thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বাংলা একাডেমিতে শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ উদযাপন

২০১৭ জানুয়ারি ০৫ ১৪:৩৪:১৬
বাংলা একাডেমিতে শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ উদযাপন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি ও শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষ উদযাপন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে প্রবন্ধপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠান হয়। শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ানের কণ্ঠে আগুনের পরশমণি ছোঁওয়াও প্রাণে সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। শওকত ওসমানের জীবন ও বিশ্ব-পাঠশালার ছাত্র শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্পাদিত শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘শওকত ওসমান সাধারণ মানুষের পক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। জন্মশতবর্ষে তাকে স্মরণ তাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’

প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক শান্তনু কায়সার বলেন, ‘শওকত ওসমান জীবন তথা বিশ্ব-পাঠশালার ছাত্র হিসেবেই শিক্ষা লাভ করেছেন। নিজে শিক্ষক থেকে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি বিশ্ব পাঠশালার ছাত্র হিসেবে বুঝেছেন।’

তিনি বলেন, ‘শওকত ওসমান ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন। আজ তার জন্মশতবর্ষ পালিত হচ্ছে। মৃত্যুর আঠারো বছর পরে কোনো একটা উপলক্ষ্যে তাকে স্মরণ করছি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে আক্ষরিক ও মর্মগত উভয় অর্থেই তিনি আছেন। তার জীবন ও সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আমরা এ কথা শুনতে পাচ্ছি। জীবনের শিক্ষাই তাকে সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে, শতবর্ষ পেরিয়েও শওকত ওসমান তার উত্তরসূরিদের মধ্যে মর্মরিত হয়ে চলেছেন।’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘শওকত ওসমান ছিলেন আগাগোড়া একজন বিদ্রোহী-বিপ্লবী। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদস্বরূপ দেশ থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়ে তিনি নিজের অন্তর্গত বিদ্রোহী সত্ত্বার যেমন পরিচয় রেখেছেন তেমনি ক্রীতদাসের হাসিসহ নানা রচনায় ব্যঙ্গবিদ্রুপের মাধ্যমে মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদী অবস্থানই জানান দিয়েছেন।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘শওকত ওসমানের কাজের ক্ষেত্র ছিল কথাসাহিত্য কিন্তু তার সার্বক্ষণিক ধ্যানজ্ঞান ছিল রাজনীতি, সমাজনীতি, মানুষের মঙ্গলবোধ। প্রবলভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী এই মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন আন্তর্জাতিকতাবাদীও। তার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার শোষিত মানুষের মুক্তি।’

সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ বলেন, ‘শওকত ওসমান দেশবিভাগের পর ঢাকায় এসে অসাম্প্রদায়িক, উদার মানবিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় যুক্ত হন। ষাটের দশকে সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণবোধকে তার সাহিত্যিক উপাদান হিসেবে কাজে লাগিয়ে বস্তুত মানবমঙ্গলের সাধনা করেছেন।’

সভাপতির ভাষণে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘শওকত ওসমান বাংলার গ্রামীণ জীবনকে নিপুণ শিল্পীর দক্ষতায় তার সমগ্র সাহিত্যকর্মকে উপস্থাপন করেছেন। গভীর জীবনবোধ, ইতিহাস চেতনা ও বাস্তবতার সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ তার কথাসাহিত্যকে বিশিষ্টতা দান করেছে। তার ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক রচনায় কৌতুকবোধ ও রসিকতার আড়ালে অন্যায়কারী ও শোষকের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার বাণী উচ্চারিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জন্মশতবর্ষ পেরিয়েও শওকত ওসমানের জননী ও ক্রীতদাসের হাসির মতো সাহিত্যকর্ম চিরকালের অপরাজেয় সাধারণ মানুষের অনন্য আখ্যান হিসেবে আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শওকত ওসমানের গল্প অবলম্বনে সৈয়দ শামসুল হক নির্মিত চলচ্চিত্র আব্বাস প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শিল্পসমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মনিরুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি মাহবুব সাদিক, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, কবি মোহাম্মদ সাদিক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচলক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এফএস/জানুয়ারি ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর