thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

হবিগঞ্জে ঐতিহাসিক মাছ মেলা

২০১৭ জানুয়ারি ১৪ ১৯:৪৬:০৯
হবিগঞ্জে ঐতিহাসিক মাছ মেলা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পইল গ্রামে প্রতিবছরের মত এবারও শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দিনব্যাপি ঐতিহাসিক মাছমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ মেলাটি প্রায় শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে। শনিবার সকাল থেকেই মাছমেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।

সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়ীয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর লোক এসেছেন মেলায়। একদিনের জন্য বসলেও মেলা চলবে রবিবার দুপুর পর্যন্ত।

মেলায় বোয়াল, বাগাইড়, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও পুটি, চিংড়ি, কৈ, চাপিলা, চান্দা মাছ রয়েছে। মেলাটির প্রধান আকর্ষণ মাছ হলেও এতে কৃষি উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, ভোগ্যপণ্য, আখ, শিশুদের খেলনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ এ মেলাটিকে তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য বলে জানান।

মেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশ’ বিক্রেতা অংশ নিয়েছেন পইল মাছের মেলায়। বড় বড় মাছের সাথে অনেকে দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট মাছও নিয়ে এসেছেন। বেঁচাকেনাও চলছে ধুমছে। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে মানুষের জটলা। কেউ মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন কেউ বা কিনছেন। আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত।

অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন মেলায়। মাছ ছাড়াও তারা মেলায় ওঠা হরেকরকমের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের খাবার আর শিশুদের জন্য খেলনা আর নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রসাধনীসহ সাজগোজের জিনিস কিনছেন মেলা থেকে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর গ্রামের শুকুর মিয়ার মাছের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রচুর ভিড়। মেলায় সব চেয়ে বড় মাছটি তুলেছেন তিনি। ১০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছটির দাম চাওয়া হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। সবার দৃষ্টি এই মাছটির প্রতি। কেউ বলছেন ৯ হাজার আবার কেউ বলছেন ১০ হাজার।

মাছ বিক্রেতা শুকুর মিয়া জানান, বিভিন্ন নদী ও হাওর থেকে মাছ আসে এখানে। এ মেলাকে উপলক্ষে চলে মাছ ধরারও উৎসব।

তিনি বলেন, আমি প্রতিবছরই এ মেলায় মাছ নিয়ে আসি। বাজারের তুলনায় মেলায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সাথে মাছ কেনেন।

অন্য এক বিক্রেতা নিম্মত আলী জানান, মাছ মেলায় আগের সেই অবস্থা নেই। তবে এ মেলা চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে নতুন প্রজন্মের। আগে সিলেট অঞ্চলের তরতাজা মাছ দিয়ে মেলা বসত। আর এখন বেশিরভাগ মাছ আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। যা বরফ দিয়ে রাখা হয়। কতগুলো বাকশে থাকতে থাকতে বেঁকে গেছে। দেখেই অনুমান করা যায়, এই মাছগুলো দূর থেকে আনা হয়েছে।

মেলায় ঘুরতে আসা আফসার মিয়া জানান, এখানে শুধু মাছ কেনাটাই বড় কথা নয়। বাপ-দাদার মুখে বড় বড় মাছের গল্প শুনেছি কিন্তু দেখা হয়নি। এখানে এসে বড় বড় মাছগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে নিলাম। মাঝেমধ্যে তাদের গল্পগুলো অবিশ্বাস্য মনে হতো। কিন্তু এখানে এসে সেই ভুলও ভেঙে গেল।

পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ জানান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলাকে ঘিরে এক উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর