স্বামীর সংসারের পরিবর্তে ভাগ্যবদলে সৌদি যাচ্ছেন রাশিদা

কাওসার আজম, শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে : ছোটকালেই বাবা-মা মারা গেছে রাশিদা বেগমের (২৫)। বড় হয়েছেন খালার বাড়িতে। কিন্তু তিনিও এখন বয়োবৃদ্ধ। রাশিদার বিয়ের বয়স হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু স্বামী সংসারের ভাগ্যও জোটেনি। ফলে স্বামীর সংসারের পরিবর্তে ভাগ্য বদলে তাকে যেতে হচ্ছে দূরপ্রবাস সৌদি আরবে।

খুলনার খালিশপুর উপজেলার ঝুড়াগেইট এলাকার মৃত কাঞ্চল হাওলাদারের কন্যা রাশিদার সঙ্গে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কথা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পাশের অপেক্ষমাণ সিটে বসে ছিলেন তিনি। কোথায় যাচ্ছেন? জিজ্ঞেস করতেই ছোট করে উত্তর, ‘সৌদিতে’। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। কিন্তু কোথায় কোন কোম্পানিতে কাজ করবেন কিছুই জানেন না তিনি। এমনকি ঢাকায় কোন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন তা-ও বলতে পারেননি। রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃপক্ষ নাকি তাকে বলেছে মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাবে। অথচ গৃহকর্মী হিসেবে তার এ পরিমাণ বেতন পাওয়ার কথা নয়।

কথার প্রেক্ষিতে কথা বাড়ে রাশিদার সঙ্গে। ভেতরে তার ব্যাগ ব্যাগেজ চলে গেছে। হাতে পাসপোর্ট আর বাংলাদেশ বিমানের টিকেট ছাড়া কিছুই নেই। গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেসব নারী যাচ্ছেন তাদের বিএমইটির কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কিন্তু রাশিদা তা-ও নেননি। শুধু বলেন, ‘ট্রেনিং নেইনি। তবে প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দিয়েছে (রিক্রটিং এজেন্সি)।’ তবে সেই সার্টিফিকেটও তার কাছে নেই।

অভাগা এই নারীর সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। যে বয়সে স্বামীর সংসার করার কথা সেই বয়সে কেন বিদেশে যাচ্ছেন, জানতে চাইলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘দুঃখের কপাল। বাপ-মা মইর‌্যা গেছে, ছোট থাকতেই। খালার বাড়িতে বড় হয়েছি। তিনিও এখন বুড়া হয়ে গেছেন। আমার জন্য তিনি আরকত করবেন। তাই যাচ্ছি। দোয়া করবেন।’ তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভেতর থেকে তাকে কেউ ডাক নিয়ে নিয়ে গেলেন।চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন ইমিগ্রেশনের দিকে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এমকে/জানুয়ারি ০৬, ২০১৭)