thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

ফয়েজ আহমদ

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২০ ০০:৩৪:১৩
ফয়েজ আহমদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহমদ ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।

গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ও আরজুদা বানু দম্পতির সন্তান ফয়েজ আহমদ বিক্রমপুরের বাসাইলভোগ গ্রামে ১৯২৮ সালের ২ মে জন্মগ্রহণ করেন।

ছোটবেলায় তার লেখালেখির শুরু। ১৬ বছর বয়সে সাহিত্যের টানে কলকাতার সওগাত অফিসে হাজির হন। সেখানে পরিচয় হয় বিখ্যাত কবি আহসান হাবীব ও হাবীবুর রহমানের সঙ্গে। তারা তাকে লেখার জন্য উৎসাহিত করেন। দেশ বিভাগের পর 'সওগাত' পত্রিকা ঢাকায় চলে আসে। 'সওগাত' অফিসেই সম্পাদক নাসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মুক্তবুদ্ধির ধারক হিসেবে পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের জন্ম হয়। ফয়েজ আহমদ এই সংসদের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সময় সঙ্গ পান ঢাকার প্রধান লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের।

১৯৪৮ সালে তার সাংবাদিক জীবনের শুরু। তিনি ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ ও পরবর্তী সময়ে পূর্বদেশে চীফ রিপোর্টার ছিলেন। সাপ্তাহিক ইনসাফ ও ইনসান পত্রিকায় রিপোর্টিং করেছেন। ১৯৫০ সালে 'হুল্লোড়' এবং ১৯৭১ সালে 'স্বরাজ' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে পিকিং রেডিওতে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্যে তিনবছর মেয়াদে নিযুক্ত হন। ঢাকা রেডিওতে ১৯৫২-৫৪ সালে 'সবুজ মেলা' নামের ছোটদের বিভাগটি পরিচালনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে দৈনিক বঙ্গবার্তার প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

দেশ বিভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে যোগ দেন। সরকারবিরোধী ভূমিকার কারণে আইয়ূব খানের আমলে ১৯৫৯ সাল থেকে ৪ বছর কারাবন্দি ছিলেন। হাইকোর্ট গঠিত বোর্ডের মাধ্যমে বিচারের পর মুক্তি পান। কিন্তু জেলগেটেই এক বছরের জন্য তার ঢাকা শহরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় এবং রমনা থানা এলাকায় নজরবন্দি করে রাখা হয়। এভাবেই তার জীবনের পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়। একইভাবে বাংলাদেশেও এরশাদের আমলে আরেকবার কারাগারে গিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে তিনবার দীর্ঘ সময়ের জন্য আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত ভিয়েনা বিশ্ব যুব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিনা পাসপোর্টে ‘করিম শাহানী’ ছদ্মনাম নিয়ে ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যেমন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছিল তেমনি ১৯৮৮ সালের বন্যা, ১৯৯০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৮০'র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর সিণ্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমির কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। পরে সামরিক শাসনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে এই কমিটি গঠিত গণআদালতের ১১জন বিচারকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। গণআদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় তিনি তাদের একজন। এই মামলার আসামী হিসেবে পাঁচ বছর জামিনে ছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার প্রাচীন ও সুবৃহৎ আর্ট গ্যালারি 'শিল্পাঙ্গণ'। তিনি প্রগতিশীল পাঠাগার 'সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভ' এর প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনাবহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে আশ্রয় নেন। ভোর রাতে শত্রুবাহিনী সেখানে গোলাবর্ষণ করে। এতে তিনি বাঁ ঊরুতে আঘাত পান। ২৭ মার্চ কারফিউ ওঠার পর চিকিৎসার জন্য বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা থেকে তিনি আগরতলা হয়ে কলকাতায় যান। কেবিনেটের অনুরোধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন এবং সেখানে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ওপর ‘পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে’ যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত লিখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলের উপর প্রতিবেদনও তৈরি করেছেন।

তিনি প্রধানত শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় একশ। বইগুলোর মধ্যে 'মধ্যরাতের অশ্বারোহী' সবচেয়ে বিখ্যাত। ছড়ার বইয়ের মধ্যে 'হে কিশোর', 'কামরুল হাসানের চিত্রশালায়', 'গুচ্ছ ছড়া', 'রিমঝিম', 'বোঁ বোঁ কাট্টা', 'পুতলি' 'টুং', 'জোনাকী', 'জুড়ি নেই', 'ত্রিয়ং', 'তুলির সাথে লড়াই', 'টিউটিউ', 'একালের ছড়া', 'ছড়ায় ছড়ায় ২০০' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর