thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থা’

২০১৬ অক্টোবর ২৬ ২১:৫১:০১
‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থা’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কনফারেন্স হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে ফজলে কবির বলেন, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম হচ্ছে। এ কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থানে থাকবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর ফল ভোগ করতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ প্রায় ৮ শতাংশ যা মোটেই সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা বিদ্যমান নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন-বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিশেষ করে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ঋণ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে অনিয়ম, শ্রেণিকৃত ঋণকে অশ্রেণিকৃতঋণ হিসেবে দেখানোসহ বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমনকি এসব অনিয়মের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালকেদর সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে তা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। মাত্রাতিরিক্ত অনিয়মের কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাজারে ধার্যকৃত সুদহারের চেয়ে অযৌক্তিকভাবে বেশি সুদ আরোপ করবেন না। মনে রাখবেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদহার তহবিল ব্যয়ের ৫ শতাংশের বেশি হওয়া সমীচীন নয়।

বিনিয়োগ সম্পর্কে গভর্নর বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ শিল্পখাতে ৪৩ শতাংশ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৮ শতাংশ ও হাউজিংয়ে ১৭ শতাংশ। কিন্তু কৃষিতে দুই শতাংশেরও কম। তাই এ খাতে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাসেল নীতিমালা অনুযায়ী কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম আবশ্যকীয় মূলধন তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের নিচে। শীঘ্রই এই মূলধন ১০ শতাংশের উপরে উন্নীত করতে হবে।

বৈঠক শেষে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এসব খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ারের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ নেওয়ার বিধান রয়েছে। কেউ যেন তথ্য গোপন করে এর চেয়ে বেশি ঋণ নিতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের কারণে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেন অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে রেড জোনে বা বেশি ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়।

এ সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে ফটকাবাজি না করে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকের মতো আচরণ না করে বরং ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-বিএলএফসিএ’র চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন সরকার বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর ডিপোজিটের ২ শতাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়টি বীমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইডিআইরএকে জানানো হবে বলে গভর্নর আশ্বাস দিয়েছেন।

এছাড়া বন্ড মার্কেটে পুনরায় কর অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে, যদিও এটি এনবিআরের উপর নির্ভর করে। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গুড গভর্ন্যান্স বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার বিষয়টি স্বীকার করে মফিজউদ্দিন সরকার বলেন, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক আমরা উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া বর্তমানে বিদ্যমান সার্ভিস চার্জ বা প্রসেসিং ফি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ করার আবেদন করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/এপি/এনআই/অক্টোবর ২৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর