thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

পাখিদের ক্যাম্পাস জাবি!

২০১৭ জানুয়ারি ০১ ১৮:২৪:১১
পাখিদের ক্যাম্পাস জাবি!

আব্দুল্লাহ শুভ, জাবি প্রতিনিধি : পাখিদের দলবেঁধে উড়ে বেড়ানো বা ফুরুৎ করে এগাছ থেকে ওগাছে যাওয়া অথবা সাঁই করে মাছরাঙার জল থেকে মাছ তুলে নেওয়ার দৃশ্য দেখে জীবনে একবারের জন্যে হলেও পাখি হতে চাননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

পাখি নিয়ে অনেক গান হয়েছে, কবিতা হয়েছে, প্রবন্ধের অভাব নেই। পাখিকে তুলনা করা হয়েছে জীবনের সঙ্গে। ‘আমার মন পাখিটা যায়রে উড়ে যায়’ অথবা ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’র মত কতশত গানে কতশত বাউলের একতারা যে কেঁপেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

নিজের ছেলে মেয়েকে ডাকা হয়েছে ময়না, টিয়াসহ হাজারো পাখির নামে। আমাদের জীবনানন্দ থেকে পশ্চিমের জন কিটস- পাখিকে করেছেন কবিতার উপজীব্য। তাই পাখির সঙ্গে মানুষের সখ্য কেমন সেটা বলা বাহুল্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। একদম হাতেকলমে শেখার মতো নিজ চোখে দেখা। নিজ মর্মে বোঝা। এক বা দুটি পাখি নয়, হাজারে হাজারে পাখি কিলবিল করছে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ লেকে, গাছে। তাদের কিচিরমিচিরে ক্যাম্পাসবাসী পড়েছে মধুর যন্ত্রণায়।

বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাবি ক্যাম্পাস অন্যতম। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর অতিথি পাখির আগমন ঘটে এ ক্যাম্পাসে। এবারও ঘটেছে। সাধারণত অক্টোবরের শেষ দিকে সুদূর সাইবেরিযা, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, হিমালয়ের পাদদেশ, চীনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে শুরু করে অতিথি পাখিরা। মার্চের শেষদিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লেকে হাজার হাজার লাল, নীল শাপলার মাঝে পাখিদের ওড়াউড়িতে এক স্বর্গীয় দৃশ্যে চোখের সামনে বাস্তব হয়ে ধরা দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে কমপক্ষে ৮০ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। ১৯৮৮ সালে ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে প্রথম অতিথি পাখি আসে। প্রথম বছর ৩ প্রজাতির ৮৫০টি পাখি আসে। ১৯৯০ সালে অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে সবচেয়ে বেশি। সে সময় পিন্টেল, নাকতা, কোবার্ড, গারাগানিসহ মোট দশ প্রজাতির ১০ হাজার ৫০০ পাখির সমাগম ঘটে।

ক্যাম্পাসে দু’ধরনের পাখি দেখা যায়। এক ধরনের পাখি জলাশয়ে এবং অন্য ধরনের পাখি গাছের ডালে অবস্থান নেয়। এদের অধিকাংশই হাঁস জাতীয়। সচরাচর যেসব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-জলময়ূর, ডুবুরি, খোঁপাডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, শামুকভাঙা বা শামুক খোলা, কালোকুট, কাদাখোঁচা বা চ্যাগা, জলের কাদাখোঁচা, ছোট জিরিয়া, বাটান, চা পাখি, সবুজ পা, লাল পা পিও, লাল লতিফা বা হটটিটি, গঙ্গা কবুতর, কালমাখা গঙ্গা কবুতর লেঞ্জা, কুন্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, নীলশির, গ্যাডওয়াল, লালশির, পাতারি হাঁস, বামনীয়া, ভুটি হাঁস, কালো হাঁস, চখাচখি, বালি হাঁস, বড় সরালি, ছোট সরালি, রাজহাঁস, কানি বক, ধূসর বক, গো-বক, সাদা বক, ছোট বক, মাঝলা বক, কালিম বা কায়েন প্রভৃতি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বড় প্রায় ১৩টি লেকের মধ্যে পরিবহন চত্বর, রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুল সংলগ্ন লেকেই অতিথি পাখির সমাগম ঘটে সবচেয়ে বেশি। এসব লেককে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতিদিন হাজারো পাখিপ্রেমী পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে। মুগ্ধ হয়ে পাখি দেখে তারা। ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, কেউই না তৃপ্ত হয়ে বাসায় ফেরে না।

এ বিষয়ে কথা হয় বার বছর বয়সের নাঈমার সাথে। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাখি দেখতে এসেছে সে। ‘এখানে এত্তো পাখি। অনেক সুন্দর। আমি আবার আসবো’, বলে সে।

পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিবছর ক্যাম্পাসে পাখিমেলার আয়োজন করে। এবারো হবে। আগামী ৬ জানুয়ারি। দর্শনার্থীদের পদভারে সেদিন মুখরিত হবে জাবি ক্যাম্পাস।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরকে জানান, অতিথিপাখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশীর্বাদ। এই আশীর্বাদকে ধরে রাখতে যা করণীয় আমরা তা করবো।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/এফএস/এপি/এনআই/জানুয়ারি ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর