thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড়করণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় অর্জন

২০১৬ ডিসেম্বর ৩০ ২২:২৯:৪২
ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড়করণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় অর্জন

বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো (এলডিসি) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় পেয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ সুবিধা কার্যকর হয়। ফলে বাংলাদেশ মেধাস্বত্বের জন্য কোনো অর্থ ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনাবেচা করতে পারবে। এ সুবিধা না পেলে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানির বাজার হারাত এবং দেশে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের দাম বাড়ত। এতে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ ওষুধ ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতেন। তাই ২০১৬ সালে সরকারের প্রচেষ্টায় ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়াকে বড় অর্জন বলে মনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) কাউন্সিল স্বল্পোন্নত সদস্য দেশগুলো জন্য ‘সর্বোচ্চ ছাড়’ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ১৫-১৮ ডিসেম্বর নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে দ্বিতীয় মেয়াদে মেধাস্বত্ব ছাড়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ২০০১ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় ট্রিপস সমঝোতা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই বিশেষ সুবিধার মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশ প্রায় ২৫০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণ করেছে। আর ৩০টির বেশি কোম্পানি ১০৭টি দেশে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ রফতানি করছে। ১৬ কোটি মানুষের জন্য ৯৭ শতাংশ ওষুধ তৈরি করছে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া চলতি বছরে রফতানিতেও বড় ধরনের অর্জন রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এরই ধরাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের রফতানি আয়ের তুলনায় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এদিকে একক মাস হিসেবে নভেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের রফতানি খাত থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪২৪ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। অর্থাৎ রফতানি আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ রফতানি খাত থেকে আয় করেছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছর রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ আয় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্ততরের (আরজেএসসি) ওয়েবসাইট জাতীয় ই-তথ্যকোষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এর ফলে যেকোনো গ্রাহক ঘরে বসেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। আর এক ঘণ্টাতেই নামের ছাড়পত্র নেওয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে টাকা পরিশোধ করা যাবে।

আরজেএসসিতে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে, নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ইউজার আইডি ব্যবস্থাপনায় নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনে আবেদন বা দলিলপত্র দাখিল করা সহজ হবে। নিরাপদ ও আগের পদ্ধতির সমস্যাগুলো দূর হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যেসব প্রতিষ্ঠনিক ইউজার আইডি প্রদান করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে নতুন পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক আইডি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাডমিন আইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এদিকে চলতি বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল। পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন পার্বণগুলোতে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়েনি। বাজারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ছিলো। এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো প্রকার সুযোগ যাতে গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল প্রাত্যহিক পরীবিক্ষণ করেছে। আর আপৎকালীন সরকার টিসিবির মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করে তা সুলভমূল্যে বাজারে বিক্রি করছে। সারা বছর বাজারে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখাকে অন্যতম একটি অর্জন বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বে ছাড় বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সুবিধা আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এত বছর বাড়ানো হয়েছে। ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ট্রিপসের মেয়াদ এতো বছর বাড়ানো হয়। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। এটা না হলে দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে ওষুধ ক্রয় করতে পাতেন না।’

তিনি বলেন, ‘আশা করছি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নির্ধারিত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে। এটা আমাদের আরেকটি বড় অর্জন হবে। আর আমরা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পেরেছি, যা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বিশেষ করে ঈদ ও বিভিন্ন পার্বণগুলোতে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। একই সঙ্গে এ বছর আরজেএসসি অটোমেটেড হয়েছে। এখন এক ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো রেজিস্ট্রেশন করে যায়। সার্বিক বিবেচনায় অনেক অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৬ বছরটি পার করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এস/এম/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর