thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া বাংলা একাডেমির কাজ নয়

২০১৬ ডিসেম্বর ২৯ ১৮:১৪:০৭
মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া বাংলা একাডেমির কাজ নয়

প্রকাশনা সংস্থা ‘শ্রাবণ’কে আগামী দু-বছরের জন্য অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে বাংলা একাডেমি। কেন নিষিদ্ধ করা হলো তার কোনো সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা একাডেমি কর্তৃপক্ষ দেননি, এমনকি ‘শ্রাবণ’-এর প্রকাশককেও সেটা দাফতরিকভাবে জানানো হয়নি। তিনি স্টল বরাদ্দের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানতে পেরেছেন।

গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৬-এর বইমেলায় গ্রেফতারকৃত প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিকের মুক্তির আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার কারণে ‘শ্রাবণ’ প্রকাশনা সংস্থাকে দুই বছরের জন্য মেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে আমরা যেমন- ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি তেমনই এই অদ্ভুত-উদ্ভট ব্যাখা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছি। এর মানে কি এই যে, অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত কোনো নাগরিকের পক্ষে আর কেউ দাঁড়াতে পারবেন না? আমরা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করে আসছি যে, পরপর তিন বছর একাডেমি কর্তৃপক্ষ এই ধরনের হঠকারি, আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে; যেগুলো বাক-স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ হিসেবেই গণ্য করা যায়। ২০১৫ সালের বইমেলায় রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একটি অনূদিত গ্রন্থকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাবির মুখে ওই স্টলটিই বন্ধ করে দেয় একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এমনকি ওই বইটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা সত্ত্বেও রোদেলাকে আর স্টল খুলতে দেওয়া হয়নি।

২০১৬ সালে ওই একই মৌলবাদী গোষ্ঠীর দাবির মুখে ব-দ্বীপ প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করেই ক্ষান্ত হননি একাডেমি কর্তৃপক্ষ, প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিককে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হলেও একাডেমি এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে, বইটি নিয়ে এই আপত্তি সেটি কিন্তু ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়নি, হয়েছে তারও কয়েক বছর আগে। এই তিন-চার বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রের চরিত্রের কী এমন পরিবর্তন ঘটলো যে, একটা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে এরকম পদক্ষেপ নিতে হলো? রাষ্ট্র, সরকার এবং একাডেমি কর্তৃপক্ষের একটা গোষ্ঠীর কাছে এই নতিস্বীকার কেন?

এবার নিষিদ্ধ করা হলো শ্রাবণ প্রকাশনীকে। শামসুজ্জোহা মানিকের মুক্তির দাবিতে কথা বলা এবং এই ঘটনায় একাডেমির ভূমিকার সমালোচনা করার ‘অপরাধে’! কিন্তু এই ‘অপরাধ’ তো প্রকাশক করেছিলেন গত বইমেলা চলার সময়ে, তখন তার স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়নি কেন? আর এই ‘অপরাধ’র শাস্তি কি এখন সেই গোষ্ঠীটি দাবি করেছে? তাহলে কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে?

এইসব ঘটনায় আমরা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও হতবাক হয়েছি। আমরা মনে করি একুশ মানে ‘মাথা নত না করা’। আর বাংলা একাডেমির কাজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া নয়, বরং একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর দায়িত্ব হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া। আমরা সবসময়ই লেখক-প্রকাশক-সংস্কৃতিকর্মীসহ দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছি। এবারও সেই দাবির পুনরুল্লেখ করছি। একই সঙ্গে দাবি করছি শ্রাবণ প্রকাশনীর বিরুদ্ধে গৃহীত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত একাডেমি কর্তৃপক্ষ না নিতে পারে তা নিশ্চিত করা হোক।

[বাংলাদেশ লেখক ঐক্যের পক্ষে ইমতিয়ার শামীম, আহমাদ মোস্তফা কামাল, চঞ্চল আশরাফ, রাখাল রাহা, ফাহমিদুল হক, শওকত হোসেন, আরশাদ সিদ্দিকী ও মোশাহিদা সুলতানা]

(দ্য রিপোর্ট/এপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর