thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

মহাজোট সরকারের তিন বছর

উন্নয়নের চাকায় ভর করে এগোচ্ছে দেশ

২০১৭ জানুয়ারি ১১ ২২:৩১:১৩
উন্নয়নের চাকায় ভর করে এগোচ্ছে দেশ

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তিনবছর পার করল। একটানা আট বছর ক্ষমতায় থাকাও পূর্ণ হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর দেশ শাসন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনগুলোর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দমন করে এখন অনেক আওয়ামী লীগ সরকার রয়েছে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে। বর্তমান সরকারের সময়েই সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত মামলা জয়, বিশাল সমুদ্র অঞ্চল এদেশ প্রাপ্তি, অতিরিক্ত বিদুৎ উৎপাদন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম, মেট্রোরেলের কার্যক্রম শুরু, আলোচিত জঙ্গিবাদ দমন ইত্যাদি বহুবিধ প্রাপ্তি রয়েছে এ সরকারের আমলে। এক কথায় উন্নয়নের রোল মডেল। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দেশ-বিদেশের কারো কারো জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘বিতর্ক’ নিয়ে আওয়ামী লীগের বছর শুরু হলেও নাসিক নির্বাচনে ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট উপহার দেওয়া ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বছরের শেষ ‘চমক’।

প্রথম বছর

বর্তমান সরকারের প্রথম বছরটি ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। তবে যে নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ দেশের সম্ভাব্য সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি ছিল।

দেশীয়-আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের গতি অব্যাহত রাখায় নতুন সরকার গঠনের প্রথম বছরেই প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। নির্বাচন প্রশ্নে শুরুতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে সরকারকে কিছুটা বেগ পেতে হলেও প্রথম বছরেই সরকার তা কাটিয়ে ওঠে। বিশেষ করে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপারসন পদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) নির্বাচনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতি হওয়ার বিষয়টি সরকারের জন্য ইতিবাচক ছিল।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায়কে সরকারের প্রথম বছরের অন্যতম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। প্রখম বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে ছিল সাফল্যের মধ্যে ছিল প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থির রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে বিনিয়োগে স্থবিরতা ছিল প্রথম বছরে।

প্রথম বছরে সরকার সবচেয়ে সমালোচিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনা জনমনে ব্যাপক আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াত জোটকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়া এবং তাদের নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা দায়ের এবং গণহারে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করার বিষয়টি সমালোচিত হয়। প্রথম বছর উপজেলা নির্বাচন নিয়েও বেশ বিতর্কের মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন দল। প্রথম দুই দফা নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও তৃতীয়-চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের কেন্দ্র দখল, কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাত ভোটকে করে তোলে প্রশ্নবিদ্ধ।

দ্বিতীয় বছর

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে শুরু করলেও সার্বিকভাবে দ্বিতীয় বছরটি ছিল সরকারের সাফল্য ও অর্জনের। বছর শুরুর রাজনৈতিক উত্তেজনা, সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কোন কিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলার পথে বাধা হতে পারে নি। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ভূমিকায় নানা বাধা উপেক্ষা করে সরকার বেশকিছু লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য পায়।

সরকারের একবছর পূর্ণ হওয়াকে কেন্দ্র করে টানা ৯২ দিন হরতাল-অবরোধ চালায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ২০দলীয় জোটের এ কর্মসূচি নাশকতা ও সহিংসতায় রূপ নেয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নাশকতা নিয়ে সরকার কঠিন চাপের মধ্যে পড়ে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিরোধীদলের এ আন্দোলন কঠোরভাবেই দমন করে সরকার। সকল বাধা-বিপত্তি হটিয়ে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বছরের অন্যতম সাফল্য হল দেশি-বিদেশি চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রাখা। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা দৃঢ়তার ফলে নানা চড়াই-উৎরাই পার করে তিন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করে সরকার।

দ্বিতীয় বছরে বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য হলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত চুক্তি। ৬৮ বছরের বঞ্চনা আর ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবে রূপ পায় ৭ মে ভারতের পার্লামেন্টে বিল পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে। সীমান্ত চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১ ছিটমহল বিনিময় করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সীমান্তে ‘ছিটমহল’ শব্দটির আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় ধরনের কূটনৈতিক সফলতাও এটি।

এ সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হলো পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু। বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর মূল পাইলিংয়ের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর অধরা কোনো বিষয় নয়, বরং বাস্তব। এটি নিয়ে নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক সহায়তা প্রত্যাহার করলেও দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে সরকার। তা ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও যাত্রা শুরু হয় এ বছর। সরকারের দ্বিতীয় বছরেও অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ ছয়-সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করে। ধারাবাহিক এ প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পান। এ ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পান প্রধানমন্ত্রী। এ দুটি পুরস্কারকে সরকারের সাফল্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

তবে ওই বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা উন্নয়নের নামে শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিয়েছে। অভিযোগ ওঠে পিএসসি ও জেএসসি নামের পরীক্ষা কেড়ে নিয়েছে কোমলমতি শিশুদের শৈশব। এর মাধ্যমে সরকার কোচিং ব্যবসা আর গাইড ব্যবসাকে পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে সমালোচনা হয়। পাবলিক পরীক্ষার নামে এ সব শিশুকে কোথাও কোথাও পরীক্ষায় নকল করার প্রথম পাঠ দেওয়া হচ্ছে। জীবনের শুরুতে এসব শিশু শিক্ষার্থীর সুস্থ বিকাশের পথ বন্ধ করে দেওয়ার দায় সরকার এড়াতে পারে না। এ ছাড়াও প্রথম দু’বছরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের সংস্কৃতি শিক্ষার পরিবেশ অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে। দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ করতে গিয়ে মেধাবীরা ছিটকে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সরকারের দ্বিতীয় বছরে ছাত্রলীগের বেপরোয়া প্রকট হয়ে ওঠে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও কলেজগুলোতে সারা বছরই ছিল অস্থিরতা। বছর জুড়েই কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। শুধু নিজেদের মধ্যেই নয়, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সাথেও মাঝে মধ্যেই ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এর ফলে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক কলেজ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অর্ধশতাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫জন। বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী। শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের আরেক দিক হলো, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারা। গত বছর ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। বছর শেষে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরেও সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। জনগণের ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারাটা সরকারের সকল সাফল্যের ওপর কালো একটি রেখা এঁকে দেয়।

তৃতীয় বছর

ইউপিনির্বাচন : বছরের শুরুতেই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয় আওয়ামী লীগ। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে মোট ছয় ধাপে দেশের ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগে নিজ দলের প্রার্থীদের বিদ্রোহ দমন করতেও ব্যর্থ হয়। অভিযোগ আছে- নজিরবিহীন প্রাণহানি, ভোট ডাকাতি, ব্যাপক সংঘর্ষ ও রক্তাক্ত ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন দলের লোক নির্বাচিত হয়। এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।

ছয় ধাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ২৬৭২টি ইউপিতে জয় পায়। বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ সমর্থিতরা পায় ৩৭টিতে এবং জাতীয় পার্টি ৫৭টি। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৮৮০টি ইউপিতে জয় পায়। তাদের বেশিভাগই আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

নাসিক নির্বাচন : বছর শেষে নাসিক নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়ে আগের নির্বাচনগুলোর বিতর্কের অবসান ঘটায়। গত ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ নেই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেন। নাসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৭০০ ভোট। ৭৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

জঙ্গিবাদ দমন : ২০১৬ সালে জঙ্গিবাদ কঠোরভাবে দমন করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে বাংলাদেশ। ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা চালানো হয়। ওই রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ অর্ধশত নারী-পুরুষকে জিম্মি করে জঙ্গিরা। এ হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। এ হামলায় দেশি-বিদেশি চাপ বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের দিন (৭ জুলাই) সকালে শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠের অদূরেই জঙ্গি হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক জঙ্গি ও একজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন। জঙ্গিবাদ বিরোধী সভা-সমাবেশ ও মানবন্ধন করে সোচ্চার থাকে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানববন্ধন গড়ে তুলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। পরে পুলিশের নবনির্মিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) ধারাবাহিক সাফল্যে জঙ্গিবাদ এখন নিয়ন্ত্রণে।

জাতীয় সম্মেলন : আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ২২-২৩ অক্টোবর। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে সক্ষম হয়। ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আসে। দলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ২৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই নতুন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে নাটকও কম হয়নি। বেশ কয়েকবার ঘোষণা করা হয় সম্মেলনের তারিখ। প্রথমে ২৮ মার্চ দলটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। পরে তা বাতিল করে ১০-১১ জুলাই করা হয়েছিল।

এর পর সম্পাদকের পদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। প্রথমে এ পদে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল দুইবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের। পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজনের নামও আলোচনায় আসে। শুরু হয় চমকের অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত সব নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

বিব্রত ও ভোগান্তি : আওয়ামী লীগসহ তাদের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বছর জুড়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে দলকে বিব্রত ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এক ছাত্রলীগ নেতা। হামলাকারী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অর্থনীতি শেষ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দাবি করে বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নন। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে খাদিজা বর্তমানের সুস্থ হয়ে উঠছেন।

দলীয় কোন্দলে নাসিরনগরের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হকের দ্বন্দ্বও এ ঘটনার পেছনে বড় উসকানি বলে আলোচনায় আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটে জড়িত অভিযোগে ২৭ ডিসেম্বর শেখ আবদুল আহাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান ওরফে আঁখিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

যুদ্ধাপরাধী রায় বাস্তবায়ন : এ বছরে নির্বাচনী ইশতেহারে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রায় বাস্তবায়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অব্যাহত রাখে আওয়ামী লীগ। এ বছরও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে কোনো আপোস করেনি ক্ষমতাসীন দলটি। সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণের পর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার দায়ে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গত ১০ মে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, ২০১৫ সালে ২২ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, একই বছর ১৫ এপ্রিল জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহুল প্রতীক্ষিত বিচার শুরু করে।

জেলা পরিষদ নির্বাচন : চলতি বছর ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচন বিএনপি ও জাতীয় পার্টি বর্জন করে। এ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ইতোমধ্যে ২১টি জেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি : চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) শেষে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতে, অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হবেই হবে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সাত অর্থবছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো অবস্থা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। এর আগের টানা পাঁচটি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

অথচ ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল মাইনাস ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ থেকে। ১৯৭৩ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের বছর ১৯৭৪ সালে প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

মাথাপিছু আয় : সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। ১৯৭১ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫০ থেকে ৭০ ডলার। বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সময় ২০০৯ সালে ছিল ৭৫৯ ডলার। বর্তমান সরকারের এ আমলে মাথাপিছু এ আয় বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। ২০১০ সালে ৮৪৩ ডলার, ২০১১ সালে ৯২৮ ডলার, ২০১২ সালে ৯৫৫ ডলার, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৫৪ ডলার, ২০১৪ সালে ১ হাজার ১৮৪ ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৩১৬ ডলার মাথাপিছু আয় হয়।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ কোটি ইউএস ডলার। সত্তরের দশকে দেশে রিজার্ভ ছিল ১০০ কোটি ডলারেরও কম।

মূল্যস্ফীতি : স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে ১২ মাসের গড় ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি : জিডিপির অনুপাতে বর্তমানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর সরকারি খাতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ১৯৭২ সালে মাত্র ৫৭৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে। স্বাধীনতার ৪৪ বছরে বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৮শ’ গুণ। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সম্ভাবনাময় ১৮ দেশের তালিকার মধ্যে অন্যতম এখন বাংলাদেশ।

রাজস্ব খাত : স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয় ১৯৭২-৭৩ সালে। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আয়কর, শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) খাতে ৯ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থবছর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়।

রফতানি আয় : স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ ইউএস ডলার। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রফতানি খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার ইউএস ডলার। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। আগের বছরের তুলনায় রফতানি আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৭০ লাখ ইউএস ডলার।

রেমিটেন্স : বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ৫২০ কোটি ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স’র পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। সে সময় মাত্র ৬ হাজার ৮৭ জন শ্রমিক বিদেশে গমন করে। রেসিটেন্সের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। ওই সময় মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি হয়। ১৯৭৭ সালে ১৫ হাজার ৭২৫ জন শ্রমিক প্রবাসে গমন করে এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ছিল ১২৫ কোটি টাকা।

এডিপি : ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার ছিল ৩১৮ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূল এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন থেকে জোগান দেওয়া হবে ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমহ্রাসমান হলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক সাহায্য হতে নির্বাহ করা হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপি’র আকার ছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের মোট পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি আকারের ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এডিপি’র আকার ছিল এক লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের মোট পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি আকারের ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

দারিদ্র্য হ্রাস : ১৯৭২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ ভাগ। চার দশকের ব্যবধানে তা কমে ১৮ দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে চরম দারিদ্র্যের হার ৫০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।

দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। দলের একটি সফল কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা ঠিক রাজনৈতিক মাঠে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করতে হয়নি। ভোটের মাঠেও শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের অংশ থাকলেও নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এ ছাড়া জঙ্গি দমনের ব্যাপার নেতাকর্মীদের কঠোর অবস্থান ছিল। যার ফলে বিএনপি এটা ইস্যু বানাতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি বছরে আমাদের একটি সফল কাউন্সিল হয়েছে। নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলে নতুন জেনারেল সেক্রেটারি এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের অর্জন।

আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি অতিক্রম করে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগে একটি শক্তিশালী কমিটি হয়েছে। এই কমিটি দলকে নিয়ে অটোমেটিক এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি দ্য রিপোর্টকে জানান, এ বছরই আমাদের দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কাউন্সিলই নতুন করে প্রত্যয় ঘোষণার সুযোগ দেয়। নিজেদের যাচাই-বাছাই, দেশকে নিয়ে চিন্তা করে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আসে। নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। দলকে গোছানোর সুযোগ দেয়।

তিনি আরও জানান, যেহেতু আগামী দুই বছর পর জাতীয় নির্বাচন, এ জন্য কাউন্সিলটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। আমাদের নতুন নেতৃত্ব দলকে আরও গতিশীল করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তার নেতৃত্বেই দেশে বড় বড় সাফল্য এসেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপি/এনআই/জানুয়ারি ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর