thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

দূতাবাসের সহায়তা পান না

বাহরাইনের কারাগারে আটকে গেছে অর্ধশত বাংলাদেশির স্বপ্ন

২০১৬ নভেম্বর ২০ ২৩:০৪:৩০
বাহরাইনের কারাগারে আটকে গেছে অর্ধশত বাংলাদেশির স্বপ্ন

ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশে গিয়ে বাহরাইনের কারাগারে আটকে গেছে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশির স্বপ্ন। সংসারের সুখ আনতে গিয়ে দিনের পর দিন বাহরাইনের আলবা ইমিগ্রেশন কারাগারের (জেলখানা) অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটছে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশির জীবন। কেউ ভিজিট ভিসায় গিয়ে আবার কেউবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন আকামা লাগানোর আগেই বাহরাইন পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। দিনের পর দিন তারা জেলখানায় থাকলেও তাদেরকে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোনো রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ভুক্তভোগীদের একজন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাদ্দেরগাঁও গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আতিকুর রহমান। প্রায় তিন বছর আগে বাহরাইনে গিয়েছেন তিনি। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে কোম্পানির কাজের কথা বলে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে বাহরাইনে যান। বাহারাইনে পা রেখে তিনি জানতে পারেন তাকে কাজের ভিসায় নয়, ভিজিট ভিসায় পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো রকম বাহরাইনে কাজকর্ম করে আসলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে ধরা পড়ে দেশটির আলবা ইমিগ্রেশন কারাগারে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আতিকুর।

আতিকুর রহমানের সঙ্গে রবিবার রাতে টেলিফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার মতো আরও কমপক্ষে ২০ জন বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় গিয়ে এখন দিনের পর দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনযাপন করছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু লোকের নামও বলছেন তিনি। তারা হলেন- ভোলা জেলার বোরহানুদ্দিন উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত বশির মৃধার ছেলে মো. সেলিম, কুমিল্লার গৌরীপুর দরিয়াপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. মামুন, চাঁদপুরের মতলবের মো. আরিফ হোসেন, একই জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বশির উদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল, মো. আনিস, ফেনীর দাগনভুইয়ার মো. তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুস সামাদের ছেলে মো. মুজিব, কুমিল্লার হেলাল, গোলাপ মিয়া, মোহাম্মদ আলী, মো. ফরিদ, আব্দুর রহিম।

আতিকুর রহমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেলিম, মামুনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথাও হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাদের তথ্যমতে, শুধু ভিজিট ভিসায় নয়, তিন তলার ওই জেলখানায় বৈধভাবে গিয়ে পড়ে অবৈধ হয়ে পড়া অনেকেই রয়েছেন। অনেকে আবার বেরও হয়ে গেছেন।

আতিকুর রহমান দাবি করেছেন, এ সংখ্যা এক শ’ জনের বেশিই হবে। তিনি বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা কারাগারে আছি। এরমধ্যে আমরা প্রতিনিয়ত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তাজ উদ্দিন নামে দূতাবাসের একজন প্রায় দেড় মাস আগে এখানে এসেছিলেন। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের বের করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু, এরপর তিনি আর আমাদের খোঁজ নেননি। তাকে ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ করেন না। দূতাবাসের নম্বরে ফোন দিলেও রিসিভ করা হয় না।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনেক পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ান, ইন্দোনেশিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের লোক পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। কিন্তু, তারা তাদের দূতাবাসের মাধ্যমে জেল থেকে বেরিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। আমরা আজও (রবিবার, ২০ নভেম্বর) জেল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম। তারা বলেছেন, তোমরা তোমাদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ কর। অথচ বাংলাদেশ দূতাবাস আমাদের কোনো খোঁজ খবরই নেয় না। মনে হয় বাহরাইনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসই নাই।’

দূতাবাসের সাহায্য প্রার্থনা করে আতিকুর বলেছেন, ‘ওইসব দেশের লোকেদের তো বিমানের টিকিট কেটে দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা তো বিমানের টিকেট চাচ্ছি না দূতাবাসের কাছে। তারা আমাদের এখান থেকে বের করে দেশের পাঠানোর ব্যবস্থা করলেই হয়। আমরাই টিকেটের ব্যবস্থা করে নেব। আমরা শুধু দূতাবাসের হেল্প চাই।’

বাহরাইনের আলবা ইমিগ্রেশন কারাগারে দেড় মাসের বেশি হলো বন্দি আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের সুরুত আলীর ছেলে মো. অহিদুল্লাহ। ফোনে তিনি বলেছেন, ‘প্রায় আড়াই বছর আগে আমি বাহরাইনে আসি। আগের মালিকের কাছ থেকে নতুন মালিকের কাছে কাজ নিয়ে যাওয়ার পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলা অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। নতুন মালিক আমার ভিসা করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে একাধিকবার আদালতের তারিখ পিছিয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর নতুন করে তারিখ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, ভিসা পেয়ে যাব। আমার মতো অনেকেই ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর পর জেল থেকে বেরিয়ে ফের কাজে যোগ দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত তাজ উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন প্রতিবেদক। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি। দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. মহিদুল ইসলাম প্রথমে কল রিসিভ করলেও নেটওয়ার্ক কেটে যাওয়ার পর নতুন করে দেওয়া কল রিসিভ করেননি।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/এনআই/নভেম্বর ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর