thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

বছরের শেষদিকে মূল্যসূচক ও লেনদেনে চমক

২০১৬ ডিসেম্বর ২৮ ২২:৫২:৩৫
বছরের শেষদিকে মূল্যসূচক ও লেনদেনে চমক

চলতি বছরের প্রায় পুরোটা সময় শেয়ারবাজার ঢিলেঢালাভাবে চলেছে। তবে বছরের শেষের দিকে এসে চমক দেখা গেছে মূল্যসূচক ও আর্থিক লেনদেনে। মূল্যসূচক প্রায় আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, লেনদেন বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে। অর্থনীতির সব সূচকে ইতিবাচকতা ও শেয়ারবাজারে আস্থার প্রতিফলনে সূচক ও লেনদেন এমন অবস্থানে উঠে এসেছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি।

৪৬২৯ পয়েন্ট মূল্যসূচক নিয়ে চলতি বছরের যাত্রা শুরু হয়। বছরের প্রথম কার্যদিবসেই প্রায় ৬ পয়েন্ট পতন দিয়ে শুরু হয়। এরপরে কয়েক কার্যদিবসের উত্থানে ১৯ জানুয়ারি ৪৬৯৭ পয়েন্ট হয়। যে মূল্যসূচকে পৌছাতে পরবর্তীতে অপেক্ষা করতে হয় ৪ অক্টোবর পর্যন্ত। এরমধ্যে ধারাবাহিক পতনে ২মে চলতি বছরের মূল্যসূচক সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে যায়। ওইদিন মূল্যসূচক ছিল ৪১৭১ পয়েন্টে। এরপরে আবার ধারাবাহিক উত্থানে বছরের শুরুর সূচকে (৪৬২৯ পয়েন্ট) পৌছায় ৪ অক্টোবর।

এদিকে ৪ অক্টোবরের পরে শেয়ারবাজারে কিছুটা নেতিবাচক অবস্থা দেখা যায়। যাতে কয়েকদিনের লেনদেনে প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে ৩১ অক্টোবের ৪৫৯২ পয়েন্ট দাঁড়ায়। এরপরেই শুরু হয় মূল্যসূচকের উত্থানে চমক ও দেখা যায় ‘ষাঁড়ের দৌড়’। নভেম্বর মাস ও ডিসেম্বরের ‘ষাঁড়ের দৌড়ে’ সূচক উঠে যায় ৫ হাজার পয়েন্টে। যা স্পর্শ করে প্রায় ২৪ মাসেরও বেশি সময় পর।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনও বছরের শেষেদিকে এসে চমক দেখা যায়। চলতি বছরে ৭ কার্যদিবসে হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে। এই ৭ কার্যদিবসই হয়েছে ২২ নভেম্বরের পরে। ২৩ নভেম্বর, ৮ ডিসেম্বর, ১৪ ডিসেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ১৯ ডিসেম্বর, ২৬ ডিসেম্বর এবং ২৭ ডিসেম্বর হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে। এই ৭ কার্যদিবস ও পুরো বছরের মধ্যে ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে, ১০ জুলাই বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এদিন ২০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, শেয়ারবাজার বর্তমানে স্থিতিশীল ও ভালো অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো মূল্যে এই শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল রেখে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে লোভে পড়ে অধিক মুনাফার আশায় সর্বশান্ত হওয়ার চেয়ে অল্প মুনাফা করা ভালো হবে বলে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন শেয়ারবাজার নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর চেয়ে বেশি আশাবাদী। একইসঙ্গে মূল্যসূচক বেড়ে ১০ হাজার হলেও কোনো সমস্যা নাই বলে মনে করেন তিনি। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে দেশে কয়েকটি পদ্মাসেতু তৈরির অর্থায়ন করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান জানান, শেয়ারবাজারে প্রতিদিন উন্নয়ন হচ্ছে। যা দেখে বিদেশিরা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এদিকে ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারের জন্যে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারেনি শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক মামলা না থাকায় প্রায় পুরো বছর ট্রাইবুন্যালের অলস সময় কেটেছে। তবে বছরের শেষ দিকে একটি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছে ট্রাইবুন্যালে। মাত্র একটি মামলা নিয়েই বিচারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ ট্রাইবুনালটি। যদিও এ সংশ্লিষ্ট ৫৩৫টি মামলা রয়েছে। তবে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর হয়েছে মাত্র ২৫টি। এর মধ্যে ৬টি মামলার রায় হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছে ও ১৬টি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নতুন নতুন কোম্পানি আনা হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। কারণ, অর্ধেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে এসে মূল্যসূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চলতি বছরে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়া ১৫টি কোম্পানির মধ্যে ৭টি (৪৭ শতাংশ) প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অন্তর্ভুক্তিকালীন সময়ের তুলনায় নিচে নেমে এসেছে। যা ডিএসইএক্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সম্প্রতি ইউএফএস প্যাসিফিক ডেনিমস ও ফরচুন সুজের আর্থিক অবস্থা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিএসইসি। এ ছাড়া প্রগতি লাইফ ইউনিট ফান্ড নিয়ে ভুল বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও ভুলকে স্বাভাবিক বলে দাবি এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

এদিকে ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সিরডাপে বিশ্ব প্রতিযোগিতা রিপোর্টে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে শেয়ারবাজার এখনো উদ্বেগের কারণ হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার ইনসাইডার ট্রেডিং দ্ধারা নিয়ন্ত্রিত বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নের স্বার্থে এসব সমস্যা সমাধান করা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়।

বছরজুড়ে স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) খুঁজে বের করা। যদিও তা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ এই বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রয় করলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

দেখা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর শেষে ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারে সম্পদ (এনএভিপিএস) মূল্য দাঁড়ায় ১১ টাকা ৬৮ পয়সা। এ অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ারে আয় (ইপিএস) করে ৭৫ পয়সা। আর সর্বশেষ অর্থবছর (২০১৫-১৬) শেষে শেয়ারপ্রতি আয় আরও কমেছে। এ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানাটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৭০ পয়সার মতো। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি শেয়ারে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টাকা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দামে শেয়ার বিক্রি করলে বড় ধরনের লোকসান হবে ট্রেকহোল্ডারদের।

কারণ, বর্তমানে ডিএসইর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে শেয়ার রয়েছে ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০টি। এই শেয়ারের মালিকানায় আছেন ২৫০ জন। এ হিসাবে প্রত্যেক ট্রেকহোল্ডার (শেয়ারের মালিক) ৭২ লাখ ১৫ হাজার ১০৬টি করে শেয়ার পাবেন। এতে প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে বিক্রি করলে একজন ট্রেকহোল্ডারের সব শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। অথচ ৪ বছর আগে একটি সদস্য পদ কিনতে ৩২ কোটি টাকার ওপরে খরচ করতে হয়েছে।

২০১৫ সালে রাইট অনুমোদন শূণ্য থাকলেও ২০১৬ সালে তা লাঘব হয়েছে। এ বছর সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, জিপিএইচ ইস্পাত ও বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম রাইট শেয়ারের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছে। এই ৩ কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে।

২০১৬ সাল রাইট শেয়ারে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে পড়েছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)। কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১২টি। তবে টাকার অংকে চলতি বছরে বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের বছরের ৮৩০ কোটি ৭২ লাখ টাকার বিপরীতে এ বছর ৮৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। উভয় বছরে ৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থপনা পৃথকীকরণ) মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জে ব্রোকার মালিকদের ক্ষমতার খর্ব হয়। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের বাহিরে একত্রিত হয়ে কাজ করার লক্ষে একটি সংগঠন তৈরি করা জরুরি উপলব্ধি করে ডিএসই’র ব্রোকাররা। এরই আলোকে ২০১৫ সালে ডিএসই বোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ) নামে একটি সংগঠন করা হয়। যেখানে চলতি বছরের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে ১৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। দুই বছর মেয়াদি এই পর্ষদে প্রথম বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট এন্ড প্রোমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোশতাক আহমেদ সাদেক এবং সহ-সভাপতি হিসেবে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন নির্বাচিত হয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর