thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বার্জার পেইন্টসে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৯৪ কোটি টাকা

২০১৬ ডিসেম্বর ০৪ ২১:৩১:৩৮
বার্জার পেইন্টসে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৯৪ কোটি টাকা

বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তালিকাভুক্তির পর থেকে সর্বশেষ হিসাব বছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার ওপরে।

উন্নয়নের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের আনা হলেও রাজস্ব আয় কমছে সরকারের। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০ শতাংশ কর রেয়াত নিচ্ছে। যাতে দেশের বিনিয়োগকারীরা যতটুকু উপকৃত হচ্ছে, সরকার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা গেছে, ২৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের বার্জার পেইন্টস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০টি শেয়ার ইস্যু করে। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ বা ২ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪৪০টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতেই রয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বার্জার পেইন্টস থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে।

অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১০ শতাংশ কর সুবিধা হিসাবে কোম্পানিটিকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাষ্ট্র ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

কোম্পানিটি ৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও কর সুবিধায় ৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকার পার্থক্য হয়েছে। তবে কোম্পানিটি ২৫.৯৪ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করলে এ পার্থক্য শূণ্য হতো। কারণ ২৫.৯৪ শতাংশ শেয়ার ধারনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার লভ্যাংশ পাবে।

কোম্পানিটি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৯৪ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পেয়েছেন ৪২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লভ্যাংশ।

এদিকে বার্জার পেইন্টস এই সময়ে কর পূর্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২৭.৫ শতাংশ হিসাবে ২৫৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার কর প্রদান করেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে না আসলে ৩৭.৫ শতাংশ হিসাবে ৩৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কর প্রদান করতে হতো। এ হিসাবে শেয়ারবাজারে আসার কারণে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির কোনো অভিযোগ নাই। এ ছাড়া ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে ও শেয়ার দর ভালো। তবে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ভালো।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোনো বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত না। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত। অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেওয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।’

এদিকে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসা ও না আসা সমান কথা বলে জানান শাকিল রিজভী। তার মতে, যদি শেয়ারবাজারে সাপ্লাই না বাড়ে তাহলে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ নেই। এ ছাড়া নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে শেয়ার দর নিয়ে অল্পতে কারসাজি করা সহজ হয়ে উঠে।

এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা নিচ্ছে। এতে শেয়ারবাজার প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হলেও কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো উচিত।’

এ বিষয়ে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ এর সচিব খন্দকার আবু জাফর সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার মেইলে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করলেও কোনো প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এস/জেডটি/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর