thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

পটকা মাছ খেয়ে মৃত্যু, সাবধান হোন

২০১৬ ডিসেম্বর ০৭ ১৪:২৯:২৩
পটকা মাছ খেয়ে মৃত্যু, সাবধান হোন

পটকা মাছ বা Puffer Fish যা জাপানে ফুগো মাছ বলে পরিচিত আসলে একটি বিষাক্ত জলজ প্রাণী বা মাছ । এ মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স (TTX) বা টেট্রোডোটোক্সিন (Tetrodotoxin) বিষ । বাংলাদেশের নদী ও উপকূলে সবচেয়ে বেশি যে পটকা মাছের প্রজাতিটি পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম Tetraodon Cutcutia, ইংরেজিতে এ প্রজাতিকে Ocellated Pufferfish বলে । এর দেহ প্রায় গোলাকার, মাথা চওড়া, দেহ খণ্ড ও চওড়া; তবে লেজের ঠিক আগে হঠাৎ সরু হয়ে গেছে। মাছের দৈর্ঘ্য সচরাচর ৫-৯ সে.মি. হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু বিল ও নদীতে সর্বোচ্চ ১৫-১৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যেরও পটকা মাছ পাওয়া গেছে । উপরিতল থেকে সামান্য নিচে মুখ, উভয় মাড়িতে দুটি ছেদন দন্ত রয়েছে। এই ৪টি দাঁতের কারণেই এর বৈজ্ঞানিক নামে ‘টেট্রাডন’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে ।

বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২০-২৫টি প্রজাতির পটকা মাছ পাওয়া যায়। তবে টেট্রাওডোন কুটকুটিয়া প্রজাতির পটকা মাছ বেশি পাওয়া যায় । এ মাছটিকে স্থানীয়ভাবে টেপা বা ফোটকা মাছও বলা হয় । তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তার বিষাক্ততা কোনো অংশে কমে যায় না ।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত প্রজনন ঋতুতে বা বর্ষাকালে এ মাছটি অধিক মাত্রায় বিষাক্ত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য সময়েও মাছটি কমবেশি বিষাক্ত থাকে ।

লক্ষণ বা উপসর্গ

পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না । কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে । সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে এর বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে । পটকা মাছ খাওয়ার পরপর নিচের উপসর্গগুলো দেখে বোঝা যাবে যে একজন মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না-

১. পটকা মাছ খেয়ে কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে;

২. মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে;

৩. তলপেটে ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে;

৪. শরীর অসাড় হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে;

৫. হাঁটা চলার অক্ষমতা ও স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে;

৬. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, আক্রান্ত রোগী অস্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে থাকতে পারে;

উপরের প্রতিটি, কয়েকটি অথবা সবগুলো উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।

প্রতিরোধ বা প্রতিকার

সাধারণত এ মাছ খাওয়া বর্জন করাই সবার জন্য মঙ্গলজনক; তবে যদি কোনো কারণে কেউ মাছটি খেয়ে ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয় তাহলে কী করবেন? নিম্নোক্ত উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন-

১. যেকোনো উপায়ে চেষ্টা করতে হবে বমি করানোর জন্য । এ ক্ষেত্রে গ্রামের অনেক মানুষ গোবর গুলিয়ে সে পানি রোগীকে খাইয়ে থাকেন যাতে বমি আসে আর ভক্ষণ করা মাছ বা বিষ বেরিয়ে আসে।

২. কাঠকয়লা গুঁড়ো করে সরাসরি অথবা পানির সঙ্গে গুলে খাওয়াতে হবে । কাঠকয়লা গুঁড়ো (এক্টিভেটেড চারকোল) আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে স্বীকৃত ।

৩. প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে যাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল কমে আসে ।

৪. চেষ্টা করতে হবে সজ্ঞান রাখার কারন জ্ঞান হারালে মস্তিষ্ক তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।

৫. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে।

এখন পর্যন্ত এ নিউরোটক্সিন-এর কোনো ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি তাই আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে । পটকা মাছ খাওয়া বাদ দিতে হবে । সরকারি বা বেসরকারিভাবে সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিশেষ কোনো উপায় নেই ।

পটকা মাছ খাওয়া থেকে সবাই বিরত থাকুন ভালো থাকুন ও নিরাপদ থাকুন ।

অতিথি লেখক :

আসিফ শুভ্র, সহযোগী রেজিস্ট্রার, আইসিইউ, অ্যাপোলো হাসাপাতাল, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর