thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করছে ৪৩ সাধারণ বীমা কোম্পানি

২০১৬ অক্টোবর ২৫ ২০:৩৮:৫৩
মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করছে ৪৩ সাধারণ বীমা কোম্পানি

বীমা কোম্পানিগুলোর অননুমোদিত ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোও বছরের পর বছর ধরে ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করছে।

এ খাতে গত ৭ বছরে দেশে ব্যবসা করা ৪৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

তবে এশিয়া প্যাসেফিক জেনারেল এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) ব্যয় আইনি সীমার মধ্যেই রয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা খাতে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।

এই তালিকায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের চিত্র -

কোম্পানি

মোট ব্যয়

অনুমোদিত ব্যয়

অতিরিক্ত ব্যয়

গ্রিন ডেল্টা

৬৬১ কোটি

৫০৫ কোটি

১৫৬ কোটি

ফিনিক্স

১৭৫ কোটি

৬৫ কোটি

১১০ কোটি

প্রগতি

২১১ কোটি

১২৯ কোটি

৮২ কোটি

বিজিআইসি

১৯৪ কোটি

১১৭ কোটি

৭৭ কোটি

ফেডারেল

১৪৩ কোটি

৭৭ কোটি

৬৬ কোটি

ইস্টল্যান্ড

১৮৬ কোটি

১৩২ কোটি

৫৪ কোটি

ইসলামী ইনস্যুরেন্স

৮৮ কোটি

৩৬ কোটি

৫২ কোটি

রিপাবলিক

১২৬ কোটি

৭৫ কোটি

৫১ কোটি

পিপলস

১৫১ কোটি

১০১ কোটি

৫০ কোটি

ইউনিয়ন

৭৯ কোটি

৩১ কোটি

৪৮ কোটি

শেফাক আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘একটি সাধারণ বীমা কোম্পানি তার আয়ের সব অর্থই ব্যয় করতে পারবে না। আয়ের কত অংশ ব্যয় করা যাবে, তা আইন দ্বারা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা খাতে আইনি সীমার অতিরিক্ত অর্থ খরচ করলে কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা কমে যায় এবং শেয়ারহোল্ডাররা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোম্পানিগুলো কী কারণে ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। এজন্য পর্যায়ক্রয়ে সব কটি কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে নিরীক্ষক নিয়োগ করা হবে ৬টি কোম্পানিতে। শিগগির এ ৬টি কোম্পানি চূড়ান্ত করা হবে।’

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইন মেনে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪৫টি বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করলে সর্বোচ্চ ব্যয় হতো ৩ হাজার ৭২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

কিন্তু কোম্পানিগুলো এ সময়ে ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিগুলো সম্মেলিতভাবে আইনি সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে দুটি কোম্পানির ব্যয় আইনি সীমার থেকেও কম। এ দুটি বাদে বাকি ৪৩টি কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয় করেছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত ব্যয়ে ১১-২০ তম স্থানে থাকা কোম্পানিগুলোর চিত্র:

কোম্পানি

মোট ব্যয়

অনুমোদিত ব্যয়

অতিরিক্ত ব্যয়

মেঘনা

১০৮ কোটি

৬১ কোটি

৪৭ কোটি

নর্দান জেনারেল

৮৭ কোটি

৪২ কোটি

৪৫ কোটি

এক্সপ্রেস

৮৫ কোটি

৪১ কোটি

৪৪ কোটি

নিটল

১৩৩ কোটি

৯২ কোটি

৪১ কোটি

তাকাফুল ইসলামী

১০২ কোটি

৬১ কোটি

৪১ কোটি

ইউনাইটেড

১০৪ কোটি

৬৫ কোটি

৩৯ কোটি

কর্ণফুলী

৯৭ কোটি

৬০ কোটি

৩৭ কোটি

কন্টিনেন্টাল

৮৮ কোটি

৫৪ কোটি

৩৪ কোটি

বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ

৪৩ কোটি

১০ কোটি

৩৩ কোটি

রিলায়েন্স

১৯৯ কোটি

১৬৯ কোটি

৩০ কোটি

আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করায় কোম্পানিগুলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে আইডিআরএ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রতিবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেও পাঠিয়েছে আইডিআরএ।

সাধারণ বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো আইডিআরএ’র চিঠিতে জানানো হয়েছে, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বীমা আইন ২০১০-এর ৬৩ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৯৫৮ সালের বীমা বিধির ৪৩ ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা খাতে আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করায় কোম্পানির আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শেয়ারহোল্ডাররা। তারা তাদের প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন। পাশাপাশি গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধেও কোম্পানির সক্ষমতা কমে যেতে পারে।

অতিরিক্ত ব্যয়ে ২১-৩০তম স্থানে থাকা কোম্পানিগুলোর চিত্র:

কোম্পানি

মোট ব্যয়

অনুমোদিত ব্যয়

অতিরিক্ত ব্যয়

সিটি জেনারেল

৮১ কোটি

৫২ কোটি

২৯ কোটি

ঢাকা

৫৫ কোটি

২৭ কোটি

২৮ কোটি

এশিয়া

১০১ কোটি

৭৪ কোটি

২৭ কোটি

প্রাইম

১১৪ কোটি

৯০ কোটি

২৪ কোটি

জনতা

৬৮ কোটি

৪৯ কোটি

১৯ কোটি

ক্রিস্টাল

৮২ কোটি

৬৪ কোটি

১৮ কোটি

গ্লোবাল

৭২ কোটি

৫৪ কোটি

১৮ কোটি

পাইওনিয়ার

৩৭৬ কোটি

৩৬০ কোটি

১৬ কোটি

সোনার বাংলা

৫১ কোটি

৩৫ কোটি

১৬ কোটি

সেন্ট্রাল

৭০ কোটি

৫৪ কোটি

১৬ কোটি

১৯৫৮ সালের বীমাবিধির ৪০ উপধারা ১(ii)-এ সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো মোট প্রিমিয়াম আয়ের মধ্যে মেরিন ইনস্যুরেন্সের ক্ষেত্রে প্রথম এক কোটিতে ১৮ শতাংশ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এক কোটিতে ১৫ শতাংশ, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ এক কোটিতে ১৩ শতাংশ, এর পরের এক কোটি পঁচিশ লাখে ১১ শতাংশ এবং এর পরবর্তী মোট প্রিমিয়ামের জন্য ১০ শতাংশ হারে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারবে।

এ ছাড়া ফায়ার ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রথম এক কোটিতে ৩০ শতাংশ, দ্বিতীয় এক কোটিতে ২৫ শতাংশ, তৃতীয় ও চতুর্থ এক কোটিতে ২৪ শতাংশ, পঞ্চম এক কোটিতে ২৩ শতাংশ, ষষ্ঠ এক কোটিতে ২২ শতাংশ, এর পরের এক কোটি পঁচিশ লাখে ১৮ শতাংশ এবং এর পরবর্তী মোট প্রিমিয়ামের জন্য ১৬ শতাংশ হারে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে পারবে।

অতিরিক্ত ব্যয়ে নীচের দিকে থাকা কোম্পানিগুলোর চিত্র:

কোম্পানি

মোট ব্যয়

অনুমোদিত ব্যয়

অতিরিক্ত ব্যয়

শিকদার

৩৩ কোটি

২০ কোটি

১৩ কোটি

বাংলাদেশ ন্যাশনাল

৩৯ কোটি

২৫ কোটি

১৪ কোটি

ইসলামী কমার্শিয়াল

৩৯ কোটি

২৬ কোটি

১৩ কোটি

দেশ জেনারেল

২৮ কোটি

১৬ কোটি

১২ কোটি

সাউথ এশিয়া

২১ কোটি

৯ কোটি

১২ কোটি

রূপালী

৯০ কোটি

৭৯ কোটি

১১ কোটি

পূরবী জেনারেল

১৭ কোটি

৮ কোটি

৯ কোটি

ইস্টার্ন

৪৭ কোটি

৩৯ কোটি

৮ কোটি

প্রভাতী

৭৭ কোটি

৭১ কোটি

৬ কোটি

প্যারামাউন্ট

৩৪ কোটি

২৯ কোটি

৫ কোটি

সেনা কল্যাণ

১৬ কোটি

১৩ কোটি

৩ কোটি

মার্কেন্টাইল

৫৬ কোটি

৫৩ কোটি

৩ কোটি

অগ্রণী

৭০ কোটি

৬৯ কোটি

১ কোটি

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘জীবন বীমা কোম্পানির মতো সাধারণ বীমা কোম্পানির টাকা গ্রাহকের টাকা নয়। তবে কোনো সাধারণ বীমা কোম্পানি অতিরিক্ত খরচ করলে এর শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে দুটি কোম্পানি আইনি সীমার মধ্যে খরচ করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আর বাকিরা কেন আইনি সীমার বেশি খরচ করেছে, এটি খতিয়ে দেখতে হবে। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারিত হয় ১৯৫৮ সালের বীমাবিধি দ্বারা। এই আইনটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা যুক্তিসংগত তা-ও বিবেচনার যোগ্য।’

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/এস/এম/জেডটি/অক্টোবর ২৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর