thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলার ছক হয় মে মাসে

২০১৭ জানুয়ারি ১৪ ২০:৩৬:৩০
গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলার ছক হয় মে মাসে

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ার ঈদগাহের সামনে হামলার ঘটনা দুটি ২০১৬ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়। ওই বছরেরই ৭ জুলাই ঈদেরদিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহসংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ জঙ্গি হামলায় ২ পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন নিহত হয়। জেএমবির নতুন গ্রুপ ‘নব্য জেএমবির’ সদস্যরা এ হামলা দুটি সংঘটিত করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় জানিয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, হামলাগুলোর আগে ওই বছরের মে মাসে ‘বড় কিছু করতে হবে’ বলে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা অন্য নেতাদের জানায়। তখন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ওই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সর্বপ্রথম জানায়, ‘এ ধরনের কাজ করতে পারে এমন ছেলে তার কাছে রয়েছে’। তখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার জন্য দু’জন এবং শোলাকিয়ার ঈদগাহে হামলার জন্য একজন সদস্য দেয়।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী নব্য জেএমবির সদস্যদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। তার অন্য সাংগঠনিক নামগুলো হল- সুভাষ ওরফে শান্ত ওরফে টাইগার ওরফে আদিল ওরফে জাহিদ। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। তার বাবার নাম মাওলানা ওসমান গনি মন্ডল ও মা’র নাম রাহেলা বেগম। তার বয়স ৩২। তিনি ২০০৪-০৫ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আওয়ালের পাচক ছিলেন তিনি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে চালানো জেএমবির বোমা হামলার অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল আওয়ালের বগুড়ার আস্তানায় রান্নাবান্নার কাজ করতো রাজীব। তার কাছ থেকে আব্দুল আওয়ালের বেশকিছু চিঠিও পাওয়া গিয়েছে। নব্য জেএমবিতে যোগদানের আগে সে জেএমবির শূরা সদস্য ডা. নজরুল ইসলামের সহযোগী হিসেবেও জেএমবির কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী খুব ভাল সংগঠক ছিল। সে গুলশান হামলায় অংশগ্রহণকারী মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধন ও মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ এবং শোলাকিয়া হামলায় জড়িত শফিউল ইসলাম ওরফে ডনের গুরু ছিল। মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধন ও মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশকে নব্য জেএমবিতে সে রিক্রুট করে এবং গুলশান হামলার জন্য নির্বাচিত করে ঢাকায় পাঠায়।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী গুলশান হামলার জন্য অপারেশনাল হাউস হিসেবে ব্যবহৃত বসুন্ধরার বাসায় পরিবারসহ এক সপ্তাহ অবস্থান করে অংশগ্রহণকারী দলের সবাইকে সে হামলায় অংশগ্রহণের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করে। পরে গুলশান হামলার ঘটনার পর সে সেখান থেকে পরিবারসহ শেওড়াপাড়ায় চলে যায়। শোলাকিয়া হামলায় জড়িত শফিউল ইসলাম ওরফে ডনকেও সে হামলার জন্য প্রস্তুত করে এবং তামিমের কাছে হস্তান্তর করে। কোন ঘটনা ঘটাতে হলে নব্য জেএমবিতে যে ৩-৪ জনের অনুমতি লাগে রাজীব গান্ধী তাদের মধ্যে অন্যতম।

সিটি ইউনিটের প্রধান বলেন, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল, যেহেতু পুলিশ সম্মুখ কাতারে থেকে জঙ্গিদের কথিত জিহাদ প্রতিহত করছে। তাই পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করতে হবে। পুলিশের উপর হামলা করতে হবে, তাদের হত্যা করে ভয় পাইয়ে দিতে হবে। এ জন্য সে ঢাকায় অবস্থান করতে থাকে। কিন্তু কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানের পর তাদের অনেক সদস্য মারা যায়। তাই সে নিজেই ভয় পেয়ে তখন উত্তরবঙ্গে আত্মগোপনে চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই ঘটনাগুলোর মামলার তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি হবে। কারণ ওই সকল ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া কেউই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জীবিত ধরা পড়েনি। এই প্রথম নব্য জেএমবির একজন অন্যতম পরিকল্পনাকারীকে জীবিত আটক করা সম্ভব হয়েছে। তার কাছ থেকে বেশি তথ্য পাওয়া সম্ভব। নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম হওয়ায় তার কাছেই বেশি তথ্য রয়েছে। এর আগে কল্যাণপুরে অভিযানের সময় রিগান নামে নব্য জেএমবির অন্য একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এস/এপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর