thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

ডিআরইউ নির্বাচন বুধবার

জমি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

২০১৬ নভেম্বর ২৯ ২৩:০৪:৪৩
জমি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ২০১৭ সালের এক বছর মেয়াদি কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন বুধবার (৩০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ডিআরইউ প্রাঙ্গণে এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এক হাজার ৩শ’ ৩৯ জন সাংবাদিক এদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এবারের নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ২১টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন। তবে ইতোমধ্যে অর্থ সম্পাদক হিসেবে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের মানিক মুনতাসির, ক্রীড়া সম্পাদক পদে দৈনিক কালেবেলার মো. মুজিবুর রহমান ও কল্যাণ সম্পাদক পদে অর্থনীতি প্রতিদিনের আজাদ হোসেন সুমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ডিআরইউ-এর এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজন ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সভাপতি পদের তিনজন প্রার্থী হলেন‒সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ভোরের ডাকের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তাক হোসেন, সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা এবং ডিআরইউ সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ও দৈনিক করতোয়ার ঢাকা অফিসের ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান খোকন।

তাদের মধ্যে মোস্তাক হোসেন ২০১১ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শক্তিশালী ও ডায়নামিক সাংবাদিক নেতা হিসেবে পরিচিত আলমগীর হোসেনকে (বাংলানিউজের সম্পাদক) পরাজিত করে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

অন্যদিকে সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ডিআরইউ-এর ১৯৯৮ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এরপর ২০০০ সালে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০০২ সালে যুগ্ম-সম্পাদক, ২০০৫ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১২ ও ২০১৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আরেক সভাপতি প্রার্থী মাহমুদুর রহমান খোকন ২০০৩-০৪ সালে ডিআরইউ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি দুই মেয়াদে সংগঠনের দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০৯-১২ ও ২০১২-১৫ মেয়াদে ডিআরইউ সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খোকন।

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাসসের দুই সিনিয়র রিপোর্টার মুরসালিন নোমানী ও সৈয়দ শুকুর আলী শুভ। মুরসালীন নোমানী এর আগে ডিআরইউ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সৈয়দ শুকুর আলী শুভ দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ডিআরইউ নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন- ওসমান গনি বাবুল (অনলাইন টেলিভিশন চ্যানেল ২৬), আনিসুর রহমান খান (ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট), আবু দারদা জুবায়ের (এটিএন বাংলা) ও শহিদুল ইসলাম (এসবিসি৭১ ডটকম)।

যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দীপ্ত টেলিভিশনের শাহনাজ শারমিন ও দৈনিক খোলা কাগজের তোফাজ্জেল হোসেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- ইনকিলাবের আফজাল বারী, আরটিভির ফারুক খান ও নয়াদিগন্তের জিলানী মিল্টন। দফতর সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন-সময় নিউজ ডটকমের জেহাদ হোসেন চৌধুরী ও যমুনা নিউজ ডটকমের নয়ন মুরাদ।

এ ছাড়া নারী বিষয়ক পদে সুমী খান (সূর্যবার্তা২৪ ডটকম) ও দিনার সুলতানা (বিটিভি), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আমিনুল হক ভুইয়া (নবচেতনা) ও কাফী কামাল (মানবজমিন), প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক পদে শেখ মাহমুদ এ রিয়াত (খোলা কাগজ) ও আহমেদ সিরাজ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মিজান চৌধুরী (আলোকিত সময়) ও এমদাদুল হক খান (সকালের খবর) এবং আপ্যায়ন সম্পাদক পদেআবু জাফর (জনতা) ও কামাল উদ্দিন সুমন (সংগ্রাম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে ৭টি কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন। তারা হলেন- মো. আনিসুল ইসলাম (নিউনেশন), হাফিজ আল আসাদ-সাঈদ খান (বৈশাখী টিভি), আসলাম রহমান (ভোরের কাগজ), হাবীবুর রহমান (মানবকণ্ঠ), নুরুল ইসলাম হাসিব (বিডিনিউজ২৪ ডটকম), এসএমএ কালাম (নতুনবার্তা ডটকম), মাইনুল হাসান সোহেল (ইনকিলাব), সাইফুল ইসলাম (জিটিভি), সাখাওয়াত হোসেন সুমন (আলোকিত বাংলাদেশ) ও রিমন মাহফুজ (আমাদের অর্থনীতি)।

গত ১৫ নভেম্বর ডিআরইউ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। যদিও এর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রচারণার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মিডিয়া হাউসে প্রচারণাপত্র নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেন প্রার্থীরা। রাতে সাংবাদিকদের জমজমাট আড্ডাস্থলে পরিণত হয়ে ওঠে রাজধানীর শাহবাগ, কারওয়ানবাজারের একুশের গলি, তেজগাঁওসহ কয়েকট পয়েন্ট। সাংবাদিকদের নতুন আড্ডাস্থল হিসেবে সরগরম হয়ে ওঠে দৈনিক ইত্তেফাক মোড়। ইতোমধ্যে এটির নাম পরিবর্তন হয়ে এর উদ্যোক্তারা নামকরণ করেছেন ‘ইতিহাস গলি’। সন্ধ্যার পর থেকেই এসব আড্ডাস্থলে সাংবাদিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রার্থীদের আনাগোনাও বাড়ে এসব জায়গায়। আর প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা-সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে সেগুনবাগিচাস্থ ডিআরইউ প্রাঙ্গণ। ডিআরইউ ক্যান্টিন ও বাগান হয়ে পড়ে নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দু। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ডিআরইউয়ের বার্ষিক সাধারণ সভাতেও প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন জোরেশোরে। প্রার্থীদের প্রচারণা ও সাধারণ সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ বার্ষিক সভা।

ডিআরইউ বাগানে বসে চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের নানা আলোচনা-সমালোচনাও ছিল গত বেশ কিছুদিন ধরে। বিভিন্ন পদে প্রার্থীদের যোগ্যতার নানাদিক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে। নির্বাচনমুখর এই আলোচনার মধ্যেই প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন।

ডিআরইউ’র জায়গা স্থায়ী বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

সভাপতি প্রার্থী মোস্তাক হোসেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে তিন দফা হাজির হয়েছেন। তার প্রথম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে‒ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্তমান ভবনের জমির দলিল আদায় করা। অন্যান্য প্রতিশ্রুতিগুলো হলো- নিজস্ব জমিতে আধুনিক সকল সুবিধাসহ বহুতলবিশিষ্ট ‘ডিআরইউ হাউস’ নির্মাণ এবং ডিআরইউ সদস্যদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সদস্য পরিবারের উন্নত জীবন-যাপনের কার্যকরী ব্যবস্থাগ্রহণ এবং রিপোর্টারদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা। নির্বাচিত হলে এসব বাস্তবায়ন করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

আরেক সভাপতি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ ডিআরইউ-এর জায়গা স্থায়ীভাবে সংগঠনের নামে করে দেওয়ার চেষ্টা করার কথা বলার পাশাপাশি তিনি তার সময়ে করা (২০১৫ সালে সভাপতি) সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য ২৪ হাজার টাকা করে শিক্ষা বৃত্তি, সদস্যদের জন্য গ্রুপ ইনস্যুরেন্স ও হেলথ ইনস্যুরেন্সের জন্য বড় ধরনের এফডিআর গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মূলত এসব করতে তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ।

মাহমুদুর রহমান খোকন বলেন, আমি যখন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক তখন সরকারি খাসজমিতে ক্যান্টিন ও মিলনায়তন করা হয়। আজ পর্যন্ত এই জায়গাটি ডিআরইউ-এর নামে হয়নি। নির্বাচিত হলে এই জায়গাটি বরাদ্দ নিয়ে ‘ডিআরইউ ভবন’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করব। ডিআরইউকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুরসালীন নোমানী বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কাজের মাধ্যমে বর্তমানে একটি গতিশীল ও কার্যকরী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমাদের বড় সমস্যা হলো সংগঠনের জমির বিষয়টি স্থায়ীভাবে সুরাহা না হওয়া। আমাদের জমি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

এবার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলে এই জমিসংক্রান্ত বিষয়টি সমাধানের জন্য সিনিয়র সদস্যদের সংযুক্ত করে বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন বলে জানান তিনি।

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, নির্বাচিত হলে ডিআরইউ-এর জায়গাটা স্থায়ীকরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকবান্ধব। তিনি সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য সব সময় পাশে থাকেন। তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। ডিআরইউ-এর এই জায়গাটা স্থায়ীকরণে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব। তাকে অনুরোধ করব, এই জায়গাটি ডিআরইউকে স্থায়ী বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে।

ডিআরইউ-এর উন্নয়নে ইনোভেটিভ কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেন সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।

ডিআরইউ নির্বাচনের জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন‒নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুগ্ম-সম্পাদক আবু তাহের এবং সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ।

এদিকে মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা-২০১৬ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় মঙ্গলবার সকালে ডিআরইউ সাধারণ সভার শুভ উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। দুপুরে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সভায় সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ এবং অর্থ সম্পাদক কামরুজ্জামান কাজল এক বছরের কার্যক্রমের রিপোর্ট পেশ করেন। সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও কয়েকজন সাধারণ সদস্য বক্তব্য রাখেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এস/জেডটি/এপি/এনআই/নভেম্বর ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর