণ কোরিয়ার ২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সফর, মামলা সিআইডিতে

সেই গম কেলেংকারিতে নতুন মোড়

২০১৬ অক্টোবর ২৩ ২১:৫২:৩৬
সেই গম কেলেংকারিতে নতুন মোড়

মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা ব্যুরো : দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সদস্যবিশিষ্ট আইনি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করার পর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য আনা শতকোটি টাকার গম আত্মসাতের মামলা নতুন মোড় নিয়েছে । দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), চট্টগ্রাম বন্দর থানা পুলিশ হয়ে সর্বশেষ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে সিআইডি পুলিশ । অপরদিকে, আদালতের জিম্মায় থাকা ৩৩হাজার মেট্রিক টন গম খরিদ করার আসামি সাইফুল ইসলামের জামিন আবেদন চতুর্থ দফায় নামঞ্জুর হয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য বিভাগের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার M/S Samjin cs & t co. ltd সাথে ৫০ হাজার (+ ৫%) টন গম সরবরাহ চুক্তি হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার এই রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনার হাজী শেখ আশরাফ আলী এন্ড সন্সকে স্থানীয় বিশেষ প্রতিনিধি (EXCLUSIVE AGENT) নিয়োগ দেয়। সেই হিসেবে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন গম বোঝাই প্রথম চালান নিয়ে M/v Brave leader জাহাজ মংলা বন্দরে আসে ও খালাস করে। পরে দ্বিতীয় চালানে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন গম নিয়ে M/v Vyritsa জাহাজ ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে; কিন্তু এই সময় M/v Vyritsa স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জে কে শিপিং এর অসহযোগিতায় খাদ্য বিভাগ নমুনা গম সংগ্রহ করতে পারেনি। নানা টানাপোড়েনে জাহাজের গম খালাস নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে হাজী আশরাফ আলী কমিশনের জন্য বার বার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিতে থাকে। তাতেও কাজ না হলে পরে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। উচ্চ আদালত এই ৩৩ হাজার মেট্রিকটন গমের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত জাহাজ ছেড়ে দিয়ে জাহাজের বোঝাইকৃত গম নামিয়ে রফতানিকারকের হেফাজতে রাখার অনুমতি দেয়।

আদালতের এই আদেশকে অপব্যবহার করে জে কে শিপিং গম রফতানিকারকের অনুমতি না নিয়ে গুদামজাত করে। কিছুদিন পর গোপনে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন গম প্রতারণা ও জালিয়াতি করে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় জে কে শিপিং। কিন্তু খাতা কলমে দেখানো হয় এই গম চট্টগ্রাম মালেক মাঝির গুদামে রক্ষিত আছে। অথচ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল এই গম স্থান পরিবর্তন বা বিক্রি করা যাবে না।

এই জটিলতার খবর পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে M/S Samjin cs & t co. ltd এর প্রেসিডেন্ট Mr. Hco man Woog গত বছরের ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম আসেন। তিনি মালেক মাঝির গুদামে রক্ষিত গমের প্রকৃত অবস্থার সন্ধানে গেলে শিপিং এজেন্ট অসহযোগিতা করেন ও তাকে জীবননাশের হুমকি দেন। এই হুমকির পর রফতানিকারক Hco man Woog চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় জে কে শিপিং লাইনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ২০১৫ সালের ১১ মার্চে করা ৪৯৭ নম্বর জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, এই গম বাংলাদেশ সরকারের ফুড ডিপার্টমেন্টে সরবরাহ করার জন্য আনা হয়েছিল।

বিদেশি নাগরিক হয়রানি ও ৩৩ হাজার টন গমের নিরাপত্তা বিধান সংক্রান্ত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) স্মারক নং ৫৬৩/সা. তাং ২৭/০৫/২০১৫ তারিখে পত্রের তদন্ত শেষে সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিদর্শক আসাদ করিম চৌধুরী ২০১৫ সালের ২০ জুলাই পুলিশ সুপারকে এই ৩৩ হাজার টন গমের সরেজমিন তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।

তিনি তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেন, সরেজমিনে চট্টগ্রামের সদরঘাটস্থ মালেক মাঝির ৫ নং গোডাউনে ৩৩ হাজার মেট্রিকটন গমের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। এই সমুদয় গম মালেক মাঝি ঢাকাস্থ রোকেয়া ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিকে বিভিন্ন তারিখে ডেলিভারি করেন। এই ৩৩ হাজার মেট্রিকটন গমের বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা।

এদিকে খুলনার হাজী শেখ আশরাফ আলী এন্ড সন্স লি. এর ম্যানেজিং পার্টনার শেখ আজিজুল ইসলাম জানান, আদালতের নির্দেশে তার পাওনা আদায়ের জন্য ৩৩ হাজার টন গম থেকে ৭ হাজার টন গম বিক্রির নির্দেশনা পেয়ে তিনি মালেক মাঝির গোডাউনে গিয়ে কোন গম পাননি। তিনি গম আত্মসাত করার অভিযোগ এনে জে কে শিপিংয়ের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. কামরুল ইসলাম, তার পার্টনার আখতারুজ্জামান খান মামুন, সাইফুল ইসলাম এবং মালেক মাঝিসহ মোট ৫ জনের নামে বন্দর থানায় গত বছরের ৩১ মে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তখন দুদকের তত্ত্বাবধানে ছিল।

রোকেয়া অটোমেটিক ফ্লাওয়ার মিলের মালিক সাইফুল ইসলাম এই মামলায় চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন গত ৫ অক্টোবর। কিন্তু পুলিশের তীব্র বিরোধিতার ফলে মুখ্য মহানগর হাকিম চট্টগাম তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে আরও ৩ দফা জামিনের আবেদন করলে আদালত সেই আবেদনগুলোও নামঞ্জুর করেন । আদালত একই সাথে রিমান্ডের আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

বিষয়টি নিয়ে চলতি বছর ১০ জুলাই দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মামলার তদন্তের দায়িত্ব জুলাই মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর থানাকে দেওয়া হয়।

সাইফুল ইসলামের গ্রেফতারের খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার গম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের এক্সক্লুসিভ এজেন্ট এবং মামলার বাদী খুলনার শেখ আশরাফ আলী সন্স লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখ আজিজুল হকের সাথে যোগাযোগ করে।

গম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার জেভি ইয়াং ও জং চিয়ন কিম গত ১৮ অক্টোবর ঢাকায় লা মেরিডিয়ান হোটেলে শেখ আজিজুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মিডিয়ার দুর্নীতি বিরোধী ভূমিকা দেখে প্রসংশা করেন এবং তারা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের মিডিয়ার ভূমিকা দেখে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে এদেশে তারা সুবিচার পাবেন, ফেরত পাবেন তাদের ৩৩ হাজার টন গমের মূল্য । তারা দূতাবাসের মাধমে বাংলাদেশ সরকার এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন। তবে এই সময় উচ্চ আদালত বন্ধ থাকায় গত ২১ অক্টোবর রাতে দেশে ফিরে গেছেন তারা। যাওয়ার আগে তারা জানিয়ে গেছেন, মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।

মামলার বাদী শেখ আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম হওয়ায় এবং মামলার বাদী ও বেশির ভাগ আসামি খুলনার হওয়ায় মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে প্রদান করা হয়েছে। সিআইডির পরিদর্শক লিটন হালদার মামলাটি তদন্ত করবেন।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এনআই/অক্টোবর ২৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর