thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয়

২০১৬ ডিসেম্বর ১১ ২০:৫৯:৪৮
গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয়

সাজ্জাদ হোসেন সজীব

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্ন-সাধ পূরণ হয় এ-মাসে। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়।

স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালি-বাংলাদেশ। অর্জন করে নিজস্ব ভূ-খণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে।

বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হওয়ার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিধুর এক শোকগাথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের সহযোগিতায় দেশের মেধাবী ও শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।

সমগ্র জাতিকে মেধা-নেতৃত্বহীন করে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই। আর অন্য কোনো দেশের স্বাধীনতার জন্য এতো মানুষও কখনও নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়নি। এজন্যই আমরা ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, অতিথেয়তা ও ঐতিহ্যে শান্তি প্রিয় জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। আমাদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতাকে এনে দিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা আমাদের সফল করেছিল।

স্বাধীনতার অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেল। আমরা উদযাপন করেছি অনেকগুলো স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস। কিন্তু ১৯৭১ সালের সেই হায়েনারা এখনও যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা কখনও এ-দেশটাকে বাংলাদেশ বলে মনে করতে পারে না, তারা এখনও আমার সোনার বাংলাকে পাকিস্তানে রূপান্তর করার ঘৃণ্য চেষ্টা চালাচ্ছে।

অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত। সেই রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের পরবর্তী প্রজন্মরা এদেশে অবস্থান করে এদেশের স্বাধীনতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রমহানি হওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটু কথা এবং মিথ্যাচারে লিপ্ত। তারা যেন তাদের পাকিস্তানি আদর্শ বাস্তবায়নে উঠে-পড়ে লেগেছে। তারা যার-যার অবস্থান থেকে ঘৃণ্যতম কাজ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অবকাঠামো নড়বড়ে করে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। তারা দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র চালিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার পায়তারায় লিপ্ত।

আমাদের ৯ মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে, তা দেখে সারা বিশ্বের মানুষ হতবাক হয়েছিল। অন্য একটি রাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা লাভ করার জন্য যে আকুলতা বাঙালিদের প্রাণে সঞ্চার হয়েছিল তা দেখে আরও উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগিয়েছিল বিশ্ববাসী। তখনকার মানুষগুলো এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে পরিলক্ষিত করেছিল।

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্য সহযোগিতা করার নিমিত্তে ওই দেশের শিল্পী ও ব্যান্ডদল গুলো বিভিন্ন কনসার্টের মাধ্যমে অর্জিত অর্থগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের জন্য পাঠিয়েছিল। সেই ইতিহাসতো সকলেরই জানা। এ জন্য স্বাধীনতা বিরোধী বা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যতই অপপ্রচার করুক না কেন, সেটা নিজের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানোর মতোই ঘটনা হবে বলে আমার অভিব্যক্তি। কারণ এখন তো আধুনিক যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চাইলেও কেউ কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।

তারপরও সরকারকে যথেষ্ট সচেতন থাকা অতি জরুরী। এদেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে শুধু দেশীয় অপশক্তি নয়, আন্তর্জাতিক অপশক্তিগুলোও সোচ্চার এদেশের ক্ষতি সাধনের জন্য। যারা কখনো এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, চায়নি এদেশের সাধারণ মানুষগুলো পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হোক, তারাই মদদ দিচ্ছে ওইসব আন্তর্জাতিক অপসত্তাদের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছেন সে সোনার বাংলা তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে গড়া সম্ভব হচ্ছে।

ডিসেম্বর আমাদের গৌরবান্বিত মাস। এ মাসের তাৎপর্য বাঙালিদের কাছে অনেক। বাঙালিরা তাদের রক্ত বিসর্জন দেয়ার সার্থকতা এ মাসে এসে খুঁজে পেয়েছিল। এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির মশাল জ্বলেছিল এই বাংলাদেশের আকাশে। চারদিকে খুশির ধ্বনি ভেসে আসছিল সবার কানে। এই দিনটাতেই সকল বাঙালি ছুটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দিকে, সম্মান জানাতে এদেশের বীর সেনানীদের।

স্বাধীন বাংলাদেশকে যেন একাত্তরের হায়েনারা আর আক্রমণ করা বা আক্রমণ করার পরিকল্পনা না করতে পারে সেজন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম তথা নতুন প্রজন্মদের সদা জাগ্রত থাকতে হবে। একসাথে রুখে দিতে হবে সেই সব দেশবিরোধী দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রদের।

লেখক

সাজ্জাদ হোসেন সজীব
সাবেক ছাত্রনেতা ও সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
ই-মেইল: sazzad1989@yahoo.com

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর