thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

 ‘গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩’ পাস

সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণ ব্যাংক

২০১৩ নভেম্বর ০৫ ২১:৩৫:২৩
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণ ব্যাংক

দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার বহুল আলোচিত ‘গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। ফলে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি।

বিলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনে এটির নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া সরকার কর্তৃক চেয়ারম্যান নিয়োগ এবং ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ারও বিধান রাখা হয়েছে।

বিরোধী দলহীন সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, বিলটির সঙ্গে ৮২ লাখ ঋণগ্রহীতার স্বার্থ জড়িত। আন্তর্জাতিক মহলে আইনটি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। যেহেতু অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, আইনটি কেউ জানেন না তাই বিলের উপর জনমত যাচাই করা জরুরি।

জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ৮২ লাখ নয় ৫৩ লাখ ঋণগ্রহীতা এ ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার আছেন। আর বিলের মূল কাঠামোতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগেও ৭৫ শতাংশ শেয়ার ঋণগ্রহীতাদের হাতে ছিল, এখনও তাই আছে। পরিশোধিত মূলধন যা ছিল তাও অপরিবর্তীত আছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ দিয়ে চলছে। এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাই বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ে প্রয়োজন নেই। পরে কণ্ঠভোটে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব নাকচ এবং বিলটি পাস হয়।

অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৮৩ সালের সামরিক শাসনামলে জারিকৃত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ২০১২ সালে সংশোধন করা হয়।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারিকৃত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ অধীনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক নতুন আইনে এমনভাবে বহাল থাকবে, যেন তা এ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি এখন থেকে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ দ্বারা পরিচালিত হবে। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি সংক্রান্ত বলবৎ অন্য যে কোন আইনের বিধানসমূহও এখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

বিলের ৬ ধারা অনুযায়ী, ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করার পাশাপাশি বলা হয়েছে, ব্যাংক উহার অনুমোদিত মূলধন সরকারে পূর্বানুমতিক্রমে সময় সময় বৃদ্ধি করতে পারবে।

আর ধারা-৭ এ পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করে সরকারের জন্য ২৫ ভাগ এবং ৭৫ ভাগ শেয়ার হোল্ডারদের (ঋণগ্রহীতা) জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিলের ধারা ৮ (২) এ বলা হয়েছে, ব্যাংক উহার কার্যাদি সম্পাদনে জনস্বার্থের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে; তবে শর্ত থাকে যে, সরকারের সহিত পরামর্শক্রমে ব্যাংক সকল নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

ধারা-৯ এ বোর্ড গঠনে পরিচালকের সংখ্যার ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘সরকার কর্তৃক নিযুক্ত তিনজন ব্যক্তি ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহীতা-শেয়ার হোল্ডারগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়জন ব্যক্তির সমন্বয়ে বোর্ড গঠিত হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদাধিকার বলে বোর্ডের পরিচালক হবে কিন্তু তার কোন ভোটাধিকার থাকবে না।

ধারা-৯ (১) এ চেয়ারম্যান নিয়োগের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন, যিনি সরকার নিযুক্ত পরিচালকগণের মধ্য হতে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।

ধারা ১১(১) এ পরিচালকদের মেয়াদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, নির্বাচিত পরিচালকদের কার্যকাল হবে প্রতি মেয়াদে সর্বোচ্চ তিন বছর।

উপ-ধারা (২) এ বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক নিযুক্ত পরিচালকগণ তাদের নিজ নিজ পদে সরকারের সন্তুষ্টি অনুযায়ী প্রতি মেয়াদে সর্বোচ্চ তিন বছর বহাল থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যাংক-কোম্পানির এমডি বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, অন্য কোন পরিচালক একাধিক ক্রমে দুই মেয়াদের অধিক ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

উপ-ধারা (৩) এ বলা হয়েছে, উপ-ধারা (১) অনুসারে কোন পরিচালক একাধিক্রমে দুই মেয়াদে পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবার তারিখ হতে পরবর্তী তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যাংকের পরিচালক পদে পুন:নির্বাচিত হইবার যোগ্য হবেন না।

ধারা-১৪ এ এমডি নিয়োগের ব্যাপারে বলা হয়েছে, (১) ব্যাংকের একজন এমডি থাকবেন যিনি উপধারা (২) (৩) এর বিধান অনুসারে বাছাইকৃত কমিটির সুপারিশকৃত তিনজন প্রার্থীর প্যানেল হতে বোর্ড কর্তৃক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুর্বানুমোদনক্রমে নিযুক্ত হবেন।

(২) এমডি নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান, বোর্ডের সহিত পরামর্শক্রমে অনুন্য তিনজন এবং অনধিক পাঁচজন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করিবেন।

(৩) এমডি নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটি তিনজন প্রার্থীর একটি প্যানেল সুপারিশ করবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি, অর্থনীতি বা ক্ষুদ্র অর্থায়নের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিগণকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী, ‘এমডি ব্যাংকের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী হবেন এবং তিনি বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য শর্তাধীনে অনধিক ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরীতে বহাল থাকবেন। (৫) এ বলা হয়েছে, এমডির পদশূন্য হলে নতুন এমডি কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে, বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করবেন।

ধারা-১৬ (২) এ বোর্ডের সভার কোরামের সদস্য সংখ্যা আগের চারজনের স্থলে তিনজন করা হয়েছে। এই ধারার উপধারা (২) বলা হয়েছে, উপধারা (২) যা থাকুক না কেন, নির্বাচিত পরিচালকদের পদশূন্য হলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালক নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান এবং সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অপর দুইজন পরিচালকের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে।

বিলের ২২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে দেশে প্রচলিত বিধি বিধান ও হিসাবমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্দেশিত হিসাবমাণ পরিপালন করবে।’ আর ধারা-২৪ এ রিটার্ন, প্রতিবেদন ও বিবরণী বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পেশ করার বিধান করা হয়েছে। এছাড়া আইনে মিথ্যা বিবরণ, প্রসপেক্টাস বা বিজ্ঞাপনে ব্যাংকের নাম ব্যবহারের জন্য অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন আইনের ৩২ ধারায়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অধীনে আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর থেকে সরকার কর্তৃক অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে।

আর ৩৪ ধারায় সরকারকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।’

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারি করা সকল অধ্যাদেশ মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হওয়ায় এবং মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাতিলকৃত অধ্যাদেশ হালনাগাদ করে বাংলা ভাষায় নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘দি গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩’ রহিত করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জন করে এই বিল প্রণয়ন করা হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধি প্রণয়ন করতে পরবে। আইনের কোন বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা দেখা দিলে সরকার উক্ত অসুবিধা দূরীকরণে, লিখিত আদেশ দ্বারা প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/আরএইচ/এমএআর/নভেম্বর ০৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর