কবি শামসুর রাহমানের ৮৮তম জন্মদিন উদযাপিত

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : শামসুর রাহমানের কবিতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলে দেখা যাবে তিনি নিজেকে কত পরিবর্তন করেছিলেন। তার কবিতায় প্রথম দিকে ত্রিশের কবিতার আবহ ছিল। কিন্তু ক্রমেই তিনি তার মৌলিক কবিতার সুর প্রতিষ্ঠা করে বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। শামসুর রাহমানের ৮৮তম জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার (২৩ অক্টোবর) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এভাবেই প্রয়াত কবিকে মূল্যায়ন করেছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

শামসুর রাহমানের স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান পর্বে জারি হওয়া সামরিক শাসন যখন বাঙালির মৌলিক অধিকার হরণ করতে শুরু করে তখন তিনি কবিতার অক্ষরে বাঙালির নিজস্বতার কথা বাঙময় করে তোলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ থেকে ভিয়েতনামের যুদ্ধ পর্যন্ত তার কবিতার বিষয়বস্তু হয়েছে অবলীলায়। মানুষের শুভ ও কল্যাণের কথা কবিতায় কী করে উচ্চারণ করতে হয় শামসুর রাহমানের কবিতা তার উদাহরণ হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।’

বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল কবিকে নিবেদিত কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদ।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমি ও শামসুর রাহমান স্মৃতিপরিষদের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। শামসুর রাহমানের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘শামসুর রাহমানের বেড়ে ওঠার ইতিহাস আমাদের কবিতার অগ্রযাত্রারও ইতিহাস। কারণ, রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে এ দেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হলেও তাঁর কবিতাই আমাদের প্রকৃত ইতিহাসের বিশ্বস্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পর্যন্ত আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি বিন্দুকে স্পর্শ করে গেছেন। কবিতার সঙ্গে জনবিচ্ছিন্নতার অপবাদ শামসুর রাহমান একেবারেই ঘুচিয়ে দিয়ে গেছেন, স্বপ্নচারিতার সমান্তরালে তাঁর পা প্রোথিত ছিল বাংলার পবিত্র মৃত্তিকায়। এজন্য শামসুর রাহমান যেমন বারবার আমাদের স্মরণে আসবেন তেমনি থাকবেন আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন ও সংগ্রামে।’

অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আবৃত্তিতে আরও অংশ নেন লায়লা আফরোজ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং তামান্না সারোয়ার নীপা। শামসুর রাহমানকে নিবেদিত কবিতাপাঠে অংশ নেন কবি কাজী রোজী, সাযযাদ কাদির, রবীন্দ্র গোপ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বদরুল হায়দার, পিয়াস মজিদ প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশ করেন শারমিন সাথী ইসলাম ও সুমা রায়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/জেডটি/এনআই/অক্টোবর ২৩,২০১৬)