thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

রমনার গাবতলায় ক্ষণিকের আনন্দ মিলন (ভিডিওসহ)

২০১৬ ডিসেম্বর ১৪ ১৯:৪১:৪১
রমনার গাবতলায় ক্ষণিকের আনন্দ মিলন (ভিডিওসহ)

ভোরবেলাতেই রমনার গাবতলায় ঢোল, খঞ্জনীর শব্দ ঘিরে মানুষের ভিড় জমে গেছে। দূর থেকেও শোনা যাচ্ছে ঢোলের শব্দ।

কাছাকাছি যেতেই দেখা গেল ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গানের সুরে মজে আছে পুরো মজলিশ। রমনা পার্কের লেকের পশ্চিম তীর ঘেঁষে গাবতলায় চলছে মানুষের ‘ক্ষণিকের আনন্দ মিলন’।

অগ্রহায়ণের বিদায়লগ্নে সকালের মিষ্টি রোদের আদর পুরো শহরকে আপ্লুত করলেও রমনার গাছগাছালিতে রোদ-পাতার ঝিলিমিলি খেলা চলে। তখনও গাবতলার পুরো দখল নিতে পারেনি পুবাকাশের রোদ। গত ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালের তেমন আলো-ছায়ার খেলার মাঝেই বসে ক্ষণিকের আনন্দ মিলন।

এ মিলনে শামিল বৃদ্ধ, তরুণ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ। এরপর ‘মিছে মায়ায় মজিয়ে মন কি করো রে/ তুমি বা কার কেবা তোমার এই সংসারে’ গানটি দিনের শুরুতেই যেন গাবতলার ভিড়কে ভেদহীন অনন্ত রহস্যের ভাবে আবিষ্ট করে রাখে।

এমন আবহেই হয়ে যায় লালনের আরেকটি গান- ‘হাওয়া দমে দ্যাখ তারে আসলে বেনা/কে বানাইলো এমন রং মহল খানা।’

‘এ মিনতি করিরে, সোনা বন্ধু ভুইলোনা আমারে’ গানটি শুরু হলেই আনন্দ উদযাপনে যেন ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। অনেকেই নাচেন গানের সঙ্গে। ‘আয় খুকু আয়’ গানের সঙ্গে চলে অভিনয়ও।

‘একটা বোরকা পরা মেয়ে পাগল করেছে’ টাইপের চটুল গান নাচ-আনন্দের মাত্র আরও চাগিয়ে দেয়। নারীদের সঙ্গে বৃদ্ধরাও আনন্দে নাচতে থাকেন।

এই আসরের মধ্যমণি খবীর উদ্দিন খান। বয়স ৬৫ বছর। গায়ে কটকটে হলুদ উইন্ড জ্যাকেট, গলায় সাদা মাফলার, পরনে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। তিনি বিবাগী কোনো বাউল নন, তিনি সোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান।

আসরটি মূলত পরিচালনা করছিলেন খবীর উদ্দিন খানই। গানের ফাঁকে ফাঁকে মাইক্রোফোন নিয়ে রসালো আলাপে আনন্দ দিচ্ছিলেন উপস্থিত সবাইকে। যেন কর্তা সস্নেহে পরিবারের সদস্যদের আমোদ দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি নিজেও গাইলেন দুটি গান। পেশাদার শিল্পীদের সঙ্গে এখানে সদস্যরাও গান গেয়ে থাকেন।

জানা গেল, ব্যায়ামের পর প্রতি শুক্রবারই সংগঠন ‘ক্ষণিকের মিলন’ এর পক্ষ থেকে গাবতলায় এমন আসর বসে। এর পুরো ব্যবস্থাপনায় থাকেন খবীর উদ্দিন খান। খরচের প্রায় পুরোটাই তিনি বহন করেন।

ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, বিচারপতি, পুলিশ, সাংবাদিক, কবিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ‘ক্ষণিকের মিলন’ এর সঙ্গে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এর সদস্যরা।

এ সংগঠনের মধ্যে খবীর উদ্দিন একটি পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করেছেন। আসর ভাঙতেই তার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেল। বোরকায় মুখ ঢাকা একটি মেয়ে খবীর উদ্দিন খানের জন্য পিঠা নিয়ে এসেছেন। ভালবেসে ‘দাদু’র জন্য এনেছেন গাছের পেয়ারা, আরও নানা জিনিস। সবার মধ্যে বিতরণ করা হল এগুলো।

আসরের প্রধান দুই শিল্পীকে খবীর উদ্দিন খান ‘গুরু বাবা’ ও ‘গুরু মা’ বলে ডাকেন। আসর শেষে ঢুলীসহ বাদক, শিল্পীদের সম্মানী দিলেন সোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান। কয়েক জনকে বখশিশও দিলেন তিনি।

কিছু কথা তার সঙ্গে

তিনি কথা দিয়েছেন যাওয়ার আগে কথা বলবেন। ঠিক যাওয়ার আগে বললেন, ‘বল কি জানতে চাও?’ পঁয়ষট্টি বছর বয়সেও তার কণ্ঠ এবং শরীরে দুর্দমনীয় বলিষ্ঠতার ভাব রয়েছে।

কোন চিন্তা থেকে পার্কে এই আনন্দ আয়োজন- জানতে চাইলে খবীর উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি অন্যকে বিনোদন দিচ্ছি সেটা হচ্ছে সেকেন্ডারি, মূল হচ্ছে আমি বিনোদন পাচ্ছি। জীবনের অনেক পথ ঘুরে আমার উপলব্ধি- বাউল মন ধরাবাঁধা কিছু নয়। তারপরও আমি পরিবার, সমাজ, দেশ, রাজনীতি সবকিছুতেই কনসার্ন, মানে আমি সম্পৃক্ত। আমার হৃদয় সবসময় ফ্রি থাকতে ভালবাসে, আমি মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, উড়োজাহাজে, ফেরিতে যেখানে সুযোগ পাই আমি কিছু কথা বলতে ও গান, কবিতা, নৃত্য ইত্যাদি করতে পছন্দ করি।’

‘এটা আমার নিজের প্রথম ভাল লাগে। তারপরে অন্যরা বিনোদন পেয়ে উৎসাহিত হয়, খুশি হয়। অন্যের ভাল লাগায় আমিও উৎসাহিত হই’ বলেন তিনি।

এ শিল্পপতি বলেন, ‘প্রতি শুক্রবারই এখানে কিছু না কিছু হয়। আমি সব সময় থাকতে পারি না। আমি থাকলে জমকালো হয়। না থাকলে একটু কম হয়।’

কারা আসেন এখানে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ক্রস সেকশন অব পিপল মানে সব ধর্ম-বর্ণ, সব জাতপাত পেশার লোক আসে। আমাদের এখানে কোনো সভাপতি নেই, সেক্রেটারি নেই, যে আসে সেই আমাদের সদস্য।’

খবীর উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষণিকের মিলনের থিমটা এমন যে আমরা তো ক্ষণিকের জন্যই আসি। আমার জগিং ও ব্যায়াম করার পর আমরা সামান্য কিছুক্ষণ আড্ডা দেই। এখানে ১২টি অর্গানাইজেশন আছে। আমাদের অর্গানাইজেশনটা হচ্ছে সবেচেয়ে ক্ষুদ্র, বাট উই ম্যাটার্স। আমাদের এখানে অন্য ধরনের প্রাণের উচ্ছলতা পাওয়া যায়, অন্যখানে তা পাওয়া যায় না। আমরা ফর্মালিটি করি না, চাঁদা নেই না।’

এ সময় পাশ থেকেই একজন নারী সদস্য বলে উঠেন, ‘এখানে আছে ভালবাসা, আছে স্বস্তি, আছে শান্তি।’

‘এখানে অল্প কিছু খরচ হয়, অলমোস্ট সবই আমি বহন করি’ বলেন খবীর উদ্দিন।

ক্ষণিকের মিলন-এর কর্মকাণ্ড শুধু রমনা পার্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পার্কের বাইরে মাওয়ায় যাই, প্রায়ই লালন সাঁইজির আখড়ায় যাই। সিলেট যাই, চট্টগ্রাম যাই। কর্মের ফাঁকে ফাঁকে আমরা বিনোদন পাওয়া ও দেওয়ার চেষ্টা করি। অসাম্প্রদায়িকতা ছাড়াও আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ রক্ষা নিয়েও কথা বলি।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/জেডটি/এনআই/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর