thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

নিখোঁজ ৬ তরুণের পরিবার অজানা আশঙ্কায়

২০১৬ ডিসেম্বর ০৭ ২৩:৪৩:১৫
নিখোঁজ ৬ তরুণের পরিবার অজানা আশঙ্কায়

এক সপ্তাহে (২৯ নভেম্বর-৫ ডিসেম্বর) রাজধানী থেকে ৬ তরুণের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ এসেছে পরিবারের পক্ষ থেকে। একাধিক তরুণের এমন হঠাৎ করে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি বেশ নাড়া দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। একইভাবে এ তথ্য গণমাধ্যম কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার প্রকৃত কারণ এখনো উদঘাটন করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারা সর্বোচ্চ মনযোগ দিয়ে তদন্ত করে দেখছেন বিষয়টি। তবে তরুণদের এমন হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার খবর অশুভ এক শঙ্কারও জন্ম দিয়েছে। অতীতে এমনিভাবে নিখোঁজ অনেক তরুণের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। এবারও তেমন কিছু কিনা, এ শঙ্কা ভর করেছে অনেকের মনে। আবার এটি ‘গুম’ জাতীয় কোনো ঘটনা কিনা তেমন আশঙ্কাও বিরাজ করছে কারো কারো মনে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও নিখোঁজ তরুণদের খোঁজে সম্ভাব্য বিভিন্ন কারণের মধ্যে এই বিষয় দুটিও মাথায় রাখছে।

এদিকে, এই ৬ তরুণের এমন আকস্মিক নিখোঁজের পর অজানা আশঙ্কায় রয়েছে তাদের পরিবার। একদিকে তরুণদের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অশুভ আশঙ্কা, আবার কারো দ্বারা তারা অপহৃত হয়েছে কীনা এমন শঙ্কাও তাদের তাড়া করছে। এমন দুই বিপরীতমুখী শঙ্কার মাঝে তাদের মনে একটাই প্রশ্ন-ঘরের ছেলেটি আবার ঘরে ফিরে আসবে তো?

কয়েকটি দিক মাথায় রেখে এই তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে অপহরণ, পূর্ব শত্রুতাসহ কয়েকটি দিক রয়েছে। তবে জঙ্গিবাদে জড়ানোকে কেন্দ্র করে যদি তারা নিখোঁজ হয়ে থাকে তাহলে এ তালিকা আরও বড় হতে পারে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। নিখোঁজরা স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বেরিয়েছে, নাকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থার সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে গেছে, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি তাদের অপহরণ করা হয়েছে কিনা, তাও নিশ্চিত হতে পারেননি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

গত ২৯ নভেম্বর ইমরান ফরহাদ নামে এক তরুণ নিখোঁজ হয়েছেন। ইমরান রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় প্রথম আলো ও ইউসিবি ব্যাংক যৌথভাবে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ২০১২ সালে তিনি পদক পেয়েছিলেন। তাদের পরিবার রক্ষণশীল এবং তারা জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি করা হয়েছে। নিখোঁজ ইমরান ফরহাদের চাচাতো ভাই এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়ে তাকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়েছেন। ইমরানের মা-বাবা ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন।

বাড়ি ফিরে আসার আকুল মিনতি করে কান্না জড়িত কন্ঠে ইমরানের মা সাবিনা ইয়াসমিন দ্য রিপোর্টকে জানান, ইমরানের প্রবাসী বাবা মো. আসাদুজ্জামান অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেডিকেলে পড়তে তার মত ছিল না। হয়ত মেডিকেলে পড়তে বাধ্য করায় ইমরান বাড়ি ছেড়েছে।

ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল গফুর দ্য রিপোর্টকে জানান, ২৯ নভেম্বর সকালে মেডিকেল কলেজে যাওয়ার জন্য মাটিকাটা এলাকার ১৪৫/এ নম্বর বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি ইমরান। সে ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে বের হলেও পরে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গত ৫ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সাঈদ আনোয়ার খান (১৮) নামে আরেকজন। সে ও-লেভেলের শিক্ষার্থী। তার বাসা বনানীর ২১ নম্বর রোডের ব্লক-বিতে। সাঈদ ৬ ফুট লম্বা, তার গায়ের রং শ্যামলা। যেদিন তিনি নিখোঁজ হন, সেদিন কালো শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত ছিলেন। বাসায় ফিরছেন বলে স্বজনদের সঙ্গে ওইদিন সকাল ১০টার দিকে তার কথা হয়। বেলা ১২টা থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৪৩১) করা হয়েছে।

তার বাবা ব্যবসায়ী আনোয়ার সাদাত খান দ্য রিপোর্টকে জানান, ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টার পর বাসা থেকে বের হলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনও কোন খবর পাওয়া যায়নি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি না যে আমার সন্তান খারাপ কোনো কাজে সম্পৃক্ত হতে বাড়ি ছেড়েছে। সে ও আমাদের পরিবার এমন নয়।

গত ১ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে এক সঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হন। রাতে বনানীর কাঁচাবাজার এলাকার নর্দান ক্যাফে রেস্টুরেন্টের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাদের সর্বশেষ দেখা যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হন সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসাইন খান পাভেল, মোহাম্মদ সুজন ও মেহেদী হাওলাদার। এদের মধ্যে সাফায়েত ও জায়েন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। সুজন কাজ করেন এশিয়াটিক বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে মেহেদী ২৬ নভেম্বর ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির খোঁজে। নিখোঁজের পর ২ ও ৩ ডিসেম্বর বনানী থানায় আলাদা দুটি সাধারণ ডায়েরি করেন তাদের স্বজনরা।

জায়েনের পরিবার ১ নম্বর বিমানবন্দর রোডের গলফ টাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন। তার বাবা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন খান রাসেল দ্য রিপোর্টকে জানান, ঘটনার দিন সে রাত ৮টার দিকে ফটোকপি করতে বাসা থেকে বনানী সুপার মার্কেটের উদ্দেশে বের হয়ে যায়। পরে সে ও তার অপর দুই বন্ধু সাফায়েত ও সুজন একসঙ্গে নিখোঁজ হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে তাদের খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। জায়েন উজ্জ্বল শ্যামলা, তার উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট। সে যখন বাসা থেকে বের হয় তখন কালো প্যান্ট ও জ্যাকেট পরিহিত ছিল। আমি বুঝতে পারছি না সে কোথায় গেল? নাকি কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

জিডির বরাত দিয়ে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা দ্য রিপোর্টকে জানান, সাফায়েতের বাবার নাম মো. আলী হোসেন এবং তার পরিবার বনানীর ৪ নম্বর রোডের ব্লক-সিতে বসবাস করেন। সাফায়েতের গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা, তার উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। তার পরনে ছিল চেক শার্ট ও প্যান্ট। সুজনের বাবার নাম মো. আনিসুর রহমান এবং সে গলফ টাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করত। সুজন কালো বর্ণের, তার উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। নিখোঁজ হওয়ার আগে সে জিন্স প্যান্ট ও সাদা শার্ট পরিহিত ছিল।

তাদের পরিবারের থেকে জানা যায়, গলফ টাওয়ার অ্যাপার্টমেন্টে থাকার কারণে জায়েনের সাথে সুজনের বন্ধুত্ব হয়। পরে পরিচয় হয় সাফায়েতের সঙ্গে। মেহেদী বরিশালের বাবুগঞ্জে সুজনের গ্রামের প্রতিবেশী। সাফায়েতের বাবা আলী হোসেন ও জায়েনের বাবা ইসমাইল হোসেন খান রাসেলের পুরান ঢাকায় পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ছোট বেলা থেকেই সাফায়েত ও জায়েন বন্ধু।

নিখোঁজ মেহেদীর বাবার নাম জাহাঙ্গীর হাওলাদার। তার চাচা মাহাবুব হাওলাদার দ্য রিপোর্টকে জানান, সে ঢাকায় এসে রায়েরবাজারে ফুপুর বাসায় উঠেছিল। ঘটনার দিন সুজনের সঙ্গে দেখা করতে সে বিকেল ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে বনানী সুপার মার্কেটে যায়। সেখানে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে। সেই রাত থেকে তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটিও তখন থেকে বন্ধ।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জিডির ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। পুলিশ তাদের অবস্থান এবং নিখোঁজ হওয়ার রহস্য জানতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনা যাই হোক নিখোঁজদের সন্ধান জানতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত তদন্তের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল দিক মাথায় রেখেই তদন্ত করা হয়। সেক্ষেত্রে তারা স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বেরিয়েছে নাকি অপহরণ করা হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে- সকল দিক বিবেচনায় রেখেই তদন্ত করছে পুলিশ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর