thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

এসএম সোলায়মান প্রণোদনা পাচ্ছেন রামিজ রাজু

২০১৬ অক্টোবর ২৭ ১৫:৫২:২২
এসএম সোলায়মান প্রণোদনা পাচ্ছেন রামিজ রাজু

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রবর্তিত ‘এসএম সোলায়মান প্রণোদনা- ২০১৬’ পাচ্ছেন তরুণ নাট্যশিল্পী রামিজ রাজু। রাজধানী সেগুনবাগিচার জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় থিয়েটার আর্ট ইউনিট আয়োজন করছে এসএম সোলায়মান প্রণোদনা ও স্বারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান।

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। স্বারক বক্তৃতা প্রদান করবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত নাট্য গবেষক ড. আশিস গোস্বামী। আলোচক হিসেবে থাকবেন নাট্যজন শিশির দত্ত ও অনন্ত হিরা। অনুষ্ঠানে এসএম সোলায়মান রচিত ও সুরারোপিত গান পরিবেশন করবে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের শিল্পীরা।

প্রয়াত এসএম সোলায়মান স্মরণে ২০০৫ সাল থেকে থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রতি বছর তরুণ মেধাবী নাট্যশিল্পী অথবা নাট্য সংগঠনকে এই প্রণোদনা প্রদান শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রণোদনা গ্রহণ করেছেন আমিনুর রহমান মুকুল, সাইদুর রহমান লিপন, শাহাদাত হোসেন, আনোয়ারুল হক, কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, ত্রপা মজুমদার, সুদীপ চক্রবর্তী, সামিনা লুৎফা নিত্রা এবং পাবনা চাঁটমোহরের সমন্বয় থিয়েটার, মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের মণিপুরি থিয়েটার।

এক নজরে এসএম সোলায়মান

এসএম সোলায়মান ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামের ডিগবয় শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আছিয়া খাতুন ও বাবা আহমেদ মিয়া। আদি নিবাস বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হলেও আহমেদ মিয়ার ব্যবসা সূত্রে আসামে থাকতেন তারা। ১৯৫৮ সালে পরিবারটি পাকিস্তানে ফিরে চট্টগ্রামের চন্দনপুরায় স্থায়ী হয়। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ সোলায়মানের শৈশব-কৈশোর কাটে চট্টগ্রামেই। এসএম সোলায়মান চট্টগ্রাম কলেজের পাঠ শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এবং ১৯৭৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। চট্টগ্রামে ছাত্রাবস্থায় তিনি শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হন। বিশেষ করে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিতি পান। চট্টগ্রাম বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সোলায়মান নাট্যচর্চায় যুক্ত হন এবং বাংলাদেশের নবনাট্য আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।

তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের দুই দফা সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এসএম সোলায়মানের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কালান্তর, পদাতিক নাট্য সংসদ, ঢাকা পদাতিক, অন্যদল ও থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ত্রিশটিরও বেশি নাটক রচনা, রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সোলায়মান রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘আমিনা সুন্দরী’ আমেরিকার অফ ব্রডওয়েতে মঞ্চস্থ প্রথম বাংলা নাটক হাওয়ার গৌরব অর্জন করে।

এসএম সোলায়মান বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত নাট্যকার ও নাট্যশিল্পী ছিলেন। ২৫টির বেশি টেলিভিশন নাটক রচনা করেছেন তিনি। নির্মাণ করেছেন অসংখ্য ভিডিওচিত্র, ডকুমেন্টারি ও টিভি নাটক। প্রকাশিত হয়েছে তার রচিত ও সুরারোপিত কয়েকটি মিউজিক ভিডিও অ্যালবাম, গান ও গীতিনাট্যের ক্যাসেট। তবে তার রচিত ও সুরারোপিত অধিকাংশ গান এখনো অপ্রকাশিত।

ওয়ার্ল্ড ভিউ, সিডা ও নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের সহযোগিতায় তিনি নির্মাণ করেন বেশ কয়েকটি ভিডিওচিত্র। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অডিও-ভিডিও নির্মাতা হিসেবে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে সোলায়মান তার দল ও নাটক নিয়ে ভারত ভ্রমণ করেন।

১৯৯৩ সাল থেকে এসএম সোলায়মান নাটকের দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন আমেরিকা। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকবার নিউইয়র্ক যান। সেখানে প্রবাসী বাঙালীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা’র প্রযোজনায় সাতটি নাটক মঞ্চায়ন করেন।

সঙ্গীত ও কোরিওগ্রাফির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে এসএম সোলায়মান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নবনাট্যধারায় নির্মাণ করেন এক নতুন আঙ্গিক। মঞ্চনাটকে অসামান্য অবদানের জন্য রংপুর পদাতিক সম্মাননা (১৯৮৮), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা সম্মাননা (১৯৯৪), বাংলাদেশ থিয়েটার অব আমেরিকা সম্মাননা (১৯৯৫), বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (১৯৯৬), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব লস এঞ্জেলেস সম্মাননা (১৯৯৬), সুবচন নাট্য সংসদ (১৯৯৬), চট্টগ্রাম এ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা সম্মাননা (১৯৯৭), থিয়েটার আর্ট ইউনিট সম্মাননা (১৯৯৮), মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় সম্মাননা (২০০০), আরণ্যক নাট্যদলে ‘দীপু স্মৃতি পদক’ (মরণোত্তর-২০০১), ঢাকা পদাতিকের ‘আবুল কাশেম দুলাল স্মৃতি পদক’ (মরণোত্তর- ২০০২) এবং নাট্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) পান তিনি।

এসএম সোলায়মান ১৯৮৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী রোকেয়া রফিক বেবী অভিনেত্রী ও নির্দেশক হিসেবে পরিচিত মুখ। এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে নাট্যকার-নির্দেশক-অভিনেত্রী আনিকা মাহিন একা। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এসএম সোলায়মান মারা যান।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এফএস/অক্টোবর ২৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর