thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের উপন্যাস–বৃদ্ধাশ্রম (পর্ব ৬,৭ ও ৮)

২০১৬ ডিসেম্বর ১৩ ২০:৫০:২৪
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের উপন্যাস–বৃদ্ধাশ্রম (পর্ব ৬,৭ ও ৮)

ছয়

নিজের ঘরে শুয়ে আছে আজমল। সে রীনার কথা ভাবছে। রীনা হাসপাতাল থেকে ফিরে আরো অগ্নিমূর্তি হয়ে আছে। প্রয়োজন ছাড়া আজমলের সঙ্গে কথা বলছে না। যে টুকু বলছে তা দায় সারা। তার আচার আচরণে মনে হচ্ছে সে যেন এক অচেনা পরিবেশে এসেছে। এই বাড়ির কাউকে চেনে না সে। তবে স্ত্রীর এই পরিবর্তন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই আজমলের। সেও রীনার সঙ্গে তেমন কথা বলছে না। ইদানিং অফিসে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে সে। গেলেও খুব একটা সময় দেয় না। তার সম্স্ত চিন্তা মাকে ঘিরে। যে করে হোক মাকে ফিরিয়ে আনবে সে। মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এমন মুখ তার নেই। তাছাড়া বিষয়টা জানাজানি হলে ছেলে অভিষেকেরও তার সম্পর্কে আজীবনের জন্য একটা নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেবে। সমাজের কাছের হেনস্থা হবে । কিন্তু এর পরও সে মায়ের কাছে যাবে। ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে। এটা না করতে না পারলে কিছুতেই প্রশান্তি পাচ্ছে না সে। আজমল যখন এমন ভাবনায় মগ্ন তখন ঘরে আসে অভিষেক।

পাপা কি ঘুমিয়ে গেছো?

না কিছু বলবে। আজমলের উত্তর।

লাভলু আংকেল এসেছেন। ছাদে যেতে বলেছেন তোমায়।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও।

অভিষেক বেরিয়ে গেলে বিছানা ছাড়ে আজমল। তার এখন ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া বন্ধু লাভলুকে ইদানিং সে সহ্য করতে পারে না। কাছের বন্ধু, বলে বলতেও পারে না কিছু। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাদে যায় আজমল। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে লাভলু।

কেমন আছিস আজমল ?

ভালো তোর কী খরব ?

চলছে । একটা কথা বলতে তোর বাসায় এলাম?

তার মানে কোন কারণ ছাড়া এখন আর তুই আমার বাসায় আসিস না। এতো ফরমাল হলি কবে থেকে ?

আচ্ছা হয়েছে এসব বাদ দে। ফান ভালো লাগছে না। কাজের কথা শোন ।

ঠিক আছে বল কী বলবি?

বলছি ভাবীর সঙ্গে ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেল ?

মিটিয়ে ফেলব মানে ! ওর সঙ্গে তো মিটিয়ে ফেলার মতো কিছু হয়নি।

না তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু ওই দিনের ঘটনার পর থেকে ভাবী কেমন আপসেট হয়ে আছে , লক্ষ করেছিস।

সেটা তার ব্যাপার। হ্যা এটা জানি যে আমি যেটা করেছি সেটা ঠিক করিনি। রীনাকে ওভাবে আঘাত করা উচিত হয়নি । কিন্তু আমিও তো রক্ত মাংসের মানুষ ! কতক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখা যায় বল ?

জানি তখন তোর মাথা ঠিক ছিলো না। রেগে গেলে মানুষ অনেক কিছুই করে। এমন কী সে যা কখনো ভাবেনি তাও। কেন মনে নেই আজাদ স্যার বলতেন না জজ সাহেব বিচার করেন আবার পরিস্থিতিতে তিনি খুনও করতে পারেন।

এখন তুই বল সে দিন কী করার ছিলো আমার।

তোর বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি। এসব নিয়ে আর ভাবিস না দোস্ত। তুই ইজি হয়ে যা দেখবি ভাবীও ইজি হয়ে যাবে।

মাকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে আমি ইজি হতে পারব না লাভলু।

কী বলিস এর মধ্যে আবার আন্টিকে ফিরিয়ে আনবি তাতে অশান্তি আরো বাড়বে না ?

বাড়লে বাড়ুক। এই জায়গায় আমি আর কম্প্রোমাইজ করতে পারব না। তুই কী পারবি তোর মাকে বৃদ্ধ নিবাসে রেখে আসতে।

আজমল একটা কথা শোন। এখন আন্টিকে ফিরিয়ে আনলে পরিবেশটাই বদলে যাবে। বিষয়টা জেনে যাবে অভিষেক। এতে ওর মানসিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হবে। যা ওর বভিষ্যত নষ্ট করে দেবে। তোদের সম্পর্কে ওর মনে কী ধারণা তৈরি হবে চিন্তা করতে পারিস ?

আমি এখন কী করব বলত। মাথাটাই মনে হয় খারাপ হয়ে যাবে। ইদানিং মাঝে মাঝেই মাথাটা গরম হয়ে যায়।

শোন মাথা গরম করলে চলবে না। বিষয়টা সহজভাবে নে। আমাদের দেশে এখনো বৃদ্ধনিবাস সংস্কৃতি ওভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব নিয়মের প্রচলন রয়েছে। সেই সব দেশের বৃদ্ধরা এক সময় নিজেরাই বৃদ্ধ নিবাসে চলে যায়। ছেলে মেয়েরাও আপত্তি করে না। এতে কিন্তু তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় না। মাঝে মধ্যে তারা এসে বাবা মাকে দেখে যায়। দেখিস আমাদের দেশে এক সময় এই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে। হয়ত এর জন্য একটু সময় লাগবে এছাড়া অন্য কিছু নয়।

ওইসব দেশের সঙ্গে আমাদের কেন গুলিয়ে ফেলছিস লাভলু। ওরা যেটা পারে আমরা সেটা পারি না। আর সংস্কৃতি গড়ে ওঠে স্থান কাল পাত্র ভেদে। আমি যে কাজ করেছি তা ঠিক করে নি।

যেটা হবার সেটা হয়ে গেছে। আমি তো বললাম সমাজ আর অভিষেকের কথা ভেবে আন্টিকে ফিরিয়ে আনতে না করছি। এখন তুই ভেবে দেখ কী করবি।

কী করব সেটায় ভাবতে পারছি না। বার বার মনে হচ্ছে মা ওখানে প্রতিদিন মানসিক কষ্টে ভুগছে। চোখ বন্ধ করলেই আমি মায়ের মলিন মুখটা দেখতে পাচ্ছি।

আজমল তুই এক কাজ করতে পারিস ?

কী কাজ ?

তুই বৃদ্ধনিবাসে যা। গিয়ে আন্টির সঙ্গে কথা বল। ক্ষমা চেয়ে সব খুলে বল। কোন পরিস্থিতিতে তুই এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলি সব বলবি। দেখবি আন্টি তোকে ক্ষমা করে দেবে।

তার পর , মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসব না।

আসতে চাইলে নিয়ে আসবি। তার পর যা হবার হবে।

আমার মাথায় একটা চিন্তা আসছে লাভলু ।

কী চিন্তা ?

ভাবছি এই বাড়িটা বিক্রি করে দেবো। মাকে নিয়ে অন্য বাড়িতে বাড়িতে উঠবো। সেখানে কেউ এ বিষয়টি জানতে পারবে না।

আর অভিষেক, তাকে কী ভাবে বুঝাবি ?

সেটা সময় বলে দেবে। হয়ে যাবে এক ব্যবস্থা। মা-ই অভিষেককে বুঝাতে পারবে।

সাত

রেহেনার ঘুম আসছে না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে । আজ মনটা ভালো নেই। এখানে আসার পর তার মন ভালো থাকে খুব কম। মন ভালো থাকার অভিনয় করে। যখন বৃদ্ধাশ্রমের অন্য নারীরা তার কাছে আসে তখন সে এক ভিন্ন মানুষ হয়ে যায়। কাউ কে কিছু বুঝতে দেয় না। তাদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলে। ব্যতিক্রম শুধু পরিজান। তার কাছে অনেক কথা শেয়ার করে রেহেনা। তারা চলে গেলে অতীত জীবন নিয়ে ভাবতে থাকে। ফেলে আসা দিনের কথা ভেবে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নানান স্মৃতিতে নিবিষ্ট থাকে। একাকী মানুষ স্মৃতিতে ডুবে থাকতে ভালো বাসে। কিছু মানুষ স্মৃতি আকড়ে বাঁচতে চায়। এখন তাদের মতো দশা হয়েছে রেহেনার। এক তার স্বামীর কথা খুব মনে হচ্ছে। বড় ভালো লোক সে। মা-বাবা ভক্ত, স্ত্রী ভক্ত, সন্তান ভক্ত সব কিছুই ছিলো তার চরিত্রে। তার মতো ভালো মানুষকে স্বামী হিসাবে পেয়ে গর্বিত রেহেনা। রূপ লাবণ্য থাকলেও মামা বাড়িতে মানুষ হওয়া রেহেনার কখনো খুব ভালো ঘর থেকে বিয়ে আসেনি। অথচ এক দেখাতেই রেহেনাকে পছন্দ করেছিলো সে। রেহেনারও প্রথমে দেখাতে ভালো লেগেছিলো ২৭ বছরের রোগা পাতলা চেহারার এ মানুষটাকে। এই যুবকের চোখের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো রেহেনা। বিয়ের পরে সুখ শান্তিতে সংসার চলছিলো তাদের। শ্বশুর, শাশুড়ি স্বামী আর ননদ নিয়ে ভরপুর ছিলো তার সংসার। শ্বশুর চাকরি করতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে। স্বামী রাজ্জাক ছিলেন বিদ্যুতের প্রকৌশলী। সকালে বাবা ছেলে বের হয়ে যেতো। ননদ চলে যেতে কলেজে। সংসার সামাল দিতো বউ-শাশুড়ি। তার বিয়ের এক বছরের মাথায় লন্ডন প্রবাসী এক ছেলের সাথে বিয়ে হয় ননদ রুপার। রুপা চলে যাওয়ার পর শাশুড়ির মন খারাপ থাকত। কিন্তু রেহেনা তাকে কখনও মেয়ের কষ্ট বুঝতে দেয়নি। তাদের বউ-শাশুড়ির রসায়নটা ছিলো চোখে পড়ার মতো। পাড়ার অন্যেরা যার তারিফ করত। মেয়ে চলে যাওয়ার পর সারাক্ষণ রেহেনার কাছে ভাই এনে দেওয়ার জন্য আবদার করত। শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির কথা সত্যি হয়। দু’ বছরের মাথায় জন্ম হয় আজমলের। কিন্তু সুখ বেশি দিন সহ্য হয়নি তার। আজমলের জন্মের কিছু দিনের মধ্যে এক সড়ক দুর্ঘটনার মারা যায় রেহেনার শ্বশুর-শাশুড়ি। ভাগ্য ভালো সে দিন বেঁচে গিয়েছিলো রেহেনা ও আজমল। আজো সে কথা মনে হলে শরীর শিউরে ওঠে রেহেনার। মাঝে মাঝে মনে হয় সেদিন যদি তার মৃত্যু হয়ে যেত তাহলে আজ জীবন নিয়ে তাকে মোটেও ভাবতে হতো না। তার ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায় ছেলের কথা ভেবে। ছোট্ট বাচ্চাটার কথা ভেবে হয়ত সৃষ্টিকর্তা রেখে গিয়েছিলো সে দিন। কথায় বলে অভাগা যে দিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়। রেহেনার হয়েছিলো সেই দশা। ছেলের বয়স ৭ বছর না হতেই দুদিনের জরে দেহ ত্যাগ করে স্বামী রাজ্জাক। তার মৃত্যুর পর চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে রেহেনা। মামাবাড়ির সবাই এবারো পাশে ছিলো। তারা চেয়েছিলো ছেলেসহ রেহেনাকে নিয়ে যেতে। বিন্তু রেহেনা যায়নি। ছোট সন্তান নিয়ে স্বামীর ভিটাতে ছিলো সে। রাজ্জাকের পেনশনের আর নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে তার সংসারে চলত। শুনতে হতো প্রতিবেশির নানা কুট কথা। যে নারীর অল্প বয়সে স্বামী মারা যায় সেই বুঝতে পারে বিধবা হওয়ার কি যন্ত্রণা। মানুষের সমাজে একই সঙ্গে কিছু পশু বাস করে তা দেখতে পায় এই বিধবারা। বুঝতে পারে নোংরা সমাজটাকে। রেহেনা সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলো।

আট

বৃদ্ধনিবাসে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে আজমল। কী করবে বুঝতে পারে না। তার শরীরটা প্রচণ্ড ঘামছে। বিষয়টা খেয়াল করে রিসিপশনিস্ট। সে আজমলকে বসতে দিয়ে ফ্যানের গতি বাড়িয়ে দেয়। আজমল বলে এক গ্লাস পানি হবে। পিওনকে পানি দিতে বলে রিসিপশনিস্ট । পানি খেয়ে কিছুটা ক্লান্তি কমে আজমলের।

আপনি কি কোন দরকারে এসেছেন ? জানতে চায় রিসিপশনিস্ট।

জি একটু দরকার। আমি একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বলে আজমল।

আপনার পরিচয়টা বলবেন প্লিজ।

আমার নাম আজমল। আমার মা এখানে থাকেন। যদি একটু উনার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন উপকার হয়।

এভাবে বলছেন কেন, অবশ্যই দেখা করবেন। কি নাম উনার?

রেহেনা বেগম।

নামটি রিসিভশনিস্টের কাছে অপরিচিত মনে হয়। সে বলে, উনার কি অন্য কোন নাম আছে ?

না। উনি অনেক দিন ধরে এখানে থাকছেন।

রেজিট্রি খাতা ভালো করে দেখে রিসিভশনিস্ট বলে। না আমাদের এখানে এই নামে কেউ থাকেন না।

আপনার বোধ হয় ভুল হচ্ছে। গত তিন বছর ধরে উনি এখানেই আছেন। একটু ভালো করে দেখুন প্লিজ।

আপনি সর্বশেষ কত দিন আগে উনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন ?

এবার আজমলের জিহ্বা আটকে আসে। তো তো করে বলে তিন বছর আগে উনাকে রেখে গিয়েছিলাম তারপর আর আসা হয়নি।

আচ্ছা দয়া করে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। রিসিপশনিস্ট ভিতরে চলে যায়।

আজমলের টেনশন বাড়ে। মা এখানে নেই মানে! তাহলে কি মা মারা গেছে! ভাবতেই তার শরীর শিউরে ওঠে। মায়ের ছায়ামূর্তিটা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে তুমি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাকে এখানে রেখে গিয়েছিলে আমি সেই কাজটা আরো সহজ করে দিলাম। শুধু তোমাকে নয়, পৃথিবীর সব মানুষকে মুক্তি দিয়ে চলে গেলাম।

আজমলের চোখের পাতা ভিজে যায়। পরোক্ষণে ভাবে মায়ের তেমন কিচ্ছু হয়নি। সে শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছে।

ফিরে এসে রিসিপশনিস্ট বলে, আপনি ভেতরে আসুন। আজমলের দুচিন্তা দূর হয়। ভাবে এবার নিশ্চয় মায়ের সঙ্গে দেখা হবে। সে হাঁটতে শুরু করে রিসিপশনিস্টের সঙ্গে । তাকে রিসিপশনিস্ট স্থাপনা পরিচালকের রুম দিয়ে চলে যায়।

মুখ ভার করে বসে আছেন ব্যস্থাপনা পরিচালক। তাকে দেখে আমজমেলর সন্দেহ হয়। তাহলে তার প্রথম ধারণাটাই ঠিক। মা কি তাহলে বেঁচে নেই! সে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

বসুন প্লিজ। বলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আজমল বসে।

আপনি রেহেনা বেগমের খোঁজে এসেছেন ?

জি। উনি আমার মা, উনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।

কেন নিয়ে যেতে এসেছেন, আপনিইতো উনাকে আমাদের এখানে রেখে গিয়েছিলেন, তাই না ?

জি। আসলে সেটা ছিলো ভুল সিদ্ধান্ত। মাকে এখানে রেখে একদিনও ভালো থাকতে পারিনি আমি। এখন ভুল সংশোধন করতে চাই।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোন কথা বলেন না।

তার নীরবতা ভালো লাগে না আজমলের। সে বলে, রিসিপশন থেকে বলা হয়েছে মা এখানে নেই। মায়ের কি কোন সমস্যা হয়েছে, দয়া করে বলবেন ?

এবার মুখ খোলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বলে আপনি আপনার মাকে এখানে রেখে যাওয়ার কিছু দিন পরেই উনি চলে যান।

আজমলের বুক কেঁপে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তার ধারণাই ঠিক হলো। মা নেই। নিজেকে সামলে বলে, চলে গেছেন মানে, ঠিক বুঝলাম না কোথায় চলে গেছেন ?

সত্যি বলতে কী উনি সুযোগ বুঝে এখান থেকে পালিয়ে গেছেন। আপনি যদি বলেন এটা আমাদের গাফিলাতি তাহলে তাই।

সেটা তো বটেই আপনাদের এখান থেকে একটা লোক মিসিং হলো আর আপনার হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, কিছুই করার ছিলো না আপনাদের ?

করেছিলাম। পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, জিডি করেছি,সাধ্যমতো নানা জায়গায় খুঁজেছি। এই ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিলো না। আর আপনি আমাদের এখানে যে ঠিকানা রেখে গিয়েছিলেন তা ছিলো ভুল। আমরা সেই ঠিকানায় যোগাযোগও করেছিলাম।

এবার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধী মনে হয়। ভাবে তার চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আর কেউ নেই। সত্যিই তো রীনার বু্দ্ধি মতো সে ভুল ঠিকানা রেখে গিয়েছিলো।

এবার আপনিই বলুন, আর কি করার ছিলো আমাদের ?

কিছুক্ষণ নীরব থেকে আজমল বলে, আচ্ছা আমার মা আত্মহত্যা করতে পারে এমন কোন লক্ষণ কী কখনো দেখেছিলেন ?

না তেমন কিছু আমাদের চোখে পড়ে নি । তবে উনি খুব গম্ভীর থাকতেন। কিন্তু পালিয়ে যাবে এমন ভাবি নি কখনো। আচ্ছা কিছু মনে করবেন না আপনাকে একটা কথা জানাতে চাই ?

জানি আপনি কি জানতে চাইবেন। আসলে আমার কি হয়েছিলো নিজেই জানি না।

চলবে….( প্রতি সপ্তাহের শনিবার মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে উপন্যাসটি)

উপন্যাস : মুস্তাফিজু রহমান নাহিদ

প্রচ্ছদ : সাদিক আহমেদ

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর