thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

রাবেয়া বসরীর (রহ.) জানা অজানা কিছু কথা

২০১৭ জানুয়ারি ০৮ ১৫:১০:৫৮
রাবেয়া বসরীর (রহ.) জানা অজানা কিছু কথা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মহান প্রভু আল্লাহ্ তা’য়ালা পৃথিবীতে বহু নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তবে যত নবী-রাসূল এই দুনিয়াতে এসেছে, তারা সবাই ছিলেন পুরুষ। এই মর্যাদা আল্লাহ তা’য়ালা নারীদের দেননি। তাই বলে নারীদের অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই। নারীদের মধ্য হতেও অনেকেই জগৎবিখ্যাত ওলী হয়েছেন। তেমনি এক মহিয়সী নারী হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)।

ইরাকের বসরা নগরীতে এক দরিদ্রপল্লীতে জন্ম হয়েছিল এই ধর্মভীরু হযরত রাবেয়া বসরীর (রহ.)। হযরত রাবেয়া বসরীর জন্ম তারিখ নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। তিনি ৯৫ হিজরী, মতান্তরে ৯৯ হিজরির ৭১৯ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের বসরা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইসমাঈল এবং মাতার নাম মায়ফুল।

তারা দরিদ্র ছিলেন বটে তবে পরম ধার্মিক ও আল্লাহভক্ত ছিলেন। রাবেয়া বসরী ছিলেন ভদ্র, নম্র ও সংযমী। সেই সঙ্গে প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারিণী ছিলেন তিনি। সব সময় গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। রাগ, হিংসা, অহঙ্কার তার চরিত্রকে কখনো কলুষিত করতে পারেনি। মোট কথা আল্লাহর একজন প্রকৃত ওলী হওয়ার জন্য যা যা গুণাবলী থাকা প্রয়োজন সকল গুণের অধিকারিণী ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)।

হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.) সকল বিপদ-আপদকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতেন। আর কেনই বা মনে করবেন না। কারণ এ জগতে যারাই আল্লাহর বন্ধু হতে চেয়েছেন তাদের ঈমানের কঠিন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। “তোমরা কি ধারণা করেছ এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ্ তা’য়ালা অবগত আছে তোমাদের মাঝে কে জিহাদ করছে আর কে ধৈর্য ধারণ করছে” [সূরা আলে ইমরান: ১৪২]।

এক সময় রাবেয়া বসরী দাসত্ব জীবনও অতিবাহিত করেছেন। তার মনিব ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক। বিরামহীনভাবে তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। মনিবের নির্ধারিত কাজ শেষ করার পর মহান রবের ইবাদতে মশগুল হয়ে যেতেন তিনি। মূলত রাবেয়া বসরীর জীবনের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ করা।

জানা যায় এক ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে রাবেয়া যখন আরাধনায় লিপ্ত ছিলেন, তখন তার মাথার ওপর কোনো শিকল দিয়ে বাঁধা ছাড়াই একটি ঝাড়বাতি জ্বলছিল। যার আলো বিচ্ছুতি হয়ে ঘরের চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। এ অলৌকিক ঘটনা দেখে মনিবের পাষাণ হৃদয় গলে গেল। মনিব মনে মনে বলল, হায়! এ আমি কাকে আমার ঘরে দাসী বানিয়ে রেখেছি? সে তো সামান্য নারী হতে পারে না। সে নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয়জন।এ ঘটনার

পরদিন সকালে মনিব রাবেয়া বসরীকে দাসত্ব জীবন থেকে মুক্ত করলেন।

হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.) খুব অল্প বয়সেই মা-বাবার কাছ থেকে কুরআন, হাদিস, ফিকহ্ শাস্ত্রের ইলম হাসিল করেছিলেন। শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে তার কখনো কোনো সঙ্কোচ ছিল না। মা-বাবাকে খুব অল্প বয়সেই তিনি হারান। জীবনে চলার পথে বহু কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তারপরও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কখনো পিছপা হননি। সে সময়ের একজন মহান সাধক ছিলেন ইমাম হাসান বসরী (রহ.)। রাবেয়া তার কাছে গিয়ে ইলমে তাসাউফ ও মারেফাতের সুক্ষ্মজ্ঞান অর্জন করতেন।

পরবর্তী জীবনে রাবেয়া একজন কবি হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। রাবেয়া বসরীর (রহ.) জীবন থেকে অনেক কারামত প্রকাশিত হয়েছে। এ রকম অলৌকিক কর্মকাণ্ডের সংখ্যাও কম নয়। তার মধ্য থেকে একটি কারামত হচ্ছে একদিন রাবেয়া ফোরাত নদীর তীরে বসে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। এমনি সময় ততকালীন শ্রেষ্ঠ সাধক হযরত হাসান বসরী (রহ.) সেখানে হাজির হলেন। তিনি তার জায়নামাজখানি পানিতে বিছিয়ে দিলেন এবং রাবেয়াকে ডেকে বললেন, এসো রাবেয়া, আমরা দাঁড়িয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করি। (এখানে হাসান বসরীর ইচ্ছে ছিল রাবেয়া তার আসনখানি ডুবে যাওয়া হতে রক্ষা করতে পারে কিনা)।

রাবেয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার জায়নামাজটিকে শূন্যলোকে উড়িয়ে ছিলেন এবং রাবেয়া নিজে উড়ে সেখানে বসে বললেন, জনাব আসুন, যদি পারেন এখানে এসে দু’রাকাত নামাজ আমরা আদায় করি। আল্লাহর নবী-রসূল ওলীদের বহু অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। তবে তারা এসব ক্ষমতা নিয়ে কখনো অহংকার করেননি। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো তা প্রকাশ করেননি। বরং তা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে যেত। এত কামেল হয়েও হযরত রাবেয়াকে অনেক সময়ই ছিন্ন বসনে দেখা যেত।

এই মহীয়সী নারী ১৮৫ হিজরী মোতাবেক ৮০১ খ্রিষ্টাব্দে শেষ নিস্বাস ত্যাগ করেন। তার ইবাদত বান্দেগী এবং ন্যায়নিষ্ঠায় তিনি আজ স্মরণীয় এবং রাবেয়া বসরী আল্লাহর দরবারে একজন সফল নারী।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এইচ/জানুয়ারি ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর