thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

এসপিএম’র শেয়ার কেলেঙ্কারী

সাজাপ্রাপ্ত ২ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু

২০১৬ নভেম্বর ১৩ ১৬:৩৮:০৭
সাজাপ্রাপ্ত ২ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ২ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) ইস্যু করেছে পুঁজিবাজার মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। রবিবার (১৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ এ ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।

আসামিরা হলেন—সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’র চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমান। তবে মামলার শুরু থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন।

এর আগে চলতি বছরের ২০ এপ্রিল প্রত্যেককে ২ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর রায় ঘোষণা করেন।

বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ রানা খান এর দরখাস্তের আলোকে আজকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। রমনা থানার ওসি ও নোয়াখালীর এসপি বরাবর এ ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

আসামীদের বর্তমান ঠিকানা রমনা থানার মগবাজারে সেঞ্চুরি টাওয়ারে ও স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর নিশ্চিন্তপুরে।

বিএসইসি’র আইনজীবী মাসুদ রানা খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, এসপিএম এর শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় চলতি বছরের ২০ এপ্রিল রায় ঘোষণা হলেও আসামীরা আত্মসমর্পন করেননি। কিন্তু তারা ঢাকা শহরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই তাদেরকে আটকে রবিবার আবেদন করা হলে আদালত পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন।

এর আগে অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন বলে ট্রাইবুন্যালে প্রমাণিত হয় বলে জানায় বিচারক। তদন্ত কমিটির তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারা লঙ্ঘন করেছেন। যা একই অধ্যাদেশের ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য। যাতে আসামীদের শাস্তি দিয়ে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।

সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০০৪ সালে বিএসইসির তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ আলী খান ও পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে বিএসইসির পক্ষে মামলা দায়ের করেন।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানের অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে কমিশন ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরী। খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুর পর তার স্থলে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির তদন্তে কাশেম সিল্ক মিলসের শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে। ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে ২০ লাখ শেয়ারের কোম্পানিটির ১ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টি ১৬.১৪ শতাংশ বেশি দরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। এই লেনদেন ও দর বৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক।

১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে এসপিএম কাশেম সিল্কের ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ক্রয় ও ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রয় করে। যা কাশেম সিল্কের ওইদিনের শেয়ার লেনদেনের ৩৬.৪৬ শতাংশ ও ৩৫.৩০ শতাংশ।

তদন্ত কমিটি দেখতে পায় মো. মহিবুর রহমান ২৪.২৭ টাকা দরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন ও ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। তিনি দুপুর ১২টা থেকে ১.৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে টানা ২২ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করেন। এরপরে ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আরও ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন। তিনি ২১.৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ ২৫.৯০ টাকা দরে শেয়ার ক্রয় করেন।

এতে একই দিনে নিষ্পত্তি ব্যর্থতা এড়াতে বিক্রেতারা সৈয়দ মহিবুর রহমানের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে মহিবুর রহমান ডিকটেটেড মূল্য ২৬ টাকা করে বিক্রয় শুরু করেন। এবং ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। এর মাধ্যমে মহিবুর রহমান ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৯ টাকা ও বাকি থাকা ৯২ হাজার ৩০০ শেয়ার মুনাফা করেন।

মহিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করেন। যা প্রকৃতপক্ষে শেলী রহমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তার স্বামী লুৎফর রহমান চেকের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন। যা ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহার করা হয় না। মহিবুর রহমান এই শেয়ার ক্রয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকার রেমিটেন্স ব্যবহার করেন। এখান থেকে তদন্ত কমিটি বুঝতে পারে যে, ডিপোজিটকৃত টাকা অর্থায়ন করেন শেলী রহমান।

মহিবুর রহমান ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকা অর্থায়ন করে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। যা ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় জালিয়াতি। এক্ষেত্রে এসপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও মহিবুর রহমান যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন বলে তদন্তে বলা হয়।

বিএসইসির এ তদন্তের প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারা লঙ্ঘনে ২৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/নভেম্বর ২০১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর