thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ইসি পুনর্গঠন

বল এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে

২০১৬ ডিসেম্বর ০৫ ২০:১৭:২৮
বল এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। এই নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। যদিও আওয়ামী লীগ তা শুরুতেই প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে থেমে নেই বিএনপির প্রচেষ্টা। পরবর্তিতে এই নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে সময় চেয়ে চিঠি পাঠায় বিএনপি। এখনও সাড়া পায়নি দলটি। এরমধ্যে শনিবার গণবভনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসি গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপের কথা বলেছেন। এমন অবস্থায় বল এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিকরা।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এবারও আগের প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ হবে। ২০১২ সালে যেভাবে বর্তমান ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারও সেভাবেই হবে।’

নতুন ইসির জন্য সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন নিয়ে আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব‌্যে পর পরই এই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে সিইসি ও ইসি নিয়োগ দেবেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পান কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী- এই কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

সংবিধানের ১১৮(১) এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যে রূপ নির্দেশ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ এখতিয়ার প্রয়োগে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন নন। ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে এ নিয়োগ দিতে হয়। যোগ্যতার শর্তাবলি না থাকায় যেকোনো ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রপ্রতির সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে আমাদের পার্টির চেয়ারপারসন যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরার জন্য সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও আমরা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের সময় পাইনি। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি রাষ্ট্রপতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকল দলের মধ্যে একটা ঐকমত্য তৈরি হবে।’

শনিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন-সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনার (খালেদা জিয়ার) প্রস্তাব উনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে বলুক। এটা রাষ্ট্রপতি ভালো বুঝবেন, উনি কী পদক্ষেপ নেবেন। রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই হবে। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।’

খালেদা জিয়ার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করবেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। তবে রাষ্ট্রপতি যেমন দেখবেন, তেমনি বড় দল ও সরকারের প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রীও তা দেখবেন, পাশ কাটিয়ে গেলে চলবে না। প্রধানমন্ত্রীরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান করতে। আমরা আশা করি তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার) শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং সমস্যা সমাধনের পথ বের করতে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।’

গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপরই বঙ্গভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলটি। এসএমএস পাঠানোর পাশাপাশি টেলিফোনে নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর গত ২৩ নভেম্বর বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব বরাবর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বল্পতম সময়ে ও রাষ্ট্রপতির সুযোগ অনুযায়ী সাক্ষাতের জন্য সম্মতি চাওয়া হয়।

৪ ডিসেম্বর (রবিবার) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৯ সালে নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনে হবে। নির্বাচন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সর্বশেষ কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছিল এবারও সেভাবেই হবে। রাষ্ট্রপতি সব নিবন্ধিত দলকে ডেকে কথা বলবেন। বিষয়টি মীমাংসিত, এতে আর আলোচনার সুযোগ নেই। বরং খালেদা জিয়া এ প্রস্তাব দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।’

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এসব কিছুর মধ্যেও একটা সম্ভাবনা আছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন রাষ্ট্রপতির কথা। তিনি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। বিএনপি যদি তাদের প্রস্তাবনা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করেন, তিনি এর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে পাঠাতে পারে। তারপর সকলের অংশগ্রহণে একটা আলোচনা হতে পারে।’

তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ‍ওপর। কারণ দল তো ওনাকে ছাড়া কিছু করবে না। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। তাহলেই কেবল সুন্দর আলোচনার পথ তৈরি হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের বাইরে যদি সমঝোতা হয়, এটাই হবে মঙ্গলজনক।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এস/এপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর