thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস মঙ্গলবার

সর্ববৃহৎ জনসভার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের

২০১৭ জানুয়ারি ০৯ ১৯:৪১:২৪
সর্ববৃহৎ জনসভার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি)। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪০ মিনিটে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনটি উদযাপনের জন্য এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

দিবসটি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদানে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আযোজিত এ সভা মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দিবসটি ঘিরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৪তম বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার। ১৯৭২ সালের এ দিনটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের স্বাধীন স্বদেশে ফিরে আসেন। দিনটি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ সংগঠন ও দেশের রাজনীতি নিরপেক্ষ মানুষ। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি’ ব্যাপক আয়োজনে পালনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। দিবসের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ বিভিন্ন মাইলফলক সৃষ্টিকারী ভাষণের স্মরণীয় স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করা।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে জনসভাস্থল ঘুরে দেখা যায়, মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মাঠের কাজও আংশিক সম্পূর্ণ করা হয়েছে। মাইক লাগানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সোমবার বিকেলে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই মাঠের পুরো কাজ সম্পূর্ণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামীকালের (মঙ্গলবার) লাখ লাখ জনতার স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ঘটবে। এটি ঐতিহাসিক জনসভা হবে। লাখ লাখ মানুষের সমাগমে জনসমুদ্র ঘটবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলের পর নেত্রীর এটা প্রথম জনসভা। তিনি নীতি নির্ধারণী, দিকনির্দেশামূলক বক্তব্য রাখবেন। উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাওয়ার বাধা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিরা। তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানাবেন। এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে কথা বলেবেন।’

জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, দলের অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতীম সকল সংগঠন ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ১০ জানুয়ারিকে ঘিরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড এবং পাড়া-মহল্লার নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগও জনসভা সফল করতে দফায় দফায় বর্ধিত সভা-বৈঠক করেছে।

গত বছর ২২/২৩ অক্টোবর ব্যাপক জাঁক-জমকের মধ্য দিয়ে দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর এটাই প্রথম জনসভা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ফলে এ জনসভাকে দলটির নেতাকর্মীরা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটিকে এবার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক আয়োজনে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই মঙ্গলবারের এ জনসভাকে সফল ও ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো ধারাবাহিক মতবিনিময় ও প্রস্তুতি সভা করেছে। রাজধানী ঢাকার বাইরের নিকটতম ৫টি জেলার নেতাকর্মীদের জনসভায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই জেলাগুলোর নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় শেষ হয়েছে।

একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষকে জনসভায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পথসভা করেছেন, লিফলেট বিতরণ করেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিবস। এই দিবসের সঙ্গে আমাদের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মাটিতে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল। দেশের লাখ লাখ লোক সেদিন তাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে বরণ করে নিয়েছিল। তাই এ দিবসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আনন্দ জড়িত রয়েছে।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা ৪৫ বছর পর এই দিবসটি দেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে পালন করবে। এবারের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেবে।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এ দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় এ দিনে আমি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে আটকে রাখে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ৯ মাস ১৪ দিন কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রেরণার উৎস।’

রাষ্ট্রপতি আরো বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের পরিণত হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ্। এ ছাড়া উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেই- এটাই হোক এবারের বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সকলের অঙ্গীকার।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ‘বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এ দিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়। বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলকারীরা গণতন্ত্র হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। রুদ্ধ করে দেয় প্রগতি ও উন্নয়নের ধারা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জীবনমানের ইতিবাচক পরিবর্তনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করেছি। নির্বাচিত ব্যক্তিরাই দেশ পরিচালনা করবে- এ পদ্ধতি নিশ্চিত করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল । ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারবাহিকতা রক্ষা করি-এমন আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি- বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’। যেখানে ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবে না। সকলের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার থাকবে উন্মুক্ত। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এ ধারাকে কোনো অপশক্তি যাতে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/জেডটি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর