thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

মূল্যসূচকে নতুন কোম্পানির নেতিবাচক প্রভাব

২০১৬ নভেম্বর ০১ ২০:৩১:৩৭
মূল্যসূচকে নতুন কোম্পানির নেতিবাচক প্রভাব

সাঈদ শিপন ও রেজোয়ান আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : আকর্ষণীয় আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে শেয়ারবাজার থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ তুলছে নতুন নতুন কোম্পানি। তবে এসব কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্তির পরেই তাদের আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে গিয়ে বাজারের মানদণ্ড নির্ধারক মূল্যসূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে নতুন তালিকাভূক্ত হওয়া ৪৭ শতাংশ কোম্পানিই মূল্যসূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচকে চলতি বছরে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর ওপর এ পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন জানান, একটি কোম্পানি ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পরে যদি শেয়ারের দাম কমে যায়, তাহলে ওই কোম্পানি সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঠিক একইভাবে শেয়ারের দাম বাড়লে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি যে দাম নিয়ে অন্তর্ভূক্ত হয়, সে তুলনায় কমেছে নাকি বেড়েছে তা বিবেচনায় আসবে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে নতুন তালিকাভূক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫টি চলতি বছরে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৪ জানুয়ারি ১৩টি কোম্পানি এবং ২৪ জুলাই ও ২৩ অক্টোবর একটি করে কোম্পানি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

এই ১৫টি কোম্পানির মধ্যে ৭টি বা ৪৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অন্তর্ভূক্তিকালীন সময়ের তুলনায় নিচে নেমে এসেছে। যা ডিএসইএক্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দাম রয়েছে অন্তর্ভুক্তকালীন সময়ের কাছাকাছি।

চলতি বছরে মূল্যসূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন কোম্পানিগুলো হলো- ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, সি এ্যান্ড এ টেক্সটাইল, কেডিএস এক্সেসরিজ, আমান ফিড, রেকিট বেনকাইজার, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, জাহিন স্পিনিং, হামিদ ফেব্রিকস, ন্যাশনাল ফিড, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, নর্দার্ন জুট, স্টান্ডার্ড সিরামিকস, ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিষ্টেমস ও একমি ল্যাবরেটরিজ।

ডিএসইএক্সে অন্তর্ভূক্তির সময় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ারের দাম ছিল ২৫.৪ টাকা। রবিবার (৩০ অক্টোবর) লেনদেন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ২৩.৯০ টাকা। সূচকে অন্তর্ভূক্তির সময় সি এ্যান্ড এ টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম ছিল ১২.২ টাকা। বর্তমানে তা কমে ৭.৩ টাকায় নেমে এসেছে।

এ ছাড়া সূচকে অন্তর্ভূক্তিকালীন সময়ে যে দাম ছিল তার থেকে নিচে নেমে যাওয়া কোম্পানির তালিকায় রয়েছে- খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, জাহিন স্পিনিং, ন্যাশনাল ফিড, কেডিএস এক্সেসরিজ এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।

এর মধ্যে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার ২১.৪ টাকা থেকে কমে ১৭.১ টাকায়, জাহিন স্পিনিং ২১.৭ টাকা থেকে কমে ১৫ টাকায়, ন্যাশনাল ফিড ২০.৯ টাকা থেকে কমে ১৬.৬ টাকায়, কেডিএস এক্সেসরিজ ৭৪.৭ টাকা থেকে কমে ৬৮.২ টাকায় এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন ১৬০.২ টাকা থেকে কমে ১৪১.৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে, অন্তর্ভূক্তিকালীন সময়ের থেকে দাম বেশি থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে হামিদ ফেব্রিকসের শেয়ার মূল্য ২০.৮ টাকা থেকে বেড়ে ২১.৯ টাকায়, আমান ফিড ৪৩.১ টাকা থেকে ৭৯.২ টাকা, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের ১৯.৩ টাকা থেকে ২০.৩ টাকা, ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিষ্টেমসের ৬১.৫ টাকা থেকে ১২৩.৭ টাকা এবং একমি ল্যাবরেটরিজের ৯৭.৫ টাকা থেকে ৯৮.৭ টাকায় উঠে এসেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসইর মূল্যসূচক গণনা করা হয় ফ্রি ফ্লট ভিত্তিতে। একটি কোম্পানির যে পরিমাণ শেয়ার বাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হয় তাই ফ্রি ফ্লট। অর্থাৎ স্পন্সর, পরিচালক, প্লেসমেন্ট, ক্রস হোল্ডিং (একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা শেয়ার), স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারী শেয়ার বা অন্য কোনোভাবে লকিং থাকা শেয়ার সূচক গণনায় বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

তারা বলছেন, যেহেতু সূচক গণনা করা হয় ফ্রি ফ্লট ভিত্তিতে তাই একটি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন যত বেশিই হোক ওই কোম্পানির শেয়ারের মূল্যের ভিত্তিতে সূচকে বড় ধরণের উত্থান-পতন হয় না। তবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন যাই হোক এর শেয়ারের দাম কমা অথবা বাড়ার ওপর সূচকে কিছু না কিছু প্রভাব পড়বেই।

তাদের মতে, শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্তির আবেদনের সময় কোম্পানিগুলো আকর্ষনীয় আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করছে। কিন্তু তালিকাভূক্তির পরেই তাদের আর্থিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, কোম্পানিগুলো প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনের সময় সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে কীনা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যদি ২০১৬ সালে সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েই ৪৭ শতাংশ কোম্পানি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটা শেয়ারবাজারের জন্য দুঃখজনক। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। একইসঙ্গে আইপিও অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, তালিকাভূক্তির পর যদি কোনো কোম্পানির গ্রোথ, আয়, রিজার্ভ কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ওই কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার জন্য আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়েছে। এমন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের জন্য ক্ষতিকর। যেসব কোম্পানির গ্রোথ ভালো না তাদের বাজারে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক রিসার্চ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, সূচকে অন্তর্ভুক্ত যে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেই সূচকে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া অধিকাংশ কোম্পানিই সূচকে নেতিবচক প্রভাব ফেলছে। এতে কোম্পানিগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।

তিনি আরো বলেন, শেয়ারবাজারের নতুন নতুন কোম্পানি আনতে হবে। তবে ভালো কোম্পানির বদলে খারাপ কোম্পানিকে বাজার থেকে টাকা তোলার সুযোগ দিলে তা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইপিও অনুমোদন দেওয়ার সময় সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/আরএ/জেডটি/নভেম্বর ১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর