thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

আট সাধারণ বীমায় নিরীক্ষক নিয়োগ

২০১৬ ডিসেম্বর ০৭ ২৩:০৮:১৯
আট সাধারণ বীমায় নিরীক্ষক নিয়োগ

ব্যবস্থাপনা খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করায় ৮টি সাধারণ বীমা কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কোম্পানিগুলো হলো- গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস, কন্টিনেন্টাল, ফিনিক্স, প্রগতী, ফেডারেল, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স।

কোম্পানিগুলোর ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের বিনিয়োগ, ঋণ, অগ্রিম, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ, গাড়ি, জমি ও বিল্ডিং, নগদ টাকা, ট্যাক্স ও ভ্যাট, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা কী পরিমাণ সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন তার পর্যালোচনাসহ কোম্পানির এই তিন বছরের আয়, ব্যয় ও সম্পদের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে মেসার্স নুরুল ফারুক হাসান অ্যান্ড কোং, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, কন্টিনেন্টালে মেসার্স হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ফিনিক্সে মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি, প্রগতীতে হুদাভাসি চৌধুরী, ফেডারেলে এমজে আবেদিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশে বিডিও এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সে এসএফ আহমেদ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বীমা আইন ২০১০’র ২৯ ধরার ক্ষমতা বলে কোম্পানিগুলোতে এ নিরীক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২ মাসের মধ্যে তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়টি চিঠি দিয়ে কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে আইডিআরএ।

বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বীমা আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে- আইনের অন্য কোন বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা পরিচালনাকারী যে কোন বা সকল বীমা কোম্পানির বীমা সংক্রান্ত সকল লেনদেন, রেকর্ডপত্র, দলিল দস্তাবেজ, সময় সময়, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে এক বা একাধিক নিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষা করাতে পারবে।

ধরায় আরও বলা হয়েছে, এই ধারার অধীনে নিযুক্ত নিরীক্ষক বীমাকারীর বীমা ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র, হিসাব বই, রেজিস্টার, ভাউচার, পত্রাদি এবং অন্য সকল দলিলাদি পরিদর্শন করতে পারিবে এবং এ উদ্দেশ্যে বীমাকারীর যে কোন পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বক্তব্য শ্রবণ করিতে এবং বীমাকারীর নিকট থেকে যে কোন প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র ও তথ্যাদি তলব করতে পারবে৷

ধারাটি অনুযায়ী, নিরীক্ষা কাজের জন্য নিয়োগ পাওয়া নিরীক্ষক সর্বোচ্চ ৪ মাসের মধ্যে একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রতিবেদনের ৪টি কপি আইডিআরএ’র কাছে জমা দিবেন।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা ক্ষতিয়ে দেখে যে প্রতিবেদন দেবে তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আইডিআরএ সদস্য জুবের আহমেদ খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা কোম্পানিগুলো বার্ষিক প্রতিবেদনে যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক আছে কি না তা পর্যালোচনা করবে। পর্যায়ক্রমে সবকটি বীমা কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

এর আগে ৬টি জীবন বীমা কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। ওই ৬টি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নিরীক্ষা করে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যে প্রতিবেদন দেয় তাতে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৭ বছরে দেশে ব্যবসা করা ৪৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘সাধারণ বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনাখাতে অতিরিক্ত ব্যয় করলে কোম্পানির দাবি পরিশোধের সক্ষমতা কমে যায় ও শেয়ারহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত অর্থ কোন কোন খাতে খরচ করেছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’

মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা খাতে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে।

মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় ও নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী।

নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়ে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে এম সাইদুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আইডিআরএ’র নিয়োগ দেওয়া নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। তাদের চাহিদা মতো তথ্য সরবরাহ করা হবে।’

ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম সারওয়ার্দী চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, আইডিআরএ’র ইচ্ছা হয়েছে আমাদের কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এটি আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত। তবে আমি মনে করি সবকটি কোম্পানিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত।

গ্রীন ডেল্টা

প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনাখাতে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৮ কোটি ৫০ লাখ, ২০১০ সালে ১৩ কোটি, ২০১১ সালে ১৩ কোটি ২০ লাখ, ২০১২ সালে ১৯ কোটি ৬০ লাখ, ২০১৩ সালে ২৫ কোটি ৩০ লাখ, ২০১৪ সালে ৪১ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে ব্যয় করা হয়।

ফিনিক্স

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ ১১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ১০ কোটি ৯০ লাখ, ২০১০ সালে ১৪ কোটি ৩৮ লাখ, ২০১১ সালে ১৯ কোটি ২০ লাখ, ২০১২ সালে ১৬ কোটি, ২০১৩ সালে ১৪ কোটি ১৯ লাখ, ২০১৪ সালে ১৭ কোটি ৭০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

ফেডারেল

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে ৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৬ কোটি ৮৬ লাখ, ২০১০ সালে ৭ কোটি ১৫ লাখ, ২০১১ সালে ৫ কোটি ৪৫ লাখ, ২০১২ সালে ৮ কোটি ২৭ লাখ, ২০১৩ সালে ৮ কোটি ৭৫ লাখ, ২০১৪ সালে ১২ কোটি ৮০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

এক্সপ্রেস

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ১ কোটি ৯৩ লাখ, ২০১০ সালে ৩ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১১ সালে ৪ কোটি ৭ লাখ, ২০১২ সালে ৫ কোটি ৫৫ লাখ, ২০১৩ সালে ৮ কোটি ৩৮ লাখ, ২০১৪ সালে ১০ কোটি ৬০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

কন্টিনেন্টাল

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে ৩৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ২ কোটি ৪৫ লাখ, ২০১০ সালে ৩ কোটি ২৬ লাখ, ২০১১ সালে ৩ কোটি ৪০ লাখ, ২০১২ সালে ৪ কোটি ৬৯ লাখ, ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৪৭ লাখ, ২০১৪ সালে ৬ কোটি ৬০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

প্রগতি

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৮৯ লাখ, ২০১০ সালে ১ কোটি ২ লাখ, ২০১১ সালে ৯০ লাখ, ২০১২ সালে ৮৩ লাখ, ২০১৩ সালে ৮১ লাখ, ২০১৪ সালে ৮৭ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৮৮ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

ইউনিয়ন

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনাখাতে ৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৩ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১০ সালে ৫ কোটি ৮ লাখ, ২০১১ সালে ৪ কোটি ৭১ লাখ, ২০১২ সালে ৮ কোটি ৯৮ লাখ, ২০১৩ সালে ৮ কোটি ১৫ লাখ, ২০১৪ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করা হয়েছে।

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ

প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ বছরে ব্যবস্থাপনাখাতে ৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে ৩ কোটি ৩৭ লাখ, ২০১০ সালে ৪ কোটি ৪ লাখ, ২০১১ সালে ৪ কোটি ৫ লাখ, ২০১২ সালে ১১ কোটি ২০ লাখ, ২০১৩ সালে ১০ কোটি ১৮ লাখ, ২০১৪ সালে ৯ কোটি ২০ লাখ এবং ২০১৫ সালে ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আইন লঙ্ঘন করে খরচ করেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএস/জেডটি/এনআই/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর