thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

ভগবানপুরে চুনাপাথর মিললে খনির অস্তিত্ব সুনিশ্চিত হবে

২০১৬ নভেম্বর ৩০ ২২:০৬:৩৮
ভগবানপুরে চুনাপাথর মিললে খনির অস্তিত্ব সুনিশ্চিত হবে

দেশের উত্তরাঞ্চলে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে দ্বিতীয়বারের মতো চুনাপাথরের খনির অস্তিত্ব অনুসন্ধানে খনন (ড্রিলিং) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাজপুরের মতো ভগবানপুরের নমুনা পরীক্ষায় চুনাপাথর মিললে খনির অস্তিত্বের বিষয়টি আরও সুনিশ্চত হবে। এই সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে মুনাফার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরই বাণিজ্যিক উত্তোলনের কথা ভাববে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)।

ভূ-ত্বাত্ত্বিক অভিকর্ষীয় (গ্রাভিটি) ও চুম্বকীয় (ম্যাগনেটিক) জরিপের ভিত্তিতে তাজপুর এলাকাকে কেন্দ্র ধরে ভূগর্ভে ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সর্ববৃহৎ খনিটি বিস্তৃত। যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে খনির গভীরতম স্থান হিসেবে ভগবানপুর গ্রামে একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই স্থানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রিগ মেশিন বসিয়ে খনন কার্যক্রম চলছে।

গত ২৮ নভেম্বর খনন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভগবানপুরে নির্ধারিত স্থানে মাটির ২০ ফুট গভীরে ঢালাই করে স্ট্যান্ড পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। এটি মাটির নিচের চাপ নিয়ন্ত্রণ করবে। স্ট্যান্ড পাইপের ঢালাইটি শক্ত-পোক্ত হলেই ৩ ডিসেম্বর থেকে মাটির আরও গভীরে খনন কাজ শুরু হবে। তাজপুরের মতোই ভগবানপুরও ২ হাজার ২০০ ফুট মাটির গভীরে চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন জিএসবির কর্মকর্তারা।

এর আগে বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে একইভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালানা করা হয়। তাজপুরে প্রথম নমুনা পরীক্ষার স্থান থেকে ভগবানপুরে দ্বিতীয় স্থানটি ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত। চলতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় চুনাপাথরের খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে স্থান নির্ধারণের অফিস আদেশ জারি করে। এরপর ১২ অক্টোবর জিএসবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভগবানপুর গ্রাম পরিদর্শন করে কূপ খননের স্থান নির্ধারণ করেন।

জানা গেছে, এক বিঘা জমির উপর ভগবানপুরে খনন কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। ২৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ খনন কার্যক্রমে জড়িত। এর মধ্যে কর্মকর্তারা সবাই জিএসবি’র। আর কর্মচারীদের মধ্যে ভগবানপুর ও তাজপুরের স্থানীয় গ্রামবাসী রয়েছে। আগামী বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এ খনন কার্যক্রম শেষ করার অফিস আদেশ রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই এবার ভগবানপুরে চুনাপাথরের অস্তিত্ব অনুসন্ধানে খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি, তাজপুরের মতোই ভগবানপুরে চুনাপাথরের খনিন অস্তিত্ব মিলবে। চুনাপাথরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরই মুনাফার বিষয়টি বিবেচনায় এনে উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ভগবানপুরে খনির খনন কার্যক্রম প্রক্রিয়ার প্রকৌশলীদের দলনেতা ও জিএসবির উপপরিচালক মহিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘চুনাপাথরসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার জন্য জিএসবির প্রতিনিধিদল তাজপুরের মতোই ভগবানপুর গ্রামে একটি স্থান নির্ধারণ করে। ওই স্থানেই ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘চুনাপাথরের অস্তিত্ব পেতে তাজপুরের মতোই ভগবানপুরে ২ হাজার ২০০ ফুট মাটির গভীরে চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। ওই পর্যন্ত যেতে আমাদের দুই মাস সময় লাগবে।’

প্রাথমিক খনন কার্যক্রমের বিষয়ে ভগবানপুরে দায়িত্বরত জিএসবি’র অারেক উপপরিচালক খোন্দকার রবিউল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘খনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভগবানপুর গ্রামে নির্ধারিত স্থানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রিগ মেশিন বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওই স্থানে মাটির ২০ ফুট গভীরে ঢালাই করে স্ট্যান্ড পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। ঢালাইটি শক্ত-পোক্ত হলেই মাটির আরও গভীরে খনন কাজ শুরু হবে।’

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভূ-তাত্ত্বিক তত্ত্ব অনুসন্ধান ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে একটি তদন্তদল তাজপুরে খননকাজ শুরু করে। ওই খনন কার্যক্রমে ২ হাজার ২১৪ ফুট মাটির গভীরে চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়া যায়। এর গভীরতা ছিল ২ হাজার ৩১৩ ফুট। অর্থাৎ চুনাপাথরের স্তর ছিল ৯৯ ফুট পর্যন্ত। তবে চুনাপাথর ছাড়া খনিতে আরও অন্য খনিজের অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ২ হাজার ৭৬৭ ফুট খনন করা হয়। আর এ খনন কার্যক্রম শেষ হয় ২৬ মে।

ভূগর্ভে বেসিন বা কড়াই আকৃতির কঠিন শিলাস্তরের ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে উন্নতমানের চুনাপাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে। বেসিন হলো―পৃথিবীর ভূগর্ভে কঠিন শিলাস্তর, যা কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, আবার কোথাও সমতলবেষ্টিত। শিলাস্তরটি উঁচু-নিচু হওয়ার ফলে ভূগর্ভে কোনো কোনো জায়গা বেসিন বা কড়াই আকৃতির হয়ে রয়েছে। ভূগর্ভে এমন আকৃতির শিলাস্তরকেই ভূতাত্ত্বিক ভাষায় বেসিন বলে। মূলত, হিমবাহ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে ওই সব স্থান (বেসিন) মাটি, বালি ও বিভিন্ন খনিজ দিয়ে ভরাট হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে ধারণা অনুযায়ী এ পর্যন্ত অনুসন্ধান পাওয়া চুনাপাথরের খনির মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। তবে বিভিন্ন স্থানে খনন করা কূপে চুনাপাথরের অস্তিত্ব নিশ্চিতকরণ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মুনাফার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরই বাণিজ্যিক উত্তোলন করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, বিশুদ্ধ চুনাপাথরের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ চুনাপাথর খুব কম পাওয়া যায়। বালি, কাদা ইত্যাদির মিশ্রণ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং সালফার ইত্যাদি মৌলে চুনাপাথর অপদ্রব্য হিসেবে মিশ্রিত থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিমেন্ট তৈরিতে ক্লিঙ্কারের প্রয়োজন হয়। আর ক্লিঙ্কারে প্রায় ৮০ শতাংশ চুনাপাথরের প্রয়োজন পড়ে। দেশে এখন যত সিমেন্ট কারখানা আছে―তার মধ্যে দু-তিনটি ছাড়া সবাই বিদেশ থেকে ক্লিঙ্কার এনে তা গুঁড়া করে ব্যাগ ভরে বাজারজাত করছে। দেশে ত্রিশটির বেশি সিমেন্ট কারখানায় চুনাপাথরের চাহিদা বছরে প্রায় দুই কোটি টন। এর অধিকাংশই আমদানি করা হয়। তাজপুরে চুনাপাথর উত্তোলন করা গেলে দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলোর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এমনকি রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দেশের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/জেডটি/এনআই/নভেম্বর ৩০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর